ঘটনাস্থলে ছিলেন সাবেক স্বামী, ব্যাংক কর্মকর্তা খুন !
যমুনা ব্যাংকের কর্মকর্তা আরিফুন্নেসা আরিফাকে ধানমণ্ডিতে নিজ বাসার সামনে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে হাসপাতালে তিনি মারা যান। গতকাল বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার কয়েক মিনিট আগেই আরিফাকে তাঁর সাবেক স্বামী ফখরুল ইসলাম রবিনের সঙ্গে দুটি ব্যাগ হাতে নিয়ে বাসার দিকে ঢুকতে দেখা যায়। ওই ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে এ চিত্র ধরা পড়ে।
ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে রবিনের পালিয়ে যাওয়ার সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ এনটিভি অনলাইনের হাতে এসেছে।
সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যাচ্ছে, ১৬ মার্চ সকাল ৮টা ৪৪ মিনিটে আরিফা শর্ট জামা এবং কালো ঢোলা সালোয়ার পরে মোবাইলে কথা বলছেন। এরপর ৮টা ৪৬ মিনিটে এক ব্যক্তিকে ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে বের হতে দেখা যায়। তার এক মিনিট পর অর্থাৎ ৮টা ৪৭ মিনিটে ওই বাসার গেটের সামনে লুঙ্গি এবং শার্ট পরা অবস্থায় দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিকে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এরপর ঠিক ৮টা ৪৭ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডে আরিফার সাবেক স্বামী রবিনকে প্যান্ট শার্ট ইন করা এবং জুতা পায়ে দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এ সময় রবিনের হাতে ছিল একটি লাল রঙের প্লাস্টিকের র্যাক আর অপর হাতে ছিল একটি সাদা রঙের বস্তা যার ভেতরে বালতির মতো কিছু দেখা যাচ্ছিল। এ সময় আরিফাকে রবিনের ঠিক পেছন পেছন একটি সবুজ রঙের এবং একটি সাদা কালো চেকের ব্যাগ হাতে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। এ সময় লুঙ্গি ও শার্ট পরা অবস্থায় দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছু সময় পর তিনি গেট দিয়ে বাইরে বের হয়ে যান।
এরপর প্রায় চার মিনিট সময় ধরে আর কিছুই নেই। ঠিক সকাল ৮টা ৫১ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে রবিনকে খালি হাতে দ্রুত গেটের দিকে দৌড়ে পালাতে দেখা যায়। এ সময় মেইন গেট বন্ধ ছিল কিন্তু ছোট গেট (কেচি গেট) খোলা ছিল, তার মধ্য দিয়েই রবিন বের হয়ে যায়। রবিন বের হয়ে যাওয়ার পর ঠিক ২৫ সেকেন্ড পর সেই লুঙ্গি ও শার্ট পরা দাড়িওয়ালা ব্যক্তি আর তার সঙ্গে হাফশার্ট ও প্যান্ট পরা একজনকে দ্রুত ভেতরে ঢুকতে দেখা যায়। এরপর আশপাশের মানুষ গিয়ে দেখেন আরিফা গলা কাটা অবস্থায় বাসার নিচতলার সিঁড়িতে পড়ে আছেন। এরপর ৮টা ৫৩ মিনিটে হাফগেঞ্জি ও টাউজার পরা এক ব্যক্তিকে দ্রুত মেইন গেট খুলে একটি রিকশা ডেকে আনতে দেখা গেছে। আর সেই রিকশাতে করেই আরিফাকে ৮টা ৫৭ মিনিটে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
দ্রুত আরিফাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
আরিফার ভাবি খাদিজা ইসলাম জানান, তাঁর ননদ আরিফা যমুনা ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় চাকরি করতেন। বছর চারেক আগে রবিনের সঙ্গে প্রেম করে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো বনিবনা ছিল না। এর জের ধরেই মাস ছয়েক আগে রবিন আরিফাকে তালাক দিয়েছে। তিনি আরো জানান, রবিন ধানমণ্ডির সেন্টাল রোডের বাসার নিচে এসে আরিফাকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে গেছে। এরপর ঢাকা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর আরিফা মারা যান।
এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী আরিফার বড় ভাই আবদুল্লাহ আল আমিন বুলবুল জানান, আরিফা ইডেন কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করার পর প্রথমে সিটি ব্যাংকে চাকরি করতেন। এরপর গত বছর এপ্রিল মাসে যমুনা ব্যাংকে যোগদান করেছিলেন। রবিনের সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই তাঁর বোনের নানা রকম ঝামেলা হচ্ছিল। এ কারণে ছয় মাস পরই তাঁদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।
সিসিটিভি ফুটেজে তাদের একসঙ্গে বাসায় ঢুকতে দেখা গেছে এই বিষয়ে বুলবুল বলেন, ‘এটা রবিনের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল। সে কয়েক দিন আগে আমার বোনের অফিসে গিয়ে আরিফাকে বলছে তার সব জিনিসপত্র যেগুলো রবিনের কাছে আছে তা তাকে সে ফেরত দিতে আসবে। মূলত এই কারণেই রবিন পরিকল্পনা করে জিনিসপত্র নিয়ে আরিফার বাসার সামনে এসেছিল।’
আবদুল্লাহ আল আমিন বুলবুল আরো বলেন, ‘আরিফার লাশ আজ বেলা ১১টায় তাঁদের গ্রামের বাড়ি জামালাপুর জেলার মেলান্দহ থানার হাজরাবাড়ি গ্রামে দাফন করা হয়েছে।’
এই বিষয়ে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাত জানান, ‘ব্যাংক কর্মকর্তা আরিফা খুনের ঘটনায় গতকাল রাতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত আরিফার বড় ভাই আবদুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় একমাত্র আসামি হচ্ছে আরিফার সাবেক স্বামী ফখরুল ইসলাম রবিনকে। ঘটনার পর থেকেই রবিন পলাতক।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর পদ হারালেন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলেরবিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল গ্রেপ্তার
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে রাজধানীরবিস্তারিত পড়ুন