চলচ্চিত্র থেকে অনেক কিছু পেয়েছি, এবার দিতে চাই : ডিপজল
অনেকদিন পর ‘অনেক দামে কেনা’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় উপস্থিত হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল।
গত শুক্রবার দেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। নিজের অভিনীত ছবি এরই মধ্যে তিনি হলে গিয়ে দেখেছেন।
চার্লি চ্যাপলিনের ‘সিটি লাইটস’ ছবিটির ছায়া অবলম্বনে ‘অনেক দামে কেনা’ ছবির চিত্রনাট্য ও কাহিনী লিখেছেন আবদুল্লাহ জাহির বাবু। ছবিটি পরিচালনা করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক জাকির হোসেন রাজু।
ছবিটিতে আরো অভিনয় করেছেন বাপ্পি ও মাহি। ছবিটি দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ডিপজল বলেন, ‘চলচ্চিত্রকে মরতে দেওয়া যাবে না।’
মনোয়ার হোসেন ডিপজল বলেন, “গতকাল রোববার ঢাকার এশিয়া সিনেমা হলে গিয়ে ‘অনেক দামে কেনা’ ছবিটি দেখেছি। দর্শকদের আগ্রহ দেখে অনেক ভালো লেগেছে। সবাই বলে, এখন আর দর্শক হলে এসে ছবি দেখে না। আমি তো দেখে অবাক, শুক্রবার থেকেই ছবি হাউসফুল যাচ্ছে। আসলে দর্শক গল্প নির্ভর ছবি দেখতে হলে আসে। যে ছবিতে গল্প থাকে না সেই ছবি দর্শক দেখে না। এই ছবিতে সুন্দর একটা গল্প আছে। যে কারণে দর্শক ছবিটি পছন্দ করছে। আমি সারা দেশেই খবর নিয়ে জেনেছি সব জায়গাতেই ছবিটি ভালো ব্যবসা করছে।’
গত বছর বা এ বছরও এখন পর্যন্ত কোনো ছবি উল্লেখ করার মতো সফলতা পায়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেন দেখবে? এখনকার ছবিতে কী আছে? আমাদের দেশের মানুষ অনেক আবেগপ্রবণ। তারা আমাদের দেশীয় গল্পের ছবি দেখতে চায়। আমাদের জীবনের সুখ-দুঃখ দেখতে চায়। তামিল ছবির নকল দেখতে তো তারা হলে আসে না। তামিল ছবি নির্মাণ হয় ২০ কোটি টাকা খরচ করে, আমরা দুই কোটিও খরচ করি না। সুন্দর একটা বাঘ দেখে আমরা তার নকল করে যদি একটা বিড়াল বানাই, তাহলে আমাদের ছবিটা দেখে দর্শকদের কাছে কী মনে হবে? গল্প নির্ভর ভালো ছবি বানালে ছবি যে দর্শক দেখে এটা তো গত শুক্রবার থেকেই দেখা যাচ্ছে। কারণ বিগ বাজেটের দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছ এবং দুটোই ভালো চলছে।’
চলচ্চিত্রের এই দুরবস্থা থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব সে বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপজল বলেন, ‘চলচ্চিত্রকে টিকিয়ে রাখতে গেলে তিনটি বিষয়ে নজর দিতে হবে। এক : ভারতের মতো আমাদের দেশেও ডিশ লাইনে বিদেশি চ্যানেল বন্ধ করতে হবে। দুই : নকল গল্প ও টেলিভিশনের ছবি বন্ধ করতে হবে। তিন : সিনেমা হলের পরিবেশ ভালো করতে হবে। আমি একটা জিনিস বুঝি না। ভারতে যদি আমাদের দেশের কোনো চ্যানেল না চলে তাহলে আমাদের কেন তাদের চ্যানেল চালাতে হবে? এ বিষয়ে সরকারের সজাগ হওয়া উচিত। কারণ আমরা নিজেদের ঐতিহ্য নষ্ট করছি। নিজস্বতা হারিয়ে ফেলছি। নকল গল্প ও টেলিভিশনের মতো ছবি আমাদের ছবির দর্শক নষ্ট করছে। একটা নাটক বানিয়ে তারা মনে করে, ছবি বানানো অনেক সহজ। দুই-তিনটা নাটকের টাকা দিয়ে আড়াই ঘণ্টার নাটক বানিয়ে মনে করে অনেক সুন্দর ছবি বানিয়ে ফেলেছি। দর্শক হলে যায়, গিয়ে দেখে এটা সিনেমা না নাটক। অভ্যাসবশত চ্যানেল পরিবর্তনের জন্য রিমোটে চাপ দিতে গিয়ে দেখে হাতে রিমোটটা নেই। সে হলে এসেছিল ছবি দেখতে, কিন্তু সিনেমা হলে আসলে নাটক চলছে। সে যেহেতু রিমোট দিয়ে নাটকটা বদলাতে পারছে না, তখন সে রাগ করে নিজেই হল থেকে বের হয়ে যায়। এভাবেই আমাদের হলগুলো দর্শক শূন্য হয়ে যাচ্ছে।’
হলের পরিবেশ নিয়ে বলতে গিয়ে ডিপজল বলেন, ‘এর পরও দুয়েকটা ভালো বিগ বাজেটের ছবি নির্মাণ হচ্ছে। সেগুলো আরো বেশি ব্যবসা করতে পারত যদি হলের পরিবেশ ভালো থাকত। এ বিষয় সরকার ছাড়া আর কেউ কিছু করতে পারবে না। কারণ একটি সিনেমা হলের যখন অনুমতি নেওয়া হয় সরকারে কাছ থেকে কখন কিছু নিয়ম মেনে তা নিতে হয়। সেই নিয়মের মধ্যেই আছে হলের পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে। সিনেমা হল ভাঙা যাবে না বা ভাঙলে কী করতে হবে। আমার নিজের সিনেমা হল আছে, বিষয়টা আমি জানি। সরকার যদি চেষ্টা করে এবং হল মালিকদের বাধ্য করে আইন মানতে তা হলেই সিনেমা হলের পরিবেশ ভালো হয়ে যায়। দর্শক শান্তিতে বসতে না পারলে ছবি দেখবে কীভাবে?’
সামনের দিনগুলোতে চলচ্চিত্রে আবারও নিয়মিত হবেন কি না জানতে চাইলে ডিপজল বলেন, ‘আমি মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত অভিনয় করতে চাই। চলচ্চিত্রকে আমি ভালোবাসি, এখান থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি, এবার কিছু দিতে চাই। আমি আবারো আগের মতোই চলচ্চিত্রে অভিনয় ও প্রযোজনা করব। এরই মধ্যে আমি দুজন পরিচালক নিয়েছি, গল্প বাছাই করেছি আটটা । আগামী দুই মাসের মধ্য ঢাকার বাইরে গিয়ে শুটিং শুরু করব। এই আটটা ছবির শুটিং করতে আমার সময় লাগবে নয় মাস। যদি টানা শুটিং করতে পারি। আমার মোট ২৫টা ছবির গল্প তৈরি আছে কিন্তু পরিচালক ও শিল্পীরা কাজের ফাঁকে বিশ্রাম চায়। টানা কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম তো সবারই প্রয়োজন হয়। সে কারণে প্রথমে আটটা করে ছবি শুরু করব, তিন ধাপে মোট ২৪টা ছবি বানাব। এ ছাড়া আমার দুইটা ছবি তৈরি করা আছে, যা আগামী ঈদে মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখন থেকে দর্শক আমাকে নিয়মিত পাবে।’
এত ব্যস্ততার মধ্যে আপনি চলচ্চিত্রের পেছনে টানা সময় কীভাবে দেবেন জানতে চাইলে ডিপজল বলেন, “গত কয়েক বছরে আমি আমার অন্য ব্যবসাগুলো দেখভাল করার দায়িত্ব ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দিয়েছি। আমি এখন আর কোনো ব্যবসায় সময় দেই না। অল্প কিছু নিজে দেখি আর বাকি সবটাই এখন ছেলেমেয়েরা দেখে। চলচ্চিত্রের জন্য আমি নিজেকে ফ্রি করে নিয়েছি। এরই মধ্যে আমি ১২ কেজি ওজন কমিয়েছি । নিয়মিত ব্যায়াম করছি। আসলে এটা আমার আরেকটা যুদ্ধ। চলচ্চিত্র যখন অশ্লীলতায় ভরে গিয়েছিল তখন ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিসহ পর পর ৮/১০টা ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রের দিন ফিরিয়ে এনেছিলাম। এবারও টানা ছবি আবারো দর্শকদের হলে নিয়ে আসব আশা করি। চলচ্চিত্র থেকে অনেক কিছুই পেয়েছি, এবার কিছু দিতে চাই। আপনারা দোয়া করবেন আমি যেন সুস্থ থাকি।”
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সমুদ্র পাড়ে দুর্গারূপে নওশাবা
শুধু ঈদ কিংবা পূজা নয়, বিশেষ ধর্মীয় দিন উপলক্ষে ফটোশুটেবিস্তারিত পড়ুন
শুল্কমুক্ত গাড়ি খালাস করেছেন সাকিব-ফেরদৌস, পারেননি সুমনসহ অনেকে
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের জন্য আমদানি করাবিস্তারিত পড়ুন
আলোচিত নায়িকা পরীমনির পরিবার সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানতেন?
গভীর রাতে সাভারের বোট ক্লাবে গিয়ে যৌন হেনস্তা ও মারধরেরবিস্তারিত পড়ুন