চলচ্চিত্র পরিবারের জন্য কাজ করতে চাই: মিশা সওদাগর
‘১২/১২/৪৬’- উত্তরাতে এমনই একটি লোকেশনের বাড়ি খুঁজছিলাম। কিন্তু বাঁধ সাধল অন্য জায়গায়। ৪৫ নম্বরের পর ৪৬ নম্বর বাড়ির জায়গাটা খালি পড়ে আছে। যার কারণে দ্বিধায় পড়ে গেলাম! এরমধ্যে পাশ থেকে একজন বললেন, ভাই আপনারা কি ৪৬ নম্বর বাড়িটি খুঁজছেন? উত্তর হ্যাঁ সূচক দেওয়ার পরেই বললেন,‘এই পাশের বাড়িটাই…’। কথা প্রসঙ্গেই বললেন, ‘আপনারা কি মিশা মামার (অভিনেতা মিশা সওদাগর) কাছে আইছেন তার ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য?’ ‘হ্যাঁ’ বলার পর বাড়ির নিচে বসার ঘরে নিয়ে গেলেন তিনি।
বললেন, ‘একটু বসেন। আমি মামাকে ফোন দিচ্ছি।‘ ফোন রেখে তিনি জানালেন, তিনি মিশা সওদাগরের সহকারি। উপরে যেতে বলেছেন। সকালের মিষ্টি রোদ তখন সিড়ির কাছের জানালার এক কোণে দিয়ে চুপিসারে উঁকি দিচ্ছিল। আর সুদূর পানে তাকাতেই ফুল গাছের বাগান বিলাসের শোভায় প্রকৃতি আগত অতিথিদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাচ্ছিল। এরপর বসার ঘরে যেতেই চোখ আটকে গেল একটি পুরনো গ্রামোফোনে। বসার ঘরটা পুরোটা সাজানো রয়েছে নানান উপকরণ দিয়ে। সোফাতে বসার আগেই তার আরেকজন সহকারী চলে এলেন।
সোফায় বসতে বসতে জানালেন, ‘ভাই বলেছে একটু দেরী হবে।’ এর কিছুক্ষণ পরেই এলন মিশা সওদাগর। কথার শুরুতেই জানালেন, নির্বাচনী ব্যতি-ব্যস্ততার কথা। এবার শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী তিনি। গ্রামোফোনের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘এটি আমার খুব শখের একটি বিষয়। গান শুনতে ভালো লাগে।’ এভাবেই একে একে কিছু প্রসঙ্গে কথা চলল। খানিকটা সময় যেতেই জানালেন, একটু পরেই বেরিয়ে পড়বেন। যে বিষয়ে কথা বলার সেটি যেন দ্রুত সেরে নিই। এরপরই তার উত্তরার বাসাতে শুরু হলো নির্বাচনি আলাপ-সালাপ।
কদিন পরেই তো শিল্পী সমিতির নির্বাচন; কেমন চলছে শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা?
মিশা সওদাগর: আমি যখন যে কাজটা করি, সেটি শতভাগ পরিপূর্ণভাবেই করার চেষ্টা করি। তবে আমি ফলাফল পজেটিভ কিংবা নেগেটিভ দুটো ভেবেই এগিয়ে চলি। বিষয়টা হলো- প্রস্তুতি নেই শতভাগ, আশা করি তার অর্ধেক। এবার যে প্যানেল নির্বাচন করেছি, সেটি নিয়ে আমরা খুব আশাবাদী।
প্রবীণ, নবীন এবং সদ্য নবীন সবাইকে নিয়ে প্যানেলটি সাজিয়েছি। সেটি নিয়েই চ্যালেঞ্জ করছি। কারণ যারা আমার প্যানেলে রয়েছেন তাদের প্রত্যেকেরই ফেস ভ্যালু রয়েছে। আমরা যাদের নিয়ে কাজ করব তারা যাতে কোথাও গিয়ে তাদের নিজের অবস্থানটা তুলে ধরতে পারেন। সেটিও আমাদের ভাবনায় রয়েছে।
আপনি এর আগে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জিতেছেন আবার হেরেছেনও। এবার আপনার নির্বাচনে দাঁড়ানোর পিছনে আসল কারণ কী?
মিশা সওদাগর: আমি আমার চলচ্চিত্র পরিবারের পাশে সবসময় থাকতে চাই। এবার আমি আমার দায়িত্ববোধ থেকে দাঁড়িয়েছি। আমি আমার চলচ্চিত্র পরিবারের জন্য কাজ করতে চাই। আমাদের সংস্কৃতি আর বাংলা চলচ্চিত্রকে বাঁচানোর জন্য আমার এ চেষ্টা। আর কোনো বিষয় নেই। যদিও অনেকেই নানান প্রসঙ্গ সামনে টেনে আনছেন। এগুলো অযথা…।
(কথা শেষ হতেই মিশা সওদাগরের মোবাইল ফোনটি বেজে উঠল। বললেন, সময় কম যত দ্রুত পারো শেষ কর। না হয় গাড়িতে বসে ইন্টারভিউ নিতে হবে…)
আর যদি বলি আত্মবিশ্বাস ও সাহসের কথা…
মিশা সওদাগর: এটা আত্মবিশ্বাস কিংবা সাহস, বিষয়টি এভাবে আমি ভাবি না। কারণ শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো কিংবা সেবা করাই আমার দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। আমি মিশা সওদাগর কেমন তা আমার ভোটাররা ভালো করেই জানেন।
শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘুরে-ফিরে শিল্পীদের কথাটা আসাই স্বাভাবিক। হাতে গোনা কিছু শিল্পী বাদে অনেক শিল্পীই আছেন যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এর আগেও অনেকেই তাদের নানান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কাজের কাজ আর করা হয়নি, মানে নির্দিষ্ট একটি ফ্রেমে বাঁধা তাদের জীবন…
মিশা সওদাগর: সবকিছু তো আর অল্প কথায় বলা সম্ভব নয়। কিছু বিষয় বলি। আমি যখন সাধারণ সম্পাদক ছিলাম সেসময় ঈদ ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ছিল। এরপর সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমন অনেক বিষয় রয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষ আমার শুধু নেতিবাচক বিষয়গুলোকেই সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। তারপরও আমি বলবো, সামনের দিনগুলোতে নতুন প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়াই হবে আমার কাজ।
অনেকেই জানতে চান, যদি এবারের নির্বাচনে জয়ী হন আপনি শিল্পীদের জন্য কী কী করবেন?
মিশা সওদাগর: তার আগে বলি, আমি যখন বিভিন্ন পদে ছিলাম তখন শিল্পীদের জন্য কি কি করেছি তা শিল্পীরা সবাই জানেন। গত মেয়াদে একটি এক্সিডেন্ট হয়ে গিয়েছিল। আমরা এবার উপদেষ্টা নির্বাচন করব তাদেরকে, যারা বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করেন। যাদেরকে দেখে ফিল্মে এসেছি। আর একটি বিষয় বলে রাখি, গত দু’বছরে শিল্পী সমিতির সেরকম কোনো কর্মকান্ড ছিল না! গত দু বছরে একটি এজিএমও হয়নি!
বিষয়টা কীভাবে সম্ভব? সংবিধান যেভাবে ফলোআপ করা উচিত। সেভাবে তারা কিছুই করেনি। আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে যে শিল্পীরা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, তারা যেন সেদিক থেকে স্বচ্ছল হয় সেদিকে আমরা নজর রাখব। ৫০ লাখ টাকার একটি স্থায়ী হিসাব খুলবো। সেখান থেকে অসুস্থ শিল্পীদেরকে তাদের ভাতা দিব। আমরা আমাদের শিল্পীদের জন্য শতভাগ পাশে থাকব।
এখনকার দেওয়া কথার সাথে ভবিষ্যতে কতটা মিল থাকার সম্ভাবনা আছে?
মিশা সওদাগর: আমি একজন শিল্পী। গত কয়েকবছর আগে যখন যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণের হিড়িক পড়ল তখন থেকেই বলছি, ৫০-৫০ না হলে আমি যৌথ প্রযোজনার ছবিতে অভিনয় করব না। আমি অনেক প্রস্তাব পেয়েছি। তারপরও করিনি। আমি তখনই করব যখন দেখবো যে আমাদের স্বার্থটাও পুরোপুরি দেখা হচ্ছে। আমি চাইলেই আমার স্বার্থটা দেখতে পারতাম। এ একটা বিষয় দিয়েই পুরো বিষয়টা বলতে চাই। কথা এবং কাজ একই হবে।
(এখন এক, পরে আরেক- এমন কথায় বিশ্বাসী নন মিশা। কারণ তিনি নিজেও জানেন, এ রূপালি জগৎটা যতটা আলোকোজ্জ্বল ততটা ধূসরও। যার কারণে ভেবে চিন্তেই পাড়ি দিতে চান জীবনের বাকিটা পথ…)
আপনার দীর্ঘদিনের বন্ধু ওমর সানী, তিনিও একই পদে (সভাপতি) লড়ছেন। মনোনয়ন পদে জমা দেওয়ার আগে কি আপনাদের মধ্যে কথা হয়েছিল?
মিশা সওদাগর: হুমম হয়েছে। এগুলো কোনো জটিল বিষয় নয়। অনেকেই বিষয়টিকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করছেন। তবে আমরা আমাদের জায়গা থেকে ঠিক রয়েছি। যে জিতবে সে ফুলের মালা পরবে। দায়িত্বপালন করবে। শিল্পীরা যাকে নির্বাচিত করবে সেই শিল্পীদের জন্য কাজ করে যাবে। ওরও তো একই উদ্দেশ্য, সে শিল্পীদের জন্য কাজ করতে চায়।
নির্বাচনী ইশতেহারের কী খবর?
মিশা সওদাগর: আমাদের ইশতেহার এখনও সম্পূর্ণ, তা বলতে পারব না। আর তিন-চারদিন পরেই সবাই আমাদের ইশতেহার সম্পর্কে জানতে পারবে।
চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকেই একটি অভিযোগ করছেন, দর্শক মনে যারা শক্তিশালী অভিনেতা হিসেবে যোগ্য হয়ে উঠতে পারেননি, তারা অনেকেই নেতা হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন?
মিশা সওদাগর: আমি অন্যেরটা বলতে চাই না। আমি আমার প্যানেল নিয়ে কথা বলব। একটি প্যানেল দাঁড় করাতে গেলে সব ধরনের শিল্পীদের নিয়েই কাজ করতে হয়। আমার প্যানেলে যারা আছেন সবাই এখনও পুরোপুরি অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত। আর দীর্ঘদিন তারা শিল্পী সমিতির বিভিন্ন পদে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। আমার তো কর্মীও লাগবে। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে।
নির্বাচন আসলেই আরেকটি প্রসঙ্গ ঘুরেফিরেই আসে। সেটি হলো অর্থের বিনিময়ে ভোট কেনা। অনেকেই অভিযোগ করছেন- এবারও একই অবস্থা। আপনি কী বলবেন এ বিষয়ে?
মিশা সওদাগর: এটা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার একটি পন্থা। একপক্ষ আরেকপক্ষকে নানান প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে চাইবে। এটাই স্বাভাবিক বলে আমি মনে করি। তবে আমি এসব নিয়ে ভাবতে চাই না। ভোটারই সঠিক সিদ্বান্ত গ্রহণ করবেন। কারা তাদের ভোট দিবেন।
৩০ বছরের শিল্পী জীবন। নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত; আপনার কোনো প্রতিযোগী না থাকায় আপনার কি কখনও মনে হয় এটা আপনার ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে?
মিশা সওদাগর: আমি সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা সব সময়েই করে যাচ্ছি। না হলে এতটা সময় একটি ইন্ডাস্ট্রিতে কীভাবে টিকে থাকা যায়? আর অনেকেই তো আছেন। বিষয়টা তো পুরোপুরি দর্শকদের উপর নির্ভর করে। যার কারণে নেতিবাচক কিংবা ইতিবাচক কোনো ধরনের বিষয় নিয়েই আমি সেভাবে ভাবি না। কারণ আমি আমার কাজটাই ঠিকভাবে করতে চাই।
ইদানিং শাকিব খানের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে। শুধুই কি ছবিতে অভিনয় নাকি অন্য কোনো কারণও রয়েছে?
মিশা সওদাগর: এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। কারণ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে বলেছি সেভাবে গণমাধ্যমে না এসে একটু এদিক-সেদিক হয়ে গণমাধ্যমে এসেছে। যার কারণে এখন দুটি পক্ষ তৈরি হয়ে গিয়েছে। ওর সাথে আমার যোগাযোগ হয়। কারণ দিনের শেষে আমরা তো শিল্পী। আমাদের মধ্যে অভিমান, ভুল বোঝাবুঝি হবে আবার সব ভুলে আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়াব। এটাই স্বাভাবিক।
(কথা শেষ। বললেন, ‘আজ আর সময় নেই। প্রথমে ফারুক ভাই (চিত্রনায়ক ফারুক) এরপর সোহেল রানা ভাইয়ের বাসায় যাব।’ প্রায় আধঘন্টার নির্বাচনি আলাপে সেভাবে আর অন্য কোনো প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলেন না মিশা সওদাগর। আর স্বগোতোক্তিতে জানালেন, ‘অন্য আরেকদিন না হয় অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হবে।’) প্রিয়.কম
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সমুদ্র পাড়ে দুর্গারূপে নওশাবা
শুধু ঈদ কিংবা পূজা নয়, বিশেষ ধর্মীয় দিন উপলক্ষে ফটোশুটেবিস্তারিত পড়ুন
শুল্কমুক্ত গাড়ি খালাস করেছেন সাকিব-ফেরদৌস, পারেননি সুমনসহ অনেকে
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের জন্য আমদানি করাবিস্তারিত পড়ুন
আলোচিত নায়িকা পরীমনির পরিবার সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানতেন?
গভীর রাতে সাভারের বোট ক্লাবে গিয়ে যৌন হেনস্তা ও মারধরেরবিস্তারিত পড়ুন