চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু পথযাত্রী একজন মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক
মাসুদ রানা, ভোলা প্রতিনিধিঃ মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান যিনি একদিন তিনি সকলের খবর পত্রিকায় লিখতেন। আজ তিনি নিজেই খবর। তিনি সুধু সাংবাদিকই নন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও। আর সেটাই তার বড় পরিচয়, গর্ব ও অহংকার। অথচ জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তান আজ বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পাচ্ছে আর মৃত্যুর প্রহর গুনছে। তার খবর আজ আর কেউ রাখেনা। ভোলা সদর উপজেলার পাখির পোল এলাকায় বসবাস করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি পাকহানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। তিনি স্বাধীনতার পূর্ব থেকে তিনি সাপ্তাহিক পূর্বদেশ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। সাংবাদিক ছিদ্দিক হিসাবেই শহরে পরিচিতি তার।
পাখির পোল এলাকায় অসমাপ্ত আধাপাকা একটি টিনের ঘরে গিয়ে দেখা যায় মেঝেতে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে অনেক কষ্টে বিছানা থেকে উঠে বসেন। মুক্তিযুদ্ধের সেই স্মৃতির কথা বলতেই তার চোখ পানিতে ছলছল করে উঠে। স্পষ্ট কথা বলতে পারেন না তিনি। তার পরও খুব আস্তে আস্তে সেই পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তা বলার চেষ্টা করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য বিভিন্নস্থানে প্রশিক্ষণ নেন। তারপর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সংগঠিত হন। ভোলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনয়নে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করেন। এতে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার ঘটনা বলার চেষ্টা করে আবার কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ছাইফুল্লাহ, জুলুর সঙ্গে তিনি থাকতেন। ভোলার ট্রেজারি যেদিন লুট হয় সে দিনও তিনি যুদ্ধ করেন। এসব কথার ফাঁকে বলে ফেলেন তার ক্ষোভের কথা। বলেন, ‘এখন আর আমাদের কদর নেই। আমরা অসহায় মুক্তিযোদ্ধা। তাই কেউ আমাদের খবর নেয়না।’ তার স্ত্রী জানান, গত প্রায় ৮ বছর আগে তার স্বামী ব্রেনের রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু তেমন কোন চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। মুক্তিযোদ্ধার সামান্য যে ভাতা পান তা দিয়ে তার ওষুধের টাকাও হয়না।
অনেক কষ্টে গাছ বিক্রি করে ঢাকায় নিয়ে কয়েকবার ডাক্তার দেখানো হয়। কিন্তু টাকার অভাবে আর উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। কারণ অর্থাভাবে তার পরিবারের স্বাভাবিক জীবন যাপনই এখন কঠিন। তার দুই ছেলে দুই মেয়ে। বড় মেয়েকে কষ্টের মধ্যে বিয়ে দিতে পারলেও এখনও এক মেয়ে রয়েছে। টাকার অভাবে ছেলেমেয়েদের বেশি দূর পড়ালেখা করাতে পারেননি। বড় ছেলে এইচএসসি পাশ করার পর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। তার ছেলে ভোলা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেও পাননি। তাই ইলিশা ফেরীতে চাকরি করেই কোন মতে সংসার চালাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধা এ অসহায় পরিবারের সদস্যরা এখনও আশায় বুক বেঁধে আছেন, যদি প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি দেন তাহলে হয়তো শেষবারের মতো হলেও মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান উন্নত চিকিৎসা পাবেন। তার ছেলের একটি সরকারি চাকরি মিলবে। ভোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান অসুস্থ হওয়ার পর আমরা তাকে সাহায্য সহযোগিতা করে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য পাঠাই। কিন্তু তার উন্নত চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া সম্ভব নয়। তাই আমরা দেশের এই বীর যোদ্ধার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে স্বাগতিক ওয়েস্টবিস্তারিত পড়ুন
রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
যমুনা ফিউচার পার্কে মোবাইলের দোকানে চুরির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভবিস্তারিত পড়ুন
যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশি নাগরিকদেরবিস্তারিত পড়ুন