নাজিমুদ্দিন হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী
চিৎকার করে বলি, ভাই আপনাদের ভুল হচ্ছে

“খুনিরা যখন নাজিমুদ্দিনকে কোপায়, তখন চিৎকার করে বলি, ‘ভাই, আপনাদের কোনো ভুল হচ্ছে। তখন আল্লাহু আকবর বলে ওর মাথায় গুলি করে খুনিরা।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও তার বন্ধু সোহেল ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দেন এভাবেই।
শুক্রবার সকালে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে নিজের মেসে সাংবাদিকদের কাছে নাজিমুদ্দিন হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিতে গিয়ে সোহেল বলেন, “ওই দিন আনুমানিক রাত সাড়ে আটটার দিকে আমি ও নাজিম হেঁটে লক্ষ্মীবাজারে মেসের দিকে যাচ্ছিলাম। একরামপুর মোড়ে কলরেডির কাছে আসতেই পাশ থেকে দুজন তরুণ হেঁটে কাছে এসেই নাজিমের মাথায় কোপ দেয়। এতে সে রাস্তায় পড়ে যায়। তখন আমি আতঙ্কে দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে যাই।”
নাজিমের বন্ধু বলেন, “রাস্তা পার হওয়ার পর আমি দেখতে পাই আরো তিনজন তরুণ এসে নাজিমকে ঘিরে ফেলেছে। তারা মাথায় দু-একটি কোপ দিতেই আমি চিৎকার করে বলি, ‘ভাই, আপনাদের কোনো ভুল হচ্ছে, ও নাজিমুদ্দিন। ও কিছু করেনি।’আর তখনই খুনিদের একজন ‘আল্লাহু আকবার’বলে নাজিমের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে। এ দৃশ্য দেখে আমি ভয়ে দৌড় দেই।”
সোহেল বলেন, “কিছু দূর দৌড়ে যাওয়ার পর আমি টহল পুলিশ দেখতে পাই। তাদের আঙুল দেখিয়ে (দিক নির্দেশ করে) বলি, ‘ভাই, সামনে মার্ডার হয়েছে, দ্রুত যান।’ তখন তারা আমাকে বলে থানায় যোগাযোগ করতে। আমি বলি, ‘আমি কীভাবে জানাব। আপনারা আমার সঙ্গে চলেন, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি কোথায় মার্ডার হয়েছে।’ তখন পুলিশ সদস্যরা বলেন, ‘আপনি চলে যান আমরা দেখছি’।”
খুনিদের পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে সোহেল বলেন, “খুনিরা তরুণ। সবাই স্বাভাবিক পোশাক পরে ছিল। শার্ট, টি-শার্ট ও প্যান্ট।”
নাজিমের বন্ধুরা বলছেন, স্বাধীন মতপ্রকাশ করতে গিয়ে নাজিমুদ্দিনকে এই করুণ পরিণতির শিকার হতে হলো। আওয়ামী লীগের সমর্থক হলেও সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন লেখায় দলের তীব্র সমালোচনা করতেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ফেসবুকে সমসাময়িক বিষয়, ধর্মীয় সমালোচনার পাশাপাশি তনু হত্যাকাণ্ড নিয়েও নিজের মতপ্রকাশ করে চলেছিলেন। এসবই কোনো পক্ষকে ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে।
এদিকে নাজিমুদ্দিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম বাদি হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। সূত্রাপুর থানার মামলার নম্বর ০২। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন সূত্রাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অসুমির চন্দ্র সূত্রধর।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সূত্রাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অসুমির চন্দ্র সূত্রধর বলেন, “তদন্ত চলছে। অনেক কিছু মাথায় নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তবে গোয়েন্দা পুলিশ চাইলে মামলার তদন্তভার নিতে পারবে। অন্যথায় আমরাই তদন্ত করব।”
নিহত নাজিমুদ্দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সান্ধ্য কোর্সের স্নাতকোত্তর শ্রেণির বি-সেকশনের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারে। তিনি সিলেটের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ছিলেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের জেলা শাখার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন নাজিমুদ্দিন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, ধারণা করা হচ্ছে হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত এবং প্রতিশোধের জের ধরে এটি সংঘটিত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে গুলির একটি খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনো কাউকে শনাক্ত কিংবা আটক করা যায়নি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

গোলাম পরওয়ার: নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে মহাদুর্যোগ নেমে আসবে
অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ না হলে জাতির জন্যবিস্তারিত পড়ুন

আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারবিস্তারিত পড়ুন

শুক্রাণু দান করা শতাধিক সন্তানকে সম্পদের সমান ভাগ দেবেন টেলিগ্রাম প্রতিষ্ঠাতা
দান করা শুক্রাণু থেকে যেসব সন্তানের জন্ম হয়েছে সেসব সন্তানকেওবিস্তারিত পড়ুন