চোখ থাকিতেও অন্ধ!
লেখার বিষয়টাই এমন, এখানে ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে কেস স্টাডির বয়ান দুঃসাধ্য। পাত্র-পাত্রীর নাম বললে তাঁদের মধ্যকার জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা প্রবল। ফলে অবধারিতভাবে ছদ্মনামের আশ্রয় নিচ্ছি আমরা। ধরা যাক, এই সত্যি গল্পের পাত্রীর নাম হিমি, পাত্রের নাম টুটুল। দাম্পত্য জীবনের ছয়টি বছর পার করেছেন সম্প্রতি। শেষ বিবাহবার্ষিকীতেই তাঁদের মধ্যে বেঁধে গেল তুলকালাম কাণ্ড!
গল্পটা আমরা শুনছিলাম হিমির মুখ থেকে। ৩২ বছর বয়সী এই চাকরিজীবী বিবাহবার্ষিকীর রাতে আশা করেছিলেন টুটুল অন্তত বিশেষ দিনটির কথা মনে করিয়ে দেবেন। সেটা হয়নি। পরদিন সকালে শোনেননি কাঙ্ক্ষিত কথাগুলো, এমনকি সন্ধ্যা কিংবা রাতেও নয়। দাম্পত্য জীবনে টুটুলের এমন ‘শীতঘুম’ভাব বছর তিনেকের। প্রেমের বিয়ে ছিল তাঁদের। বিয়ের পরের দু বছরের কথা বলতে বলতে হিমির কণ্ঠে বাষ্প জড়ো হলো যেন, ‘প্রথম দু বছর কী যে আনন্দে কেটেছিল, তা এখন ভাবলে অবাক হই। আসলেই কি সেটা আমার জীবনে ঘটেছিল! আমাদের সন্তান হওয়ার পরপরই মূলত এই সমস্যাটা প্রকট হয়। টুটুল যে আমাকে সময় দিচ্ছে না এবং তাতে আমি কষ্ট পাচ্ছি, এটা যেন ও দেখেও দেখছে না!’
‘চোখ থাকিতেও অন্ধ’ টুটুলের কথাও তো শুনতে হয়। একদম আলাদাভাবে দাম্পত্য জীবন নিয়ে জানতে চাই তাঁর কাছে। কেমন যাচ্ছে হিমির সঙ্গে আপনার সংসার? টুটুল সপ্রতিভ, ‘দারুণ। আমাদের একটা মেয়ে আছে। খুব ভালো সময় কাটছে। সব মিলিয়ে আমরা সুখী।’
এবার আপনিই বলুন, হিমির অভিযোগের সঙ্গে টুটুলের উচ্ছ্বাস কি মেলানো যায়? দুজনে মিলে একটা জীবনই যাপন করছেন তাঁরা। অথচ হিমি বলছেন, তিনি ভালো নেই। অন্যদিকে টুটুল যেন উপন্যাসের ‘বউ-বাচ্চা নিয়ে বড় সুখী’ এক চরিত্র! তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মেখলা সরকারের সঙ্গে। তিনি দাম্পত্য জীবনের এই জটিলতার ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, ‘যেকোনো সম্পর্কই গাছের মতো। নিয়মিত পরিচর্যা দরকার। দাম্পত্য সম্পর্কে প্রথম দিকে দুজন দুজনকে খুব গুরুত্ব দেন। কিন্তু কিছুদিন পর হয়তো যেকোনো একজন আরেকজনকে আগের মতো গুরুত্ব দেন না। আরও নানান কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এবং খেয়ালও করেন না যে তার সঙ্গীকে আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না।’
ঠিক যেন গাছেরই মতো। নিয়মিত জল-হাওয়া না পেতে পেতে গাছটার পাতা হলুদ হতে থাকে, একসময় ঝরেও পড়ে টুপটাপ টুপটাপ! এমনটা হওয়ার কারণও বললেন মেখলা সরকার, ‘যিনি প্রতিনিয়ত অবহেলিত হচ্ছেন, তিনি নিজেকে অযোগ্য, হীন ভাবছেন। ফলে তাঁর স্বাভাবিক জীবনযাপন হচ্ছে ব্যাহত। এর প্রভাব পড়ছে ঘর-সংসার, সন্তান ও কর্মক্ষেত্রেও।’
আর সবচেয়ে বড় প্রভাব তো পড়ছে দাম্পত্য জীবনেই! বিশেষ করে অবহেলিত ব্যক্তি খিটমিটি আচরণ করছেন সঙ্গীর সঙ্গে। হিমিও এতে একমত, ‘এ কারণেই প্রায় সব সময় আমাদের মধ্যে খুটখাট লেগেই থাকে। কোনো কাজেই মন বসাতে পারি না। টুটুল ভাবে, আমি হয়তো শুধু শুধুই এমন করি!’
এ অবস্থা থেকে সমাধান কী? টুটুলের প্রতিনিয়ত অবহেলার পরও হিমি হয়তো অন্য রকম করে কিছু ভাবেননি। কিন্তু অনেকেই আছেন, স্বামী বা স্ত্রীর অবহেলা সইতে সইতে অন্য পুরুষ বা নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন।.আমাদের এই কেস স্টাডির পাত্র টুটুলের মধ্যে যদি আপনি নিজেকে খুঁজে পান, তাহলে এই পরামর্শগুলো মেনে চলুন এখন থেকেই!
* দাম্পত্য জীবনে প্রতিদিন সম্পর্কটা সজীব রাখুন।
* সপ্তাহে অন্তত একদিন দুজন মিলে সময় কাটান। সেটা সন্তান ছাড়া হলে খুব ভালো হয়।
* বাইরে থেকে এসে ‘হাই’ ‘হ্যালো’ করুন। চোখে-চোখ রাখুন। একটু হাসুন। সারাটা দিন কেমন কাটল, তা জানতে চান।
* অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে একসঙ্গে বসুন। টিভি দেখতে দেখতে নয়, চা খেতে খেতে কথা বলুন। এ সময় সংসার বা ব্যক্তিগত জীবনের অভিযোগগুলো তুলে আনবেন না। অনেক সময় দেখা যায়, সঙ্গী বাসায় আসার সঙ্গে সঙ্গে কাজের মানুষ, সন্তান বা আরও অনেক কিছু নিয়ে অভিযোগের ডালি নিয়ে বসেন অনেকে। এটা করা উচিত নয়।
* প্রতিদিন একে অপরকে স্পর্শ করুন। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মাথায় হাত রাখুন, বিকেলে হাতটা ধরুন। এর ফলে সঙ্গী আশ্বস্তবোধ করবেন।
* বাইরে থেকে আসার সময় মাঝেমধ্যে ছোটখাটো উপহার আনুন সঙ্গীর জন্য। বড় বা দামি কোনো উপহার নয়, খুব মামুলি কিছু। হয়তো একটা ফুল কিংবা চকলেট। এটা করলে সঙ্গী বুঝবে, আপনি তাকে বাইরে থাকার সময়ও মনে করেছেন।
* দুপুরে খেয়েছে কি না, এটা জিজ্ঞেস করুন। ফোন করার সময় না পেলে অন্তত একটা মেসেজও সঙ্গীকে দারুণ খুশি করবে।
* সঙ্গীর আচরণে পরিবর্তন এলে, যেমন ঘুম কম হলে, খাওয়ায় অনিয়ম করলে কিংবা খিটমিটে আচরণ করলে বুঝবেন, তার মানসিক অবস্থা ভালো নেই। তিনি কেন ভালো নেই, তা জানতে চান। তাকে বুঝতে চেষ্টা করুন।
* নিজের অভিযোগগুলো জানানোর জন্য সুবিধামতো একটা সময় বেছে নিন। সব সময় অভিযোগ করলে সঙ্গী বাসার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
সঙ্গী যদি অন্য কারও সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে?
স্বামী বা স্ত্রীর কাছ থেকে অবহেলা পেতে পেতে অনেকেই তৃতীয় আরেকজনকে টেনে আনেন জীবনে। কখনো তা নিজের ইচ্ছায়, কখনো বা তৃতীয়জনের আহ্বানে। এ ক্ষেত্রে আপনি যদি নিজের ভুল এবং সেই সঙ্গে আপনার সঙ্গীর অবস্থান উপলব্ধি করেন, তাহলে কী করবেন?
মেখলা সরকারের পরামর্শ, ‘দাম্পত্য জীবন দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে পারস্পরিক সমঝোতাই প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত। নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান বের করার চেষ্টা করুন। একে অপরকে কোনোভাবেই দোষ দেবেন না। এসব ক্ষেত্রে আবেগ কাজ করে তীব্রভাবে। সেটা দুজনকেই বুঝতে হবে।
এ সময় প্রতারিতবোধ করা সঙ্গীটির মনে রাগ, ঘৃণা কাজ করে প্রচণ্ডভাবে। ফলে অনেকেই নিজেদের সমস্যার সমাধান বের করা করতে পারেন না। পরিবারের বিশ্বস্ত কোনো সদস্য, যিনি আপনাদের ভালো বোঝেন, তাঁর সঙ্গে আলোচনা করুন। তা না হলে মনোরোগবিদের সঙ্গে কথা বলুন।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
হোটেল ঘরে বিছানার চাদর সাদা হয় কেন ?
বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথম যে বিষয়টি নজরে আসে,বিস্তারিত পড়ুন
ধনিয়া পাতার উপকারি গুণ
চিকিৎসকদের মতে, ধনে বা ধনিয়া একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার অনেকবিস্তারিত পড়ুন