চোখের জলের হয় না কোনও দাম? এ বার চালু হচ্ছে প্রথম টিয়ার্স ব্যাঙ্ক!
কে বলল, চোখের জলের হয় না কোনও দাম?
এ বার চোখের জলও ‘কেনা’ যাবে! চোখের জল জমিয়ে রাখা যাবে। চোখের জল দেওয়া, নেওয়ার জন্য এ বার চালু হচ্ছে টিয়ার্স ব্যাঙ্ক। সেই ব্যাঙ্কে চোখের জল দেওয়া বা সেখান থেকে চোখের জল নেওয়ার জন্য এ বার অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে চোখের জলের ব্যাঙ্কে। রীতিমতো দাম চুকিয়েই চোখের জল নিতে হবে এ বার ওই টিয়ার্স ব্যাঙ্ক থেকে। বিভিন্ন প্রয়োজনে। বিজ্ঞানীদের গবেষণায়। বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার রিসার্চ সেলের চাহিদা মেটাতে। ব্লাড ব্যাঙ্ক ও প্রতিস্থাপন, গবেষণার জন্য কিডনি, ফুসফুস সহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যাঙ্কের পর এ বার চালু হতে চলেছে টিয়ার্স ব্যাঙ্কও।
মূল উদ্যোগটা যিনি নিচ্ছেন, তিনি এক জন ইজরায়েলি নিউরো-বায়োলজিস্ট, রেহ্ভোতের ‘ওয়াইজ্ম্যান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স’-এর অধ্যাপক নোয়াম সবেল। সঙ্গী এক অনাবাসী ভারতীয় নিউরো-সায়েন্টিস্ট অনিতা সারেঙ্গি।
কেন চোখের জলে ভিজিয়ে দিলেম না…
কেন তাঁরা এই অভিনব উদ্যোগের কথা ভাবছেন?
সম্প্রতি কলকাতায় তাঁর এক পারিবারিক বন্ধুর কাছে ঘুরতে এসেছিলেন সবেল। আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘আমরা দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা করছি চোখের জল নিয়ে। একেবারে হালে আমরা গবেষণায় দেখেছি, মানুষের চোখের জল সব সময়েই রাসায়নিক বার্তা বা সংকেত (কেমিক্যাল সিগন্যাল) বয়ে নিয়ে বেড়ায়। কোনও মহিলার চোখে জলে থাকা ‘ফেরোমোন’ সামনে দাঁড়ানো কোনও পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। সেই পুরুষের যৌন উত্তেজনাকে প্রশমিত করে বা তাকে যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা করে বা কমিয়ে দেয়। সেই গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ।
আমরা দুঃখ পেলে কাঁদি, খুব আনন্দ হলেও কাঁদি, খুব জোরে হাসতে হাসতেও আমাদের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে তার ঝাঁঝ লাগলে আমাদের চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসে। আবহাওয়ায় গরম ও ঠাণ্ডার ফারাকটা খুব তাড়াতাড়ি ওঠা-নামা করলেও চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। জলের অভাব নেই আমাদের চোখে। ওই অশ্রু বা টিয়ার’ই আমাদের চোখকে ভাল, সুস্থ ও তরতাজা রাখে। কর্নিয়াকে দেয় ‘শ্বাসের বাতাস’। কিন্তু মুশকিলটা হল, গবেষণার জন্য চোখের জল চট করে পাওয়া যায় না। কেউই তাঁর চোখের জল দিতে চান না। দুঃখে কাঁদা বা আনন্দে চোখের জল ফেলার সময় কেই-বা ভাবেন বলুন, একটা চামচে বা কাপে বা ছোট শিশিতে ভরে রাখি অশ্রু, পরে তা গবেষকদের হাতে তুলে দিতে হবে বলে? আর চোখের জল জমিয়ে রেখে অনেক পরে তা গবেষকদের হাতে তুলে দিলেও তো তেমন লাভ হয় না। ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য পরিবেশগত কারণে তা নষ্ট হয়ে যায়। সেই চোখের জল নিয়ে আর গবেষণা করা যায় না। তাই টিয়ার্স ব্যাঙ্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। আপাতত ইজরায়েলের রাজধানী তেল আভিভ শহরেই ওই টিয়ার্স ব্যাঙ্ক চালু হবে। পরে গবেষক ও বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশে খোলা হবে তার শাখা।’’
তবে সেই ব্যাঙ্কেই বা কী ভাবে চোখের জলের ‘দীর্ঘমেয়াদী আমানত’ সম্ভব হবে?
তারও উপায় বের করেছেন সবেলই। বললেন, ‘‘যাতে চোখের জলের রাসায়নিক উপাদানগুলি দীর্ঘ সময় ধরে একেবারে ঠিকঠাক থাকে, সে জন্য আমরা তাকে ঠাণ্ডায় জমিয়ে রাখার উপায়ও উদ্ভাবন করেছি। তার কয়েকটি ধাপ রয়েছে। তরল নাইট্রোজেনকে ব্যবহার করতে হয়। যা চোখের জলের তাপমাত্রা শূন্যের ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে নামিয়ে দেয়। মানে, মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ক্রায়োজেনিক পদ্ধতিতে সেই ঠাণ্ডায় জমানো চোখের জলকে রাখা হবে ব্যাঙ্কে। রক্ত, মূত্র, বিভিন্ন অ্যাম্নায়োটিক ফ্লুইডের মতো চোখের জলও কেনা বা পাওয়া যাবে অনলাইন অর্ডারের ভিত্তিতে। ওই ব্যাঙ্কে থাকবে বিভিন্ন বয়সের নারী ও পুরুষের চোখের জল। তার ফলে যে চোখের জল পেতে এখন গবেষক ও ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির কালঘাম ছুটে যায়, তা দু’সপ্তাহের মধ্যেই তাঁদের হাতে পৌঁছে যাবে। ‘সিলিকন ভ্যালি’রও খুব প্রয়োজন হবে চোখের জলের, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির কনট্যাক্ট লেন্স বানাতে।’’
নিউরো-বায়োলজিস্ট নোয়াম সবেল
চোখের জলের গবেষণা আমাদের কত দূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে?
সহযোগী ভারতীয় গবেষক অনিতা সারেঙ্গির কথায়, ‘‘চোখের জল আমাদের ‘মুড’ কী ভাবে কতটা বদলে দেয়, মস্তিষ্কের স্নায়ুর কোন কোন কার্যকলাপ তাদের নিয়ন্ত্রণ করে, ক্ষরণের আগে নিউরনগুলি কী ভাবে চোখের কোষ, কলাগুলিকে ‘সিগন্যাল’ বা সংকেত পাঠায়, নারী ও পুরুষের চোখের জলের ফারাক কতটা, কতটা পার্থক্য থাকে তাদের রাসায়নিক উপাদানে, প্রচণ্ড খিদেয় কেন চোখে জল আসে, আবেগ-সঞ্জাত (ইমোশনাল) ও আবেগ-বিবর্জিত (নন-ইমোশনাল) চোখের জলের ফারাকটা কোথায় আর সেই ফারাকটা হয় কেন, এ সব বুঝতে সহজ করবে চোখের জলের ব্যাঙ্ক। কারণ, গবেষণার জন্য তখন চোখের জল পেতে অসুবিধা হবে না।’’
আবেগসঞ্জাত (বাঁ দিকে) ও আবেগবর্জিত চোখের জল। মাইক্রোস্কোপের তলায়।
ইমোশনাল ও নন-ইমোশনাল চোখের জলের মধ্যে আপাতত কী কী ফারাক লক্ষ্য করেছেন গবেষকরা?
সবেল বলছেন, ‘‘আমরাই প্রথম দেখিয়েছি, চোখের জলের মাধ্যমে মানুষ তার সঙ্গী, পরিচিত, কম পরিচিত বা অপরিচিতের সঙ্গে রাসায়নিক ভাবে যোগাযোগ (কেমিক্যাল কমিউনিকেশন) গড়ে তোলে। এটাকেই বলে ‘কেমো-সিগন্যাল’। যাতে কোনও গন্ধ থাকে না। তবে তা লবণাক্ত। এর আগে ওই ‘কেমো-সিগন্যাল’ একমাত্র ব্লাইন্ড মোল র্যাট-এই পাওয়া গিয়েছিল। যদিও শিশু ও পুরুষের চোখের জল কোনও ‘কেমো-সিগন্যাল’ পাঠায় কি না, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নই আমরা। তবে আমরা দেখেছি, ইমোশনাল চোখের জলে অনেক বেশি প্রোটিন থাকে। চোখ ভাল রাখার জন্য সাধারণ চোখের জলে অতটা পরিমাণে প্রোটিন থাকে না। এই প্রোটিন আমাদের বগলেও থাকে। আমরা এও দেখেছি, পুরুষের ঘামের গন্ধ নারীদের সেই পুরুষের প্রতি যৌন আসক্তিকে বাড়িয়ে তোলে। সেই ঘামের গন্ধ বিভিন্ন পুরুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের হয়। এমনকী, পুরুষের বিভিন্ন ‘মুডে’ সেই ঘামের গন্ধও হয় নানা রকমের। দেখা গিয়েছে, সদ্য মা হওয়া নারীর বক্ষ আবরণী বা জামাকাপড়ের গন্ধ অন্য নারীর (যিনি মা হননি বা আসন্নপ্রসবা নন) যৌন উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়।’’
আমার চোখের জল, তোমার চোখের জল তা হলে মুক্তো হয়ে গেল!
চোখের জল ‘শ্রাবণে শ্রাবণে আমি তোমাকে চাই…না বলা কথায় আমি তোমাকে চাই…অকাল বোধনে আমি তোমাকে চাই…’!
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
হোটেল ঘরে বিছানার চাদর সাদা হয় কেন ?
বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথম যে বিষয়টি নজরে আসে,বিস্তারিত পড়ুন
ধনিয়া পাতার উপকারি গুণ
চিকিৎসকদের মতে, ধনে বা ধনিয়া একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার অনেকবিস্তারিত পড়ুন