জঙ্গলে নির্জন এলাকায় মেয়ের চোখের সামনে মা কে ধর্ষণ, ধর্ষককে শাস্তি মেয়ের! বিচার পাবে কি তরুণী
গোটা ঘটনার জেরে আলিপুরদুয়ারে সাধারণ মানুষের মধ্যেও মারাত্মক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। মায়ের সম্মানরক্ষায় তরুণী যা করেছেন, তাতে তাঁকে সমর্থনই করছেন সাধারণ মানুষ।
মায়ের সম্মানরক্ষার মরিয়া চেষ্টা। আর তা করতে গিয়েই জেলে গেলেন বছর পঁচিশের তরুণী। কারণ চোখের সামনে মায়ের ধর্ষণ দেখে একজন সন্তানের যা করা উচিত তাই করেছিলেন ওই তরুণী। তাঁর আক্রমণেই মৃত্যু হয় মায়ের ধর্ষকের। যার জেরে পুলিশ গ্রেফতার করেছে ওই তরুণীকে। আইন মেনে তরুণীকে গ্রেফতার করলেও গোটা ঘটনাক্রমে টানাপোড়েনে পড়েছে পুলিশও। পুলিশকর্তারা অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই তরুণীর বিরুদ্ধে মামলা সাজানো হচ্ছে।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ার গোপালপুর চা বাগানে। অভিযোগ গত রবিবার সকালে হাট থেকে জিনিস কেনার জন্য অধিকাংশ শ্রমিকই ব্যস্ত ছিলেন। সেই সময়েই প্রদীপ ওঁরাও নামে বাগানের এক দিনমজুর বছর চল্লিশের এক মহিলাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। বাগানেরই নির্জন এলাকায় মহিলাকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে প্রদীপ। সাহায্য চেয়ে চিৎকার করেন ওই মহিলা। মায়ের চিৎকার শুনে তাঁর খোঁজ শুরু করেন ওই মহিলার বছর পঁচিশের মেয়ে। খুঁজতে খুঁজতে মাকে দেখতে পান ওই তরুণী। তখনও তার উপরে নির্যাতন করছিল প্রদীপ। মায়ের সম্মানহানি দেখে স্বাভাবিকভাবেই নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারেননি ওই তরুণী। হাতের কাছে পড়ে থাকা পাথর দিয়ে প্রদীপের মাথায় ক্রমাগত আঘাত করেন তিনি। এর পরেই লুটিয়ে পড়ে প্রদীপ।
নিজের মাকে কোনওক্রমে উদ্ধার করে বস্তিতে ফেরেন তরুণী। ঘটনার আকস্মিকতায় কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে যান নির্যাতিতা। তিনি বা তাঁর মেয়ে কেউই ঘটনার কথা কাউকে জানাননি। হাট থেকে ফেরার সময়ে আহত অবস্থায় প্রদীপকে পড়ে থাকতে দেখে কয়েকজন শ্রমিক তাঁকে উদ্ধার করে বীরপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করে।
শেষ পর্যন্ত রবিবার রাতে বীরপাড়া থানায় প্রদীপের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা। পুলিশ মহিলার মেডিক্যাল টেস্ট করালে ধর্ষণের প্রমাণও পাওয়া যায়।
এরই মধ্যে সোমবার সকালে বীরপাড়া হাসপাতালে প্রদীপের মৃত্যু হয়। নির্যাতিতার মেয়ের বিরুদ্ধে পুলিশে খুনের পাল্টা অভিযোগ করে ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রদীপের ছেলে। এর পরেই ওই তরুণীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগ এনেছে পুলিশ।
গোটা ঘটনার জেরে আলিপুরদুয়ারে সাধারণ মানুষের মধ্যেও মারাত্মক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। মায়ের সম্মানরক্ষায় তরুণী যা করেছেন, তাতে তাঁকে সমর্থনই করছেন সাধারণ মানুষ। দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক দলের নেতারা তরুণীর পাশেই রয়েছেন। স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী সীমা চৌধুরী বলেন, ‘একজন মেয়ে, মা হিসেবে এই ঘটনায় শিউরে উঠছি। মায়ের চরম সর্বনাশ দেখে কেউ চুপ করে থাকতে পারে না।
ওই তরুণীর ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। আমি পুলিশকর্তাদের কাছে বিষয়টি মানবিক দিক দিয়ে দেখে তরুণীকে রক্ষা করার আবেদন জানাচ্ছি।’
আর বীরপাড়া থানায় বসে ওই তরুণী নিজে বলেন, ‘আমার সামনে অন্য কোনও পথ খোলা ছিল না। ওই ঘটনা চোখে দেখার আগে আমার যদি মৃত্যু হতো, তাহলে বেঁচে যেতাম। খুন করে আমার এতটুকু আফশোস নেই। পুলিশ যে সাজা দেবে মাথা পেতে নেব।’
অভিযুক্ত প্রদীপ ওঁরাওয়ের ছেলে জনার অবশ্য অভিযোগ, তাঁর বাবাকে ইচ্ছাকৃতভাবে খুন করা হয়েছে। যদিও ওই বাগানেরই বাসিন্দা নির্যাতিতা মহিলার প্রতিবেশী নিশা ওঁরাও তরুণীর পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর দাবি, এর আগেও মৃত প্রদীপ অনেক মহিলাকে উত্যক্ত করেছে।
আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘এই ঘটনায় ধর্ষণ এবং খুনের দু’টি অভিযোগই দায়ের হয়েছে। আমরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছি। এটুকু বলতে পারি, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তরুণীর বিষয়টি বিচার করা হবে।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন