জমি খাইছে অহন বাড়িডাও খাইবো
‘এই হানে আমার ৪০ কাডা জমি আছিল। ৩/৪ বছরে ব্রহ্মপুত্র হেই জমি সবডাই খাইছে। অহন পরের জমিতে কাম করি। পরিবার লইয়্যা খাইতে-লইতে কষ্ট হয়। নদ যেমনে ভাঙতাছে মনে অয় আমার বাড়িডাও খাইবো।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বললেন নদভাঙনে সর্বশান্ত হওয়া ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ভাংনামারী ইউনিয়নের খানপাড়া গ্রামের মৃত মাহমুদ আলী ছেলে কৃষক আব্দুল হেকিম। ১১ সদস্যের পরিবার নিয়ে এক সময়ের স্বচ্ছল কৃষক হেকিম এখন অসহায়।
বয়রাবাজারের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে রুস্তম খান (৭০) বলেন, ‘নদে ভাঙ্গন দিলেই গেরামে সাংবাদিক আইবো। নৌকায় উইঠ্যা ফডো তুলবো। হেরফর পেপারে দিব। কামের কাম তো কিচ্ছুই হয় না। ভাঙন ঠেহানির লেইগ্যা কেউ কিছু করে না।’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, ‘ভাঙ্গন লইয়্যা কি খবর লেহেন, সরকারের কান পর্যন্ত যায় না।’
ভাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল ইসলামের স্ত্রী তাসলিমা খাতুন (৩৫) বলেন, ‘বৎসর দুয়েক আগেও বাড়ি থেইক্যা ব্রহ্মপুত্র দেড় মাইল দূরে আছিল। পরে ভাঙতে ভাঙতে আর হুশ নাই। জমি, বাড়ি, রাস্তা খাইয়্যা ব্রহ্মপুত্র অহন আমার ঘরের দুয়ারে আইয়্যা পড়ছে। ঘরডা ডুইব্যা গেলে স্বামী দুই সন্তান লইয়্যা কই গিয়া দাঁড়ামু?’
বাড়ি বিলীন হওয়ার আতঙ্ক শুধু হেকিম, রুস্তুম ও তাসলিমার নয়, ভাংনামারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ তীরঘেঁষা প্রায় ১০টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার এখন নদের গর্ভে বাড়ি বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় আছেন।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে গেছে, এ বছর বর্ষার শুরুতেই ভাটিপাড়া, উজান কাশিয়ারচর, বয়রা, খোদাবক্সপুর, দূর্বাচর, চরভাবখালী, গজারিপাড়া, খুলিয়ারচর, ভোলার চরসহ ৯টি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। শত শত একর ফসলি জমিসহ রাস্ত-ঘাট, ঘর-বাড়ি, আম, কাঁঠাল, পেয়ারা বাগান, ব্রিজ কালর্ভাট বিলীন হয়ে গেছে নদের বুকে। নদে বিলীনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো অনেক মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ ও ঝুঁকিতে রয়েছে উজান কাশিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে আছেন ভাটিপাড়া, বয়রা ও উজারকাশিয়ারচর গ্রামের বাসিন্দারা। প্রতিদিনই এই গ্রামের ফসলি জমি ও বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অনেকই বাড়ি-ঘর ও গাছ-পালা সরিয়ে নিচ্ছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, শুকনা মওসুমে মৃত ব্রহ্মপুত্র বর্ষায় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। এরমধ্যে গত কয়েক বছরে নদ ভাঙনে ইউনিয়নের সহস্রাধিক কৃষক জমি-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। প্রতি বছর বর্ষার শুরুতেই নদে ভাঙন দেখা দিলেও প্রশাসনের পক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। রাজনৈতিক নেতারা সব সময় বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও কেউ আর পরে কোনো খোঁজ-খবর নেয় না। ৩ বছর আগে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে নদে বাঁধ নির্মাণ করলেও পরের বছর তা নদে বিলীন হয়ে যায়। এ বছর বর্ষার শুরুতেই নদে ভাঙন শুরু হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাঙন ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে আভিযোগ আছে।
উজান কাশিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হালিমা খাতুন বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ৩২৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদ ও বিদ্যালয়ের মাঝে দূরত্ব মাত্র একশ গজ। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ভাঙনের কবলে পড়ে অচিরেই বিদ্যালয়টি নদে বিলীন হতে পারে।’
ভাংনামারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিজুন নূর খোকা বলেন, ‘বর্ষার শুরুতেই ব্রহ্মপুত্র নদঘেঁষা গ্রামগুলোতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অচিরেই ভাঙন রোধে পদক্ষেপ না নিলে এই ইউনিয়নের ভাটিপাড়া, উজান কাশিয়ারচর ও বয়রাসহ কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণ নদে বিলীন হয়ে যাবে।’
ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইউনুস আলী বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় এমপি মহোদয়ের ডিও লেটার পেলেই উদ্যোগ নেয়া হবে।’ বাংলামেইল
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন