জরিপ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট ভোটাররা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে বলে “জনগণের নির্বাচন ভাবনা: ফেব্রুয়ারি-মার্চ ২০২৫” শীর্ষক এক জরিপে তুলে ধরা হয়েছে। জরিপটি পরিচালনা করেছে ইনোভিশন কনসালটিং নামে একটি সংস্থা। এতে দেশের ৬৪টি জেলার ১০,৬৯৬ জন ভোটার অংশগ্রহণ করেছিলেন। মোট ভোটারের মধ্যে ৯,৮২৩ জন বিভিন্ন পেশার মানুষ ও ৮৭৩ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল- নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি দমন। তবে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের মতো বিষয়গুলো জনগণের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও সরকারের অপূর্ণ প্রতিশ্রুতির কারণে জনমনে হতাশা তৈরি হয়েছে।
নমুনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে- ৭৭% অংশগ্রহণকারী গ্রামাঞ্চলের এবং ২৩% শহরাঞ্চলের বাসিন্দা। লিঙ্গভিত্তিক বণ্টন অনুসারে- ৫৫% পুরুষ ও ৪৫% নারী ছিলেন।
প্রজন্মভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাসে ৩৬% ছিল জেনারেশন জেড, ৩৪% মিলেনিয়াল, ১৮% জেনারেশন এক্স, ৮% বুমার্স ২, ৩% বুমার্স এবং ১% পোস্ট ওয়ার প্রজন্ম। ধর্মীয় বণ্টনে ৮৯% মুসলিম, ১০% হিন্দু এবং ১% খ্রিস্টান ছিলেন। জাতিগতভাবে ৯৮% অংশগ্রহণকারী বাঙালি ছিলেন।
ভৌগোলিক দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ভোটার ঢাকা বিভাগের ২৬%, এরপর চট্টগ্রাম ১৯%, রাজশাহী ১৩%, খুলনা ১২%, রংপুর ১১%, ময়মনসিংহ ৭%, সিলেট ৬% এবং বরিশালের ৬% ছিলেন।
প্রত্যাশা বনাম বাস্তবতা
জরিপ অনুযায়ী, জনগণের প্রধান প্রত্যাশা ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি। তবে সংস্কারমূলক এজেন্ডাগুলো যেমন, রাজনৈতিক সংস্কার এবং সাংবিধানিক পরিবর্তন তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে অংশগ্রহণকারীরা মত দিয়েছেন।
ভোটারদের মতে, তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। মাত্র ২.৬২% মানুষ মনে করে সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। আর ৫৫.০৫% একেবারেই সন্তুষ্ট নয়।
৫৮.২৮% ভোটার মনে করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ৭৪.২১% বিশ্বাস করে কর্মসংস্থান পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি। এছাড়া ৬৮% ভোটার মনে করে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ৪১% গত ছয় মাসে চাঁদাবাজি বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
প্রধানত অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে- যেমন দুর্নীতি হ্রাস, নির্বাচন-বান্ধব পরিবেশ তৈরি এবং ব্যবসায়িক পরিস্থিতির উন্নয়নসহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি বলে মনে করেন ভোটাররা।
ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে ভোটারদের চাওয়া
ভবিষ্যৎ সরকার সম্পর্কে ভোটারদের প্রধান প্রত্যাশাগুলোর মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন। এছাড়া কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও সরকারি পরিষেবায় দুর্নীতি হ্রাস গুরুত্বপূর্ণ দাবি হিসেবে উঠে এসেছে। রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কার তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে জনগণের মূল দাবি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত।
জরিপ অনুযায়ী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমে জনসাধারণকে হতাশ করেছে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে।
আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ স্পষ্ট- মূল্যস্ফীতি, দুর্নীতি ও বেকারত্ব মোকাবিলা না করলে তারা জনসমর্থন হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে। জরিপটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে- জনগণ বর্তমান শাসনের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। রাজনৈতিক দল ও নীতিনির্ধারকদের জন্য এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জনগণের মূল চাহিদাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

শিশুসন্তানকে ধর্ষণের খবর শুনে বাবার মৃত্যু
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে ৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এইবিস্তারিত পড়ুন

এবার ঈদে নতুন নোট বিতরণ হচ্ছে না
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাজারে নতুন নোট বিতরণ করবে নাবিস্তারিত পড়ুন

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুর শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানালো আইএসপিআর
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটি বর্তমানে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)বিস্তারিত পড়ুন