জাতিসংঘ অধিবেশনে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা নিরসনের প্রচেষ্টাই মূখ্য হয়ে উঠবে
বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর্থিক মন্দা ও যুদ্ধাবস্থার মতো জটিল মুহূর্তে বসতে যাচ্ছে জাতিংসঘের সাধারণ অধিবেশন। দুই বছরের অধিক সময় ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন, নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে বৃহৎ যুদ্ধের শংকার বিরাজমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সমবেত হতে যাচ্ছেন বিশ্বনেতৃবৃন্দ।
চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তের নিউইয়র্কে এই অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে রবিবার থেকে।
আগামী বছরগুলোতে বিশ্ব মুখোমুখি হতে পারে এমন সব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসের ফ্ল্যাগশিপ প্রচেষ্টা ‘সামিট অফ দ্য ফিউচার’ দিয়ে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি বলছে, জাতিসংঘের এই বার্ষিক অনুষ্ঠানে যোগদানকারী প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীদের উচ্চ-স্তরের আলোচ্যসূচিতে গাজা যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা, সুদানে গৃহযুদ্ধের কারণে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের মতো বেশ কিছু তিক্ত বিষয় স্থান পাবে।
সময়টাকে চ্যালেঞ্জিং এবং জটিল মনে করছেন জাতিসংঘ কর্মকর্তারাও। ওয়াশিংটনে জাতিসংঘের দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড সম্প্রতি বলেছেন, ‘অধিবেশনটি এর চেয়ে জটিল ও চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তে হতে পারতো না। মনোযোগ ও পদক্ষেপের দাবি করে এমন সংকট ও সংঘাতের তালিকা কেবল বেড়েই চলেছে বলে মনে হচ্ছে। এতে সহজেই হতাশার সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু আমাদের হতাশ হলে চলবে না।’
তবে বিশ্বব্যাপী চলমান চ্যালেঞ্জিং এই মুহূর্ত মোকাবিলায় আশা হারাচ্ছেন না জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, বিশ্ব তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের দিকে অগ্রসর হওয়া এড়াতে সক্ষম হবে।
বিশ্বব্যাপী সংঘাত ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত লাখো মানুষের কল্যাণে কূটনীতির এই বিশ্ব মিলনমেলা আদৌ কিছু অর্জন করতে পারবে কি-না তা স্পষ্ট নয়।
মধ্যপ্রাচ্য সংকটের বড় খেলোয়াড় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবং ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের রিচার্ড গোওয়ান বলেন, ‘বিশ্বনেতৃবৃন্দের বক্তব্য বিবেচনায় নিলে— স্পষ্টতই এই সংঘাতগুলোর মধ্যে গাজা পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে।’
তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পূর্ব-নির্ধারিত কূটনৈতিক বক্তৃতা ও দৃষ্টিভঙ্গি আসলে বাস্তব পরিস্থিতিতে তেমন বড় কোনো বদল ঘটাবে না। এরজন্য নতুন করে ভাবতে হবে।’
নেতানিয়াহু সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এএফপি উল্লেখ করেছে— গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়, এতে ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলির প্রাণহানি ঘটে।
অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৪১ হাজার ২৭২ জনেরও বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিন নাগরিক শহীদ হয়েছে। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই সংঘর্ষ আরও ব্যাপক আকারে লেবাননে ছড়িয়ে পড়তে পারে। চলতি সপ্তাহে হিজবুল্লাহর শক্তিশালী ঘাঁটিতে বেশ কয়েকটি মারাত্মক বিস্ফোরণ ঘটেছে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা তৎপরতাকে এরজন্য দায়ী করা হলেও ইসরায়েল এই হামলার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
বিশ্বনেতৃবৃন্দ সামনে এগিয়ে যেতে সবচেয়ে গুরুতর সংঘাতসমূহ কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে একটি সমঝোতায় উপনীত হতে একত্রিত হবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিবিড় আলোচনা এবং বিশ্বনেতাদের ‘সাহস’ দেখাতে গুতেরেসের আহ্বান সত্ত্বেও পর্যবেক্ষকরা সমঝোতার খসড়া টেক্সটটিতে উচ্চাকাঙ্ক্ষার ঘাটতি রয়েছে বলে তীব্র সমালোচনা করছেন।
একজন কূটনীতিক বলেছেন, ঝুঁকিগুলোর অন্যতম- এবং ঝুঁকির চেয়েও বেশি- হলো যে ‘ভবিষ্যতের শীর্ষ সম্মেলনটিকে’ ‘অতীতের শীর্ষ সম্মেলনের’ মতোই দেখাতে পারে এবং সর্বোত্তম পরিস্থিতিতে ‘বর্তমানের শীর্ষ সম্মেলনের’ বেশি কিছু মনে নাও হতে পারে।
গুতেরেস এই শীর্ষ সম্মেলনের গুরুত্ব রয়েছে বলে জোর দিয়ে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করতে আমাদের সক্ষমতার চেয়েও দ্রুত এগিয়ে চলেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা ভূ-রাজনৈতিক বিভাজনকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে দেখছি এবং দেখতে পাচ্ছি, শুধু ইউক্রেন, গাজা, সুদানে নয়, এর বাইরেও সংঘাত নিয়ন্ত্রণের সীমা ছাড়াচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন, অসমতা আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে… আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো মোটেই এর সঙ্গে তাল মিলাতে পারছে না।’
আইসিআরসির জাতিসংঘের প্রতিনিধি ল্যাটিটিয়া কোর্তোয়া বলেছেন, সংঘাত ‘পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উদ্দেশ্য’ হিসাবে নয়, ‘এখনই’ মোকাবিলা করা অত্যাবশ্যক।
এ শীর্ষ সম্মেলনের পর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের উচ্চ-স্তরের সপ্তাহ শুরু হবে। জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্র এতে ভাষণ দেবে। শুরু হবে ব্রাজিলকে দিয়ে। এর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পালা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এতে ভাষণ দেবেন। তিনি অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে বক্তর্য রাখতে পারেন।
অধিবেশনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ভাষণ দেবেন। তিনি সম্প্রতি জুলাই বিপ্লবপরবর্তী বাংলাদেশে, বিপ্লাবের প্রেক্ষাপট, দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও পূর্বের সরকারের স্বৈরাচারী শাসন নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিক ধারণা করা হচ্ছে, চীন ও রাশিয়ার নেতারা বিগত বছরগুলোর মতো অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকবেন। তবে ব্রিটেনের কেয়ার স্টারমার, ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ব্রাজিলের লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা উপস্থিত থাকবেন।
২০২৩ সালের অধিবেশনে ইউক্রেনের জেলেনস্কি তারকা আকর্ষণ ছিলেন। একজন কূটনীতিক বলেন, এই বছর স্পটলাইটে থাকতে তাকে বেশ বেগ পেতে হবে। তবে ইতোমধ্যে আলোচিত ‘বিজয়ের পরিকল্পনা’ নিয়ে তিনি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবেন এটা বেশ স্পষ্ট।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন