জাতীয় পার্টিতে হচ্ছেটা কী
১৯৮২ সালে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকেই পূর্বসূরী জিয়ার মতো একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কাজ শুরু করেন হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। অবশেষে ১৯৮৬ সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে এসে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠন করেন জাতীয় পার্টি।
ভিন্ন ভিন্ন দলের নেতাকর্মী নিয়ে গঠিত জাতীয় পার্টি বরাবরই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভুগেছে। ভুগছে এখনো। একাধিকবার ভাঙন দেখা জা.পা আবার ভাঙনের মুখে বলে অনেকে মনে করছেন।
রোববার রাতে রংপুরে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন এরশাদ। এরপর এরশাদের অনপস্থিতিতে সোমবার তার স্ত্রী রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন ঘোষণা করে দলের একাংশ।
আর মঙ্গলবার তা প্রত্যাখান করে মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুকে অব্যাহতি দিয়ে রুহুল আমিন হাওলাদারকে আবার মহাসচিব হিসেবে ঘোষণা করেন এরশাদ।
১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি গঠনের ঘোষণায় বলা হয়েছিলো ‘দেশের সকল গণতন্ত্রকামী জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক শক্তিগুলোর বিভক্তির প্রবণতা কাটিয়ে একটি একক রাজনৈতিক দলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকে জাতীয় পার্টি গঠন করা হয়েছে।’
কিন্তু, দেখা যাচ্ছে আগের মতো সেই ঘোষণার ঠিক উল্টো ব্যাপার ঘটছে এখন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের শরিক জাতীয় পার্টি একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করছে। সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছেন রওশন এরশাদ। দল থেকে মন্ত্রীও আছেন কয়েকজন।
আর দলের চেয়ারম্যান এরশাদ নিজেই প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ক্ষমতা ভাগাভাগির জের ধরে আগে যেমন জাতীয় পার্টিতে ভাঙন ধরেছিলো, স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বে আবারও সেই একই টালমাটাল অবস্থায় দলটি।
টানা ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার পর জনগণের প্রবল আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এরশাদ। এর পর থেকেই কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে কারাগারে থেকে পাঁচটি আসনে জয় লাভ করলেও অন্তরীণই থাকতে হয় এরশাদকে। তবে নানা সমস্যা ও চাপের মুখেও একত্রিত ছিলো জাতীয় পার্টি।
এরশাদের জাতীয় পার্টিতে প্রথম বড় ধরনের ভাঙন ধরে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বের হয়ে আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করলে। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সরকার গঠনের সময় জাতীয় পার্টি প্রথমে তাদের সমর্থন দিলেও পরে চারদলীয় জোটে চলে যায়। মন্ত্রী থাকা নিয়ে সেসময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এরশাদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টি (জেপি) নামে নতুন দল গঠন করেন।
২০০১ সালের নির্বাচনের আগে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে আরেক দফা ভাঙন ধরে। নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টি (বিজেপি) নামে আরেকটি দল গঠন করে এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অংশ হয়ে নির্বাচনে যায়। চারদলীয় সেই জোট এখন ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়েছে এবং বর্তমানে বিজেপির নেতৃত্বে আছেন আন্দালিব রহমান পার্থ।
তবে এই অংশের ভেতরও আরেকটি ভাঙন আছে। মন্ত্রিত্ব নিয়ে ঝামেলার একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব এম এ মতিন আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করেন।
সর্বশেষ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে বড় ধরনের ভাঙন ধরান কাজী জাফর আহমেদ। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে কাজী জাফর এরশাদকে ছেড়ে আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করে বিএনপি-জোটে যোগ দেন। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দলের বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন জাতীয় পার্টির ঘোষণা দেন কাজী জাফর। একই সঙ্গে তিনি এরশাদকে বহিষ্কারেরও ঘোষণা দেন।
এর আগে এক এগারোর সময় জাতীয় পার্টি দুটি অংশে বিভক্ত হয়েছিল, পরে অবশ্য এ দুটি অংশই এরশাদের নেতৃত্বে এক হয়ে যায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে ঘোলাটে পরিস্থিতির মধ্যে জাতীয় পার্টিতে এরশাদ ও রওশনকে কেন্দ্র করে দলে যে দুটি শিবির তৈরি হয় সেটাই এখন প্রকাশ্য।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন