জানুন অষ্টিওপোরোসিসের ঘরোয়া কিছু প্রতিকার
বর্তমানে শরীরের ব্যথাবেদনায় ভোগা বেশীরভাগ মানুষেরই সাধারণ একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শরীরের হাড়ের ক্ষয়ের কারণেই এ ধরণের ব্যথায় ভোগে মানুষ। অস্থি বা হাড় হচ্ছে জীবন্ত টিস্যু যা ক্রমাগত শোষিত এবং প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের হাড়ের ভর ও ঘনত্ব কমতে থাকে। এর ফলে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে – যাকে অষ্টিওপোরোসিস বলে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বিদ্যমান হাড়ের গঠনের সাথে নতুন হাড়ের গঠনের প্রক্রিয়াটি ধীর গতির হতে থাকে।
নারী-পুরুষ উভয়েরই অষ্টিওপোরোসিস হতে পারে। তবে মেনোপোজ পরবর্তী সময়ে ইস্ট্রোজেনের উৎপাদন কমে যায় বলে নারীদের ক্ষেত্রেই বেশি হয়ে থাকে অষ্টিওপোরোসিস। এছাড়াও পুষ্টির ঘাটতি, পারিবারিক ইতিহাস, শারীরিক অসক্রিয়তা, ধূমপান, ঔষধ, কম ওজন, অত্যন্ত সক্রিয় থাইরয়েড গ্ল্যান্ড, প্যারাথাইরয়েড গ্ল্যান্ড ও এড্রেনাল গ্ল্যান্ড ইত্যাদি কারণগুলোও অষ্টিওপোরোসিস হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে হাড় এতোটাই ভঙ্গুর হয়ে যায় যে সামান্য পড়ে যাওয়ার ফলেও হাড়ে ফাটল হতে পারে। শেষ পর্যায়ে পিঠে ব্যথা, উচ্চতা কমে যাওয়া, কুঁজো হয়ে যাওয়া এবং চলাচলের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা হতে দেখা যায়।
যদি আপনার অষ্টিওপোরোসিস হয়ে থাকে বা হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় তাহলে খাদ্যাভ্যাস ও জীবন-যাপনের প্রণালীর পরিবর্তন করা প্রয়োজন রোগের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করার জন্য। এর পাশাপাশি আপনার হাড়কে সুস্থ ও শক্তিশালী করার জন্য কিছু প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে নিই অস্টিওপোরোসিসের ঘরোয়া প্রতিকারের বিষয়ে।
১। আলুবোখারা
প্রতিদিন আলুবোখারা খাওয়া অষ্টিওপোরোসিস হওয়া এবং হাড়ের ফাটল ধরাকে প্রতিহত করে। ফ্লোরিডার ষ্টেট ইউনিভার্সিটির করা এক গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি ২০১১ সালে ব্রিটিশ জার্নাল অফ নিউট্রিশনে প্রকাশিত হয়। আলুবোখারা হাড়ের জন্য ভালো কারণ এতে উচ্চ মাত্রায় পলিফেনল থাকে, এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হাড়ের ক্ষয় কমতে সাহায্য করে। এছাড়াও আলুবোখারা বোরন ও কপারের ভালো উৎস। এই দুটি খনিজ হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২। ভিনেগার
হাড়কে শক্তিশালী রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে খনিজ গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, বিশেষ করে ক্যালসিয়াম। হাড়ের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম যা ক্রমাগত ঘাটতি পূরণের কাজ করে। ভিনেগার ক্যালসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত। বিশ্বাস করা হয় যে, আমরা অন্য যে খাবার খাই তার থেকে ক্যালসিয়াম শোষণের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ভিনেগার। তাই সালাদে ভিনেগার মেশাতে ভুলবেন না।
৩। ধূমপান বন্ধ করুন
ধূমপানের ফলে শরীরে কারসিনোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। নারীদের ক্ষেত্রে ধূমপানের ফলে মেনোপোজ দ্রুত হয়, যা অষ্টিওপোরোসিস হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তাই ধুমপানের অভ্যাস থাকলে তা আজই ত্যাগ করার চেষ্টা করুন।
৪। অনেক বেশি ওজন কমাবেন না
স্থূলতা অন্যান্য রোগ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু শরীরে কিছুটা ফ্যাট থাকা ভালো। চূড়ান্ত রকমের শুকনো মানুষদের বিশেষ করে যারা কোনো ধরণের ইটিং ডিজঅর্ডারে ভোগেন তাদের অকালে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাই শরীরের স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।
৫। নারিকেল তেল
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় যানা গেছে যে, ভার্জিন নারিকেল তেল ইস্ট্রোজেনের ঘাটতির প্রভাবের বিপরীতে কাজ করে। নারিকেল তেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হাড়ের গঠন ঠিক রাখতে এবং হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের শোষণেও সাহায্য করে নারিকেল তেল।
৬। ফসফরাস যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
উচ্চমাত্রার ফসফরাস যুক্ত খাবার যেমন- লাল মাংস, সফট ড্রিংক এবং ফসফেট যুক্ত ফুড অ্যাডিটিভস ইত্যাদি খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিৎ। কারণ ফসফরাস হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও অনেকবেশি অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন গ্রহণ করা উচিৎ নয়। এরা ক্যালসিয়ামের শোষণকে কমিয়ে দেয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
রেড মিট খাওয়ার আগে কিছু পরামর্শ জেনে নিন
কোরবানি ঈদে বেশ কয়েকদিন টানা খাওয়া হয় গরু বা খাসিরবিস্তারিত পড়ুন
জাপান ও ইউরোপে বিরল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ
জাপানে, একটি বিরল “মাংস খাওয়া ব্যাকটেরিয়া” এর কারণে এক রোগবিস্তারিত পড়ুন