জামাল ভূঁইয়া কে ভালোবেসে নাম দিয়েছেন বাংলার মাসচেরানো
জামালকে ভক্তরা ভালোবেসে নাম দিয়েছেন বাংলার মাসচেরানো! ফাইল ছবিশিরোনাম পড়ে হয়তো পাঠকদের ভ্রু কুঁচকে গেছে! হাভিয়ের মাসচেরানোর সঙ্গে জামাল ভূঁইয়ার তুলনা! এ বাড়াবাড়ি!
তা তো অবশ্যই। কোথায় আর্জেন্টিনা আর বার্সেলোনার তারকা। আর কোথায় বাংলাদেশের একজন ফুটবলার। তুলনা কোনোভাবেই চলে না। যুক্তিতে মেলে না। কিন্তু যুক্তির রেললাইন ধরে এগোতে বয়েই গেছে সমর্থকদের। বাংলাদেশের সমর্থকেরা এরই মধ্যে ভালোবেসে জামালের নাম দিয়েছেন ‘বাংলার মাসচেরানো’।
মিলও আছে দুজনের। দুজনেরই মাথা কামানো। দুজনই খেলেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে। আর্জেন্টিনা কিংবা বার্সেলোনার হয়ে আক্রমণ ও রক্ষণভাগের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি করেন মাসচেরানো, বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়েও ঠিক সেই দায়িত্ব জামালের।
স্ট্রাইকারদের বলের জোগান দেন, পুরো মাঠ দাপিয়ে বেড়াতেও পারঙ্গম। প্রতিপক্ষের পা থেকে বল ছিনিয়ে নেওয়ার ব্যগ্রতা। প্রায় নিখুঁত স্ট্যান্ডিং ট্যাকল। যে স্লাইডিং ট্যাকলটা শিল্পের মাত্রা দিয়েছেন মাসচেরানো, জামালও সাহস করে করে ফেলেন মাঝেমধ্যেই। তবে দুজনের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল, দলের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দেওয়া। শরীরের শেষ রক্ত বিন্দু ঢেলে দেওয়া। দলকে প্রেমিকা কিংবা সন্তানের মতো ভালোবাসা।
এ কারণেই গত মৌসুমে মেসিকে ছাপিয়ে বার্সার সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন মাসচেরানো। অনেকের মতে, গত বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনার সেরা খেলোয়াড় ছিলেন মাসচেরানোই।
বাংলাদেশের প্রতি, বাংলাদেশ দলের প্রতি, লাল-সবুজ পতাকার প্রতি জামালের ভালোবাসা এরই মধ্যে সমর্থকদের মুখে মুখে। জন্ম-বেড়ে ওঠা ডেনমার্কে। কিন্তু নাড়ির টানে ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে। এ নিয়ে তাঁর নিজেরও অনেক গর্ব, ‘বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষ। আর আমি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের একজন ফুটবলার। আমি পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি, এটা ভেবেই তো আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়! বাংলাদেশের জার্সি গায়ে চড়ালে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব কারও কথা মনে থাকে না। শুধু নিজেকে উজাড় করে দিতে চেষ্টা করি। নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা যে কতটা আনন্দের-কতটা আবেগের, সেটা সুযোগ না পেলে কখনোই বুঝতাম না।’
ডেনমার্ক আর বাংলাদেশের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। কী আবহাওয়া, কী সংস্কৃতি। জামাল প্রথম যখন বাংলাদেশে এলেন, তখন এ দেশে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না কোনোভাবেই। পানিশূন্যতায় ভুগছিলেন। মসলাদার খাবার, এমনকি আমাদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের সঙ্গে জুড়ে থাকা ‘ভাত’ও খেতে পারেন না অনভ্যস্ততার কারণে। আর সেই জামাল এখন বাংলাদেশেই থাকেন বছরের বেশির ভাগ সময়জুড়ে। লিগে খেলছেন শেখ জামালের হয়ে। এখন তিনি পুরোদস্তুর বাংলাদেশি। অলস কোনো দুপুরে হয়তো ভাত খেয়ে নাক ডেকে একটা ঘুমও দিয়ে দেন দিব্যি!
কিন্তু এই মানিয়ে নেওয়ার পেছনে তাঁকে করতে হয়েছে অনেক কষ্ট, ‘আমি শীতপ্রধান দেশে খেলতাম। কিন্তু এখানে প্রচণ্ড গরম। তাই শুরুতে কষ্ট হচ্ছিল। তারপর ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হতে চেষ্টা করলাম। প্রচণ্ড পরিশ্রমের ফল পাচ্ছি হাতেনাতে। এখন গরমে খেলতে কোনো সমস্যাই হয় না। সব ঠিকঠাক করি বলেই তো পুরো মাঠ দৌড়াতে পারি!’
জামালের আগমনে বাংলাদেশ দলের চেহারাই যেন বদলে গেছে। জামালের পায়ে বল গেলেই হাততালি দিচ্ছেন দর্শকেরা। অধিনায়ক মামুনুলের পাশাপাশি তাঁকে ঘিরেই রচিত হচ্ছে সব আক্রমণ। রক্ষণের নেতাও তিনি। ক্যারিয়ারের শেষভাগে নিজেকে কোথায় দেখতে চান, এ প্রশ্নের উত্তরে জামালের কণ্ঠ কিছুটা ধরে গেল যেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা পেতে চাই। সবাই যেন আমাকে মনে রাখে। এ দেশের ফুটবল ইতিহাসে যেন টিকে থাকে আমার নাম। প্রথম প্রবাসী বাংলাদেশি হিসেবে আমি যেভাবে পরিশ্রম করে স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়েছি, তা যেন অনুসরণ করে বাকিরাও। এ দেশের ফুটবলকে আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে চাই। এশিয়া কাপে খেলতে চাই, সম্ভব হলে বিশ্বকাপেও!’
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া ফুটবলার তিনি। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে খেলেও কেন এত টাকা পান, তার প্রমাণ দিয়েছেন ভুটানে আয়োজিত কিংস কাপে। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন। হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কাপের সেরা খেলোয়াড়ও। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার যে তিনি, এই সার্টিফিকেট দিয়ে গেছেন সার্বিয়ান কোচ।
২৫ বছর বয়সী জামাল এরই মধ্যে জেনে গেছেন ভক্তরা তাঁকে ভালোবেসে ‘বাংলার মাসচেরানো’ নামে ডাকতে শুরু করেছে। এটা তিনি উপভোগ করছেন। তবে চমকে দিয়ে জানালেন, ‘মাসচেরানো নয়, আমি লুকা মডরিচ আর টনি ক্রুসের ভক্ত। রোল মডেল হিসেবে মানি ডেনমার্কের মাইকেল লাউড্রপকে। হ্যাঁ, মাসচেরানোর সঙ্গে আমার খেলার মিল আছে। আমরা দেখতেও বোধ হয় তো একই রকম।’ বলেই হাসলেন।
মাঠে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত কোনটি? যখন তাঁর পায়ে বল গেলেই সমর্থকেরা জামাল-জামাল বলে চিৎকার করে ওঠেন। তার চেয়েও ভালো লাগে যখন কোরাস স্লোগান ওঠে—‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ!’
বঙ্গবন্ধু কাপটা ভীষণ উপভোগ করেছেন গ্যালারি উপচানো দর্শক ছিল বলে। কিন্তু গত কয়েকটি ম্যাচে দর্শক হয়নি সেভাবে। আজ বাংলাদেশ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে খেলতে নামছে। জামালের আশা, আজ গ্যালারি উপচে পড়বে। আজও কোরাস স্লোগানে শরীরে শিহরণ জাগবে—‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ!’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন