জামায়াত-বিএনপির কাছে আ.লীগের মনোনয়নপত্র বিক্রি!
সরকার যখন যুদ্বাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াতে ইসলামী দলকে নিষিদ্ধ এবং বিএনপির লাগাতার সন্ত্রাস নাশকতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ঠিক তখনই সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপি সদস্যদের কাছে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
একই সঙ্গে প্রার্থী মনোনয়নে বাণিজ্য, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে একক সিদ্ধান্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের বিরুদ্ধে জেলা কমিটির কাছে তালিকা পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।
দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের নীতিমালা নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে পাঁচটি সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করা হয়।
১. জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক এবং যে ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই ইউনিয়নের নেতাদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনী বোর্ড গঠিত হবে।
২. ইউনিয়ন কমিটি ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের সঙ্গে বর্ধিত সভা করে একজন প্রার্থীর নাম সুপারিশ করবে।
৩. সেই সুপারিশকৃত নাম উল্লেখিত জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচনী বোর্ড (৬ জনের নাম ও স্বাক্ষর) প্রার্থী চূড়ান্ত করে পত্রপ্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে (বাড়ি-৫১/এ.সড়ক-৩/এ,ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা) দপ্তর বরাবর প্রেরণ করবে।
৪. মনোনীত প্রার্থীর নাম (ভোটার নং ১২ ডিজিট) এবং নির্বাচনী আইন, নীতিমালা ও বিধিমালা অনুর্যায়ী সকল তথ্য প্রার্থীর নামের সঙ্গে প্রেরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রার্থীর ভোটার আইডির ফটোকপি অবশ্যই প্রেরণ করতে হবে,যা বাধ্যতামূলক।
৫. স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচিত স্থানীয় সরকার/ইউনিয়ন পরিষদ মনোনয়নবোর্ড চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম ও প্রতীক বরাদ্দ করবে। এই পত্রটি জেলা উপজেলাসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জানাতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় এ সিদ্ধান্তের পর উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ১০টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ৫৩ প্রার্থীর কাছে ৫ হাজার টাকা করে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘কেন্দ্রের ওই চিঠি এবং সিদ্ধান্ত উপজেলা কমিটি কাউকে জানায়নি। এমনকি উপজেলা কমিটির কাউকে নিয়ে কোনো সভাও করেনি। পার্শ্ববর্তী শাহজাদপুর উপজেলা প্রার্থী মনোনয়নে কোনো টাকা না নিলেও উল্লাপাড়ায় ফরমের দাম পাঁচ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। তৃণমুল নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই ৫৩টি আবেদন জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই আবেদনপত্রের মধ্যে জামায়াত সমর্থক আলতাফ হোসেন ও বিএনপি সদস্য রফিকুল ইসলাম ওরফে রতন নামে দুজনের আবেদনও রয়েছে।
বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘এই ইউনিয়নে জামায়াতের একজন কট্টর সদস্য আলতাফ হোসেনকে বিশদিন আগে শ্রমিক লীগে যোগদান করিয়ে তার আবেদন নিয়ে পাঠানো হয়েছে। এই প্রার্থী ২০০১ বিএনপি ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের পক্ষে সরাসরি ভোট করেছেন। এ বিষয়ে অভিযোগ দেয়া হলেও কোনো লাভ হয়নি। এলাকার শত শত নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ জানাচ্ছে। জামায়াতের কাছে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি করায় নেতাকর্মীরা চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
এছাড়াও উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়নে ইউনিয়ন বিএনপি সদস্য রফিকুল ইসলাম রতনের আবেদন করলেও তার আবেদনটি পাঠানো হয়েছে। দলীয় কতিপয় নেতাকর্মীদের হাত করে সেও দাপটের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যর ছবি দিয়ে বিলবোর্ড টাঙ্গানোসহ পোস্টার লাগিয়েছেন।
কথা হলে উল্লাপাড়া বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, রফিকুল ইসলাম রতন বেশকিছু দিন আগে ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ছিলেন। তবে সে কমিটি এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই দুজন প্রার্থী নিয়ে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য গাজী শফিকুল ইসলাম শফি জানান, আমি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তালিকার বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। এমনকি তৃণমূল নেতাদেরও নিয়ে সভা করা হয়নি। যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে বেশ কিছুদিন আগে দলীয় কার্যালয়ে গেলে আহ্বায়ক আমাকে নানা হুমকি দিয়ে অপমান অপদস্ত করে কার্যালয় থেকে বের দেয়। জামায়াত বিএনপির সদস্যদের কাছে দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি করা নিয়ে অভিযোগ তোলা হলেও তা আমলে নেয়া হয়নি। বিষয়গুলো নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ- বিভেদ ছড়িয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম জানান, প্রার্থীদের জেলা আওয়ামী লীগ থেকে তালিকা চাওয়ায় সকল আবেদনকারীদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এখনও নির্বাচন দুইমাস দেরি রয়েছে। সে কারণে চূড়ান্ত কোনো তালিকা তৈরি করা হয়নি। স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমামসহ অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হবে।
ফরম বিক্রির বিষয়ে বলেন, ‘অন্যান্য উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোনয়নে অনেক বেশি টাকা নিয়েছে। আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় মেরামত করার জন্য কিছু টাকা নিয়েছি। এটা দোষের কিছু নয়।’
বিএনপি জামায়াত সদস্যদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম রতন এক সময় বিএনপির সদস্য ছিলেন। ১ বছর আগে তিনি আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন এবং জামায়াত সমর্থক আলতাফ হোসেন গত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের যোগদান করেন। এখন সব আওয়ামী লীগের সমর্থক ও কর্মী। বিএনপি ও জামায়াতের কোনো কর্মী সমর্থকের কাছে মনোনয়নপত্র বিক্রি করা হয়নি। এখন তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থী বাছাই করবে। তারা যাকে সর্থমন দিবে তারাই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন