‘জিন্দা লাশ’ সেজে ভারতে কৃষকদের অভিনব প্রতিবাদ
ভারতে কৃষিঋণ মওকুফ করার দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকরা আগামী সপ্তাহে ‘আন্তর্জাতিক ইয়োগা দিবসে’ অভিনব পন্থায় প্রতিবাদ জানানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন।
তারা ঠিক করেছেন, সেদিন যে যেখানে পারবেন শুধুমাত্র ‘শবাসন’ করে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবেন – কারণ তাদের অবস্থা কোনও মৃত মানুষের চেয়ে মোটেও ভাল নয়।
ভারতের বর্তমান সরকার বিরাট ধূমধাম করে প্রতি বছরের ২১শে জুন আন্তর্জাতিক ইয়োগা দিবস পালন করে থাকে – আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে যোগাসন করে তাতে নেতৃত্ব দেন।
সেই দিনে সারা দেশ জুড়ে কৃষকদের শবাসন সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
গত বেশ কিছুদিন ধরে মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র-সহ ভারতের নানা প্রান্তে যে কৃষক বিক্ষোভ চলছে, তার নেতৃস্থানীয় ভূমিকাতে আছে রাষ্ট্রীয় কিষাণ মজদুর সঙ্ঘ।
সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিয়ে তারা স্থির করেছে, আন্দোলনের অংশ হিসেবে আসন্ন ইয়োগা দিবসে তাদের প্রতিবাদের অস্ত্রও হবে যোগাসন – তবে কৃষকরা শুধু শবাসনই করবেন।
সঙ্ঘের জাতীয় মুখপাত্র সুনীল গৌর বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “ইয়োগা দিবসে আমরা দেশের সব কৃষককে আহ্বান জানাচ্ছি তারা রাস্তার ধারে, বাসস্ট্যান্ডে বা মান্ডিতে – যেখানেই সুযোগ পাবেন সেখানেই যেন যোগাসন করেন। আর একটাই আসন করবেন তারা – সেটা হল মৃত মানুষের ভঙ্গীতে শবাসন।”
“অন্য কোনও আসন তারা জানেনও না, আর তাদের অবস্থাও তো জীবন্ত লাশের মতোই – কাজেই ইয়োগা দিবসে এটাই হবে আমাদের প্রতিবাদ।”
ইয়োগা দিবসের প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ হবে বলে কথা দিলেও কিষাণ মজদুর সঙ্ঘের নেতারা অবশ্য তার আগেই সারা দেশে সড়ক ও রেল অবরোধ করারও কর্মসূচী নিয়েছেন আগামী ১৬ই জুন।
ভোপাল থেকে গজেন্দ্র টোকাস বলছিলেন, “সে দিন জাতীয় সড়ক থেকে শুরু করে সব বড় বড় রাস্তা আমাদের কৃষকরা তিন ঘন্টা ধরে চাক্কা জ্যাম করে রাখবেন। হরিয়ানার মতো যে সব জায়গায় রেলপথ বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে করা হবে রেল অবরোধ। আগামী সাত-আট মাসের জন্য, সেই ৩০শে জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের প্রতিবাদের সব পরিকল্পনাই স্থির হয়ে আছে।”
এই আন্দোলনরত কৃষকদের প্রধান দুটো দাবি হল তাদের ঋণ মাফ করতে হবে আর তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সরকারকে কিনে নিতে হবে খরচের চেয়ে বাড়তি ৫০ শতাংশ মূল্য দিয়ে।
কৃষি-বিশেষজ্ঞ যোগেন্দ্র যাদবের মতে, ভারতে বাম্পার ফলন হলেও কৃষিকাজ আর লাভজনক নয় বলেই কিষাণরা শবাসনের মতো এমন চরম প্রতিবাদের রাস্তা বেছে নিচ্ছেন।
তিনি বলছেন, “কৃষকের উপার্জন নেই বলেই তাদের আজ এই অসহায় অবস্থা। কৃষিকাজে মুনাফা তো নেইই, বরং কৃষকরা ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছেন – এবং কোনও কৃষকই চান না তার ছেলেরাও কৃষক হোক।”
“আজ মধ্যপ্রদেশ বা মহারাষ্ট্রে যে আন্দোলন হচ্ছে তা কর্নাটক বা তামিলনাডুতে শুরু হলেও আমি অবাক হতাম না। আর মনে রাখতে হবে, এমন সময় এই আন্দোলন হচ্ছে যখন ফলন কিন্তু দারুণ হয়েছে – মনসুনও খুব ভাল ছিল এ বছরে।”
কৃষকরা যে ফসলের উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না তা স্বীকার করছে সরকারও – তবে মধ্যপ্রদেশে কৃষকদের আন্দোলনে তারা বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র দেখতেও ভুলছেন না।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু যেমন বলছেন, “মধ্যপ্রদেশে নানা কারণেই কৃষি প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাঙ্ঘাতিক, উৎপাদন বেড়েছে কুড়ি শতাংশেরও বেশি – এবং ফসল উদ্বৃত্ত হয়েছে। ফলে সঠিক দাম না-পেয়ে কৃষকরা কোনও কোনও এলাকায় ক্ষুব্ধ ছিলেন, কিন্তু সেটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগিয়ে কংগ্রেস যেভাবে ফায়দা তুলতে চেয়েছে তা খুব দুর্ভাগ্যজনক।”
কংগ্রেসের ভূমিকা এখানে থাকুক বা না-থাকুক, যেভাবে গত সপ্তাহে মধ্যপ্রদেশে পুলিশের গুলিতে ছজন কৃষক প্রাণ হারিয়েছেন বা গত চার বছরে দেশ জুড়ে বারো হাজারেরও বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন – তাতে শবাসন করাটাই তাদের এখন প্রতিবাদের সেরা রাস্তা বলে মনে করছে কৃষক সংগঠনগুলো।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন