জেনিটাল টিউবারকিউলোসিসের বিপদ ও প্রতিকার

ইউটেরাস আর ফ্যালপিয়ান টিউবে টিউবারকিউলোসিসের ব্যাকেরিয়া থেকে হতে পারে বন্ধ্যাত্ব। বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা টিউবারকিউলোসিসের ব্যাকেরিয়া শুধুমাত্র ফুসফুসেই বাসা বাঁধে। তবে মেয়েদের ইউটেরাস বা ফ্যালপিয়ান টিউবেও যে এই সংক্রমণ হতে পারে, সে ব্যাপারে অনেকেই জানেন না। আর এই অজ্ঞতার কারণেই সময়মতো চিকিৎসাও করা সম্ভব হয় না জেনিটাল টিউবারকিউলোসিসের। আগেভাগে ধরা না পড়লে এর থেকে বন্ধ্যাত্ব পর্যন্ত হতে পারে।
জেনিটাল টিউবারকিউলোসিস কী ?
টিউবারকিউলোসিসের ইনফেকশনে যদি ইউটেরাস আর ফ্যালপিয়ান টিউব আক্রান্ত হয়, তাহলে সেই অসুখকে ডাক্তারি পরিভাষায় জেনিটাল টিউবারকিউলোসিস বলে। এই সংক্রমণ ব্যাকেরিয়া-জাত। মেয়েরাই এ অসুখে আক্রান্ত হন। আগে এ রোগের কথা খুব একটা শোনা না গেলেও, এখন আক্রান্তের সংখ্যা কিন্তু বাড়ছে। তবে যৌনমিলনের থেকে জেনিটাল টি.বি হয় না। শুধু জেনিটাল এরিয়াতেই নয়, শরীরের অন্য কোথাও যদি ওই ব্যাকেরিয়া থাকে তাহলে রক্তের সঙ্গে সেটি জরায়ু বা ফ্যালপিয়ান টিউবে ছড়িয়ে যেতে পারে। যেহেতু মাসিক সাইকেলের কারণে ইউটেরাসে প্রতি মাসেই রক্ত জমে থাকে, যে কোনো ব্যাকেরিয়ার বেড়ে ওঠার জন্য আদর্শ পরিবেশ এটি।
লক্ষণ :
সমস্যা হল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জেনিটাল টি.বি-র কোনো লক্ষণই থাকে না। মাঝেমধ্যে বেশি ব্লিডিং বা তলপেটে ব্যথা হতে পারে। তবে এগুলো অন্য একাধিক অসুখে হতে পারে। সেজন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগী যখন ইনফার্টিলিটির কারণে ডাক্তারের কাছে আসেন, তখন এ অসুখের ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়। যদি দেখা যায় দুদিকের টিউবে ব্লকেজের কারণে কারোর সন্তান আসতে সমস্যা হচ্ছে, তখন সেটি হয়তো কোনো সংক্রমণের কারণেই হচ্ছে। তবে ইনফেকশনের চিকিৎসা করলেই যে প্রেগনেন্সি আসবে, তা নয়। ইনফেকশনের ফলে যদি ফ্যালপিয়ান টিউবে ক্ষতি হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে প্রেগনেন্সি আসতে সমস্যা হবে।
প্রতিকার :
ডায়াগনোজ় করার জন্য হিস্টোপ্যাথোলজি আর ব্যাকেরিয়াল কালচার করা হয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রেই টি.বি না থাকলেও পরীক্ষায় টি.বি ধরা পড়তে পারে। এটি রোগীর জন্য বিভ্রান্তকর। নিশ্চিত হওয়ার জন্য পিসিআর (PCR) পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ইউটেরাসের লাইনিংয়ে টি.বির ডিএনএ পাওয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমে বলা সম্ভব রোগীর কোনোদিন ইউটেরাসে টি.বি হয়েছিল কি না। এন্ডোমেট্রিয়াম থেকে হিস্টেরেস্কোপি করা প্রয়োজন। আর সন্দেহজনক জায়গা থেকে বায়োপসি নেওয়া প্রয়োজন। বায়োপসির পরে RNA PCR করানো প্রয়োজন। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে এটি করানো দরকার। তবে মেনস্ট্রুয়াল ব্লাড থেকে DNA PCR করালে বিভ্রান্তিকর ফল পেতে পারেন। যদি টি.বি ব্যাকেরিয়া থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়, তাহলে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
চিকিৎসার কোর্স পূর্ণ হতে মোটামুটি ছয়মাস লাগে। তবে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করা একেবারেই অনুচিত এবং বিপদজনক। অনেকেই দুই-একটা ওষুধ খেয়ে বাকিগুলো আর খান না। চিকিৎসা চলাকালীন ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত ফলো আপ করাও জরুরি। চিকিৎসা তো সময়মতো করাতেই হবে, কিন্তু তার সঙ্গে প্রয়োজন সচেতনতা বাড়ানো।
জেনিটাল টি.বি প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে ইনফার্টিলিটি প্রতিরোধ করা যেতে পারে। তবে এই অসুখের একটি অত্যন্ত কমন ফল হল ইনফার্টিলিটি। এছাড়া এর সাধারণত আর বিশেষ কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। অসুখ যদি খুব বেশিই অ্যাডভান্সড স্টেজে পৌঁছে যায়, তখন সারোগেসি ছাড়া আর উপায় থাকে না। চিকিৎসা সাধারণত ওষুধ দিয়ে করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফ্যালপিয়ান টিউব খোলার জন্য সার্জারির সাহায্য নেওয়া হয়। অনেকসময় ক্যাভিটির একটা দেওয়াল আর একটা দেওয়ালের সঙ্গে জুড়ে গেলে একধরনের বিশেষ সার্জিক্যাল কাঁচি দিয়ে তাদের আলাদা করার চেষ্টা করা হয়। তবে সাফল্যের হার সার্জারির ক্ষেত্রে খুব একটা বেশি নয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন

হোটেল ঘরে বিছানার চাদর সাদা হয় কেন ?
বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথম যে বিষয়টি নজরে আসে,বিস্তারিত পড়ুন
ধনিয়া পাতার উপকারি গুণ
চিকিৎসকদের মতে, ধনে বা ধনিয়া একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার অনেকবিস্তারিত পড়ুন