জ্বালানি তেলের দাম কমেছে জানে না বাসমালিক!

দেশের বাজারে রোববার রাত ১২টার পরপরই জ্বালানি তেলের দাম প্রতিলিটারে ১০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে জনস্বার্থে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়। আরো দুই ধাপে দাম কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এর প্রকৃত সুবিধা ভোক্তারা পাবে কি না তা নিয়ে নতুন করে দেখা দিয়েছে সংশয়। কারণ বাসমালিকরা উল্টো হাস্যকর প্রশ্ন রাখছেন, জ্বালানি তেলের দাম কমেছে নাকি?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেল বাড়া কমার সঙ্গে প্রথম যে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে তা হলো পরিবহন ভাড়া। যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকে তার আগেই পরিবহন সেক্টরে ভাড়া বাড়ানোর নৈরাজ্য শুরু হয়ে যায়। তেলের দাম বাড়লে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার দোহাই দিয়ে নেয়া হয় অতিরিক্ত ভাড়া। তাছাড়া মাইলেজ বাড়িয়ে লেখার মতো প্রতারণার ঘটনাতো রয়েছেই। সব মিলিয়ে জনগণের পকেট কাটা হয় ভালোভাবেই। কিন্তু এবার জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলেও পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহল থেকে কোনো ধরনের আলোচনা নেই। ফলে জ্বালানি তেলের দাম কমার সুফল প্রকৃত পক্ষে জনগণ পাবে কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে কমেছে সেই রেশিওতে দেশের বাজারে কমানো হয়নি।
আন্তর্জাতিক বাজারের রেশিও অনুপাতে দেশের বাজারে জ্বালানির দাম কমানো উচিত। অর্থাৎ যেমন কম দামে জ্বালানি ক্রয় করা হচ্ছে ততটুকু কমিয়ে দেশের জনগণের জন্য জ্বালানি সরবরাহ করা উচিত। আসলে সরকারের ভিতর থেকে কিছু দুর্নীতিবাজ লোক এ কাজটি করছে। তারা লাভবান হবে।’
পরিবহন ভাড়া কমানো সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম যখন বাড়ে তখন সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। অথচ জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পরও পরিবহন ভাড়া কমানোর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। পরিবহন মালিকরা তো আসলে কোনো না কোনো দলের লোক। এরা হলো আরেক লোটেরা গোষ্ঠী। সুতরাং জ্বালানির তেলের দাম কমলেও জনগণ এর সুফল পাবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’
পরিবহন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, শুধু জ্বালানি তেলের দামের উপর ভিত্তি করে পরিবহন ভাড়া নির্ধারণ করা হয় না। জ্বালানি তেলের দাম কমলেও যন্ত্রপাতি, টায়ার, টিউব ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির দাম তো কমেনি। বরং এসব যন্ত্রাপাতির দাম বাড়ছেই। তাই জ্বালানি তেল কমালেও পরিবহন ভাড়া কমানোর সম্ভাবনা নেই। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম কমেছে কি না তাও অনেকের জানা নেই!
হানিফ পরিবহনের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘জ্বালানির দাম কমেছে কি না বিষয়টি আমার জানা নেই। আর পরিবহন ভাড়া কমানো হবে কি না এ সম্পর্কে এখন কিছুই বলতে পারছি না। তাছাড়া পরিবহন ভাড়াতো শুধু তেলের উপর নির্ভর করে না।’
অন্যদিকে তেলের দাম কমার পর থেকে নিজেদের মোবাইল ফোন কন্ধ করে রেখেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহসহ একাধিক নেতা।
তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকার যদি ভাড়া কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে বিআরটিসির ভাড়া কমানো হবে। তাছাড়া সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নেয় বিআরটিসি বাসগুলো।’
বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির নেতারা বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে গত রাত থেকে আমরা জ্বালানি তেল বিক্রি করছি। এখন জ্বালানি তেলের মূল্য কমায় যদি জনগণ এর সুফল না পায় তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে।
এদিকে তেলের দাম কমলেও কমেনি সিএনজির দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তেল ও সিএনজির দাম সমন্বয় হলে পরিবহন ভাড়া কমার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তেলের দাম কমিয়ে পরিবহন ভাড়াসহ অন্যান্য খাতে জনগণ তেমন একটা সুফল পাবে না। এক ধরনের নৈরাজ্যের সৃষ্টি হবে। কারণ রাজধানীর বেশির ভাগ বাস, মিনি বাসের ইঞ্জিন সিএনজিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। তেলের দাম কমলেও তারা আর ইঞ্জিন পরিবর্তন করবে না। কারণ এটা যথেষ্ট ব্যয়বহুল।
বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভারসন ওয়াকশপ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর ভূইয়া বলেন, ‘অতীতে যে কোনো সময় তেলের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সিএনজির দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই এবার তেলের দামের সঙ্গে সিএনজির দাম কমিয়ে সমন্বয় করার দাবি জানাই।’
অ্যাসোসিয়েশনের নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে। কিন্তু সিএনজির দাম কমানো হয়নি। দেশের শহর ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে সিএনজিচালিত পরিবহন চলাচল করে। ফলে তেলের দামের সঙ্গে সিএনজির একটা বৈষম্য রয়ে গেলো। যদি তেলের দামের সঙ্গে সিএনজির দাম কমিয়ে সমন্বয় করা না হয় তাহলে পরিবহন খাতে ভাড়া নিয়ে এক ধরনের নৈরাজ্যের সৃষ্টি হবে। যা সরকারের জন্য আত্মঘাতী বলেই মনে করছি।’
সাধারণ লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, কিছু কিছু সময় সুযোগ বুঝে অসাধু ব্যবসায়ীরা জনগণের পকেট কেটে নেয়। এর মধ্যে তেলের দাম সামান্য বাড়লেও তারা দ্বিগুণ ভাড়া বাড়িয়ে নেয়। তাছাড়া একস্থান থেকে অন্যস্থানের দূরত্ব নিয়েও তারা প্রতারণা করে। জনগণতো আর কোনো স্থানের দূরত্ব মেপে দেখে না। তাই যেমনি ভাবে তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাড়াসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও বাড়িয়ে দেয়। তাই এবার তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জিনিসপত্রের দামও কমানো উচিত।
শেয়ার ব্যবসায়ী সায়হাম রহমান। তিনি প্রতিদিন মহাখালী থেকে মতিঝিল এসে ট্রেড করেন। তিনি বলেন, ‘মগবাজার ফ্লাইওভার হওয়ার পর মহাখালী থেকে মতিঝিল ২০ টাকা ভাড়া নেয় কিছু পরিবহন। অথচ ওই ফ্লাইওভারে কোনো ধরনের টোল নেই। তাছাড়া এই দূরত্বে কি পরিমাণ ভাড়া নির্ধারণ করা আছে তা জানারও কোনো উপায় নেই। এমনিভাবে তেলের দাম বাড়লেও পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হয়। আর এবার তেলের দাম কমেছে অথচ ভাড়া কমানোর কোনো ধরনের আলোচনা নেই। যা খুবই দুঃখজনক। যেহেতু তেলের দাম কমানো হয়েছে তাই পরিবহন ভাড়া কমানোর দাবি জানাই।’
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘যখনই তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে তখনই পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হযেছে, তাতে জনগণকে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হয়নি। এবার প্রথম জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা পেট্রোল ডিজেল চালিত যানগুলোতে ভাড়া সমন্বয় করা হোক।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরিবহন ভাড়া সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয়। তাই সরকারের দায়িত্ব যে, জনস্বার্থে জ্বালানির দাম কমানোর পাশাপাশি সেই জনগণ যেন তার সুফল ভোগ করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা। যদি তাতে সরকার ব্যর্থ হয় তাহলে জনগণ যেমন এর সুফল থেকে বঞ্চিত হবে, ঠিক তেমনি সরকারেরও কোনো লাভ হবে ন। বরং মাঝ পথে ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো।’
উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে রোববার সন্ধ্যায় গ্যাজেট প্রকাশ করে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ। এ নির্দেশনা রাত ১২টার পর থেকে কার্যকর হয়। গেজেটে বলা হয়, নতুন দামে অকটেন ও পেট্রোলে লিটারপ্রতি কমছে ১০ টাকা, সেই হিসাবে এই দুই জ্বালানি তেলের দাম হবে যথাক্রমে ৮৯ ও ৮৬ টাকা। আর ডিজেল ও কেরোসিন দাম কমবে লিটার প্রতি ৩ টাকা, সেই হিসাবে বাজারদর হবে ৬৫ টাকা লিটার।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

নাহিদ: আওয়ামী দুঃশাসনের ভুক্তভোগীদের কাছে ৫ আগস্ট অবশ্যই দ্বিতীয় স্বাধীনতা
গত ১৬ বছর যারা আওয়ামী দুঃশাসনের ভুক্তভোগী হয়েছেন তাদের কাছেবিস্তারিত পড়ুন

দেশে গ্যাস অনুসন্ধানে মস্কোর সহযোগিতা চায় ঢাকা
রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম বাংলাদেশের সমুদ্র ও সমতল এলাকায় আরও গ্যাসবিস্তারিত পড়ুন

ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে যে আহ্বান জানালো সৌদি আরব
শেষের পথে সারাবিশ্বের মুসলমানদেরে পবিত্রতম মাস রমজান। অপেক্ষা ঈদ-উল-ফিতরের। রমজানবিস্তারিত পড়ুন