ঝাড়িদর্শন: ছেলেদের একচেটিয়া সম্পত্তি নয়
মহানগরের কথা থাক। এই সাইকেলবাজি আর মুন্নি-র দৃষ্টিপ্রসাদ লাভের ঐকান্তিক সাধনার মফস্সলি ডাকনাম ‘ঝাড়ি’। ১৯৮০-র দশকে এই বিশেষ সাবআরবান স্ল্যাংটির জন্ম, আর ১৯৯০-এর দশক ব্যেপে এর জারণ।
সেই কবিতায় কী লিখেছিলেন জয় গোস্বামী? কোন এক কিশোরীবেলায় ঝাঁকে ঝাঁকে সাইকেল-যুবকের কথা? কী যেন ছিল শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়ের সেই হৃদয় জল করে দেওয়া পদ্যে? মুন্নির বাড়ির সামনে সাইকেল ঠেকিয়ে এক পা মাটিতে রেখে যে ক্রিং বাজাত জোরে, সে তো জানতই না যে কবে মুন্নিরা এই পাড়া ছেড়ে চলে গিয়েছে। নাকি জানত সেই সাইকেল-যুবক, স-ব জানত। তবু তাকে ফিরে আসতে হত ওই বিশেষ বাড়িটির সামনে। যেন এক প্রতিবর্ত ক্রিয়া। পাভলভের সেই বিখ্যাত কুকুর আর লালা নিঃসরণের তামাদি হয়ে যাওয়া গপ্পো।
মহানগরের কথা থাক। এই সাইকেলবাজি আর মুন্নি-র দৃষ্টিপ্রসাদ লাভের ঐকান্তিক সাধনার মফস্সলি ডাকনাম ‘ঝাড়ি’। ১৯৮০-র দশকে এই বিশেষ সাবআরবান স্ল্যাংটির জন্ম, আর ১৯৯০-এর দশক ব্যেপে এর জারণ। তার পরেই কি এটি মহানগরের ‘পথের ভাষা’-য় পরিণত হয়? নাকি কসমোপলিসই একে তৈরি করে ছুড়ে দিয়েছিল শহরতলি আর মফস্সলের দিকে?
ভাষাতত্ত্বের আলোচনার জায়গা এটা নয়। বরং সরস্বতী পুজোর প্রাক্কালে, ভ্যালেন্টাইনস সপ্তাহের পুণ্য মহরতে একটা রেট্রো মারতে পারলে মন্দ হত না। কিন্তু সময় কি রেট্রোকে পারমিট করে? কে জানে! তবে ঝাড়ি যে বঙ্গজীবনের এক্সক্লুসিভ সম্পত্তি নয়, সে কথা আজ এই
ভুবনায়িত পরিসরে সকলেই জানেন। সেই সত্য স্বীকার করে ঝাড়ির একটা মিথোগ্রাফ রচনা এই অবকাশে মন্দ হবে বলে মনে হয় না।
• ঝাড়ি কি ছেলেদের একচেটিয়া সম্পত্তি? মোটেও না। মেয়েরাও যে ঝাড়ি করেন, সেটা ছেলেদের জেনেছেন অনেক দেরিতে। সহশিক্ষাক্রম সাবলীল হলে ব্যাপারটা প্রকাশ্যে আসে। নয়তো সেই সে আমলের কথা ভাবুন, যখন মেয়েদের ইস্কুলে সরস্বতী পুজোর নেমন্তন্ন করতে ছেলেরা পৌঁছলে উঁকিঝুঁকি কিছু কম হত না।
• ঝাড়িরও ব্যাকরণ রয়েছে। তার স্থান-কাল বিশেষে প্রকারভেদও রয়েছে। পাবলিক বাসে ঝাড়ি যে কিসিমের, মেট্রোয় তেমন নয়। আবার লোকাল ট্রেনের ঝাড়ির আঙ্গিক মোটেই রাজধানি এক্সপ্রেসের ঝাড়ির মতো নয়। সামনের বাড়ির চিম্পিকে যে কায়দায় ঝাড়ি করা হয়, পিসির ননদের মেয়েকে সে কায়দায় ঝাড়ি করতে গেলে বিপদ রয়েছে। কোটিং ক্লাসের ঝাড়ি আর মাল্টিপ্লেক্সের ঝাড়ি কমপ্লিটলি আলাদা অ্যাফেয়ার।
• ঝাড়ি মানে বিপরীত জেন্ডারের দিকে ফ্যালফেলিয়ে চেয়ে থাকা নয়। থেকে থেকে থেমে থেমে আড় ও বাঁকা নজরের ঝলক ছাড়তে হয় সময় বুঝে। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে তো ‘তিরছি নজর’ আবহমানসিদ্ধ।
• সাইকেল-ঝাড়ি একান্তই উপ-নাগরিক। মহানগরে এটা করতে গেলে অ্যাক্সিডেন্ট সুনির্ঘাত। তবে পুরনো কোলকেতায় এজমালি ছাদের ভুবনে ঝাড়ির অন্য মাধুর্য। মফস্সল তা থেকে বঞ্চিত।
• ঝাড়ির কিছু মওকা থাকে। উৎসব, অনুষ্ঠান কমন ব্যাপার। তাকে অতিক্রম করেও ঝাড়ি সম্ভব। তবে সেই মওকা নির্মাণ করে নিতে হয়।
• ঝাড়ি ততক্ষণই, যতক্ষণ আলাপ না হচ্ছে। আলাপ হয়ে গেলে ঝাড়ি শেষ। তখন যে তাকানো-টাকানো, দৃষ্টি বিনিময়, তার নাম ‘পূর্বরাগ’। সেটা হেভি হাইক্লাস জিনিস। সবাই ঠিকঠাক ট্যাকল করতে পারেন না।
হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুকের যুগেও ঝাড়ি অব্যাহত। তবে তার চরিত্র ভারচুয়াল। সে কথা বারান্তরে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
হোটেল ঘরে বিছানার চাদর সাদা হয় কেন ?
বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথম যে বিষয়টি নজরে আসে,বিস্তারিত পড়ুন
ধনিয়া পাতার উপকারি গুণ
চিকিৎসকদের মতে, ধনে বা ধনিয়া একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার অনেকবিস্তারিত পড়ুন