ঝড়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানুষ
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পৌর শহরসহ চারটি ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার মানুষ এখনও খোলা আকাশের নিচে বাস করছে। ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি গত চারদিনেও মেরামত করতে না পারায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা এখন ত্রাণের আশায় চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে।
রোববার দুপুরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর, খুকনি, বেলতৈল, হাবিবুল্লাহ নগর ও শাহজাদপুর পৌর শহরের ছয় কিলোমিটার এলাকা ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। মাত্র ৪০ সেকেন্ডের ওই ঝড়ে কমপক্ষে তিনহাজার বাড়িঘর, পাঁচহাজার গাছপালা ও ৫৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে যায়।
এছাড়া ১০ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইনের তার ছিড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বেশিরভাগ এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়নি। অন্ধকারে রাত কাটছে তাদের। সব মিলিয়ে এসব এলাকায় ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে এ ঝড়ে শাহজাদপুরের কাছারি বাড়ি আঙ্গীনার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছিন্নপত্রে উল্লেখিত প্রিয় লিচুগাছটি ভেঙে গেছে। এতে কবিভক্ত ও কাছারীবাড়ি পরিদর্শনে আগত দর্শনার্থীরা মূষড়ে পড়েছেন। তারা বলেন, গাছটি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের আরও যত্নবান হওয়া উচিত ছিল।
অন্যদিকে ঝড়ে উড়ে যাওয়া শাহজাদপুর আদালতের আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ের ঘরের চাল গত চার দিনেও মেরামত না হওয়ায় আইনজীবীদের কাজে চরম বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
বুধবার ওইসব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চরবেতকান্দি গ্রামের সাবুলাল মিয়া ও বিধবা রাহেলা বেওয়ার তিনটি ঘর ঝড়ে উড়ে গেছে। শূন্য ভিটায় ঘরের চাল, বেড়া ও কিছু হাড়িপাতিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। একই অবস্থা দেখা গেল, সড়াতৈল, রূপসী, সালদাইরবিল, খাকদিয়ার ও ঘোড়শাল গ্রামে।
চরবেতকান্দি গ্রামের রিকসা চালক সাবুলাল মিয়া জানান, চারদিক কালো অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে প্রচণ্ড বেগে ঝড়টি তাদের দিকে ধেয়ে আসে। মুহূর্তের মধ্যেই তার তিনটি ঘরের চাল বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যায়। কীভাবে ঘরগুলো মেরামত করবেন সেই চিন্তায় তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
সড়াতৈল গ্রামের ময়না বেওয়া, প্রতিবন্ধী চেনবানু, ঘোড়শাল গ্রামের হাসনা বেগম, গোবীন্দ্র শীল, সেলিম মিয়া, রূপসী গ্রামের নূর হোসেন, ফুলচান মিয়া, ফজর আলীসহ অনেকেই চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, ঝড়ের তাণ্ডবে ঘরের টিন উড়ে গেছে। যে দু-একটি আছে সেগুলো দুমড়ে মুচড়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
তারা বলেন, সামান্য দিনমজুরি করে ঘর তোলার মত টাকা জোগার করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে তাদের থাকতে হচ্ছে।
জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ ও খুকনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুল্লুকচাদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্তরা হতদরিদ্র হওয়ায় বাড়িঘর ঠিক করতে পারেনি। তাদের জন্য দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী প্রয়োজন।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বলেন, ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যেই তা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য নগদ অর্থ ও টিনের বরাদ্দ জেলা প্রশাসকের কাছে চাওয়া হয়েছে। হাতে পেলে তা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
প্রকাশ্যে চলছে রমরমা মাদক ও জুয়ার আসর, ওসি বললেন জানা নেই
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার জালালপুরে প্রকাশ্যে চলছে লাখ লাখ টাকা জুয়াবিস্তারিত পড়ুন
পিস্তল উদ্ধার ! মেডিকেল শিক্ষার্থীকে গুলি করা শিক্ষক আটক।
সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ক্লাসরুমের ভেতরে একবিস্তারিত পড়ুন
সিরাজগঞ্জে বাউলদের অনুষ্ঠানে হামলা, আহত ৯
সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় বাউল শিল্পীগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলারবিস্তারিত পড়ুন