টাকা চুরির অভিযোগে মা-মেয়েকে মধ্যযোগীয় কায়দায় নির্যাতন
মা-মেয়ের দুই হাত পিছনে খুঁটিতে বাঁধা। পা দুটি সামনের খুঁটিতে টান করে বাধা ছিল যেন নড়াচড়া না করা যায়। প্রথম দফায় নির্যাতনে জ্ঞান হাড়ায় মা-মেয়ে। স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক এনে ইনজেকশন দিলে জ্ঞান ফিরে পান। জ্ঞান ফিরে দেখেন চোখের সামনে বড় সুই, ডিম, বরফের খণ্ড, চুলকাটার কেচিসহ আরো অনেক কিছু। এত সব আয়োজন সঞ্চয়ী মাটির ব্যাংক থেকে ১লক্ষ ৭০ হাজার টাকা নেওয়ার স্বীকারোক্তি দিতে হবে। অবশেষে একমাত্র সম্বল থাকার জায়গা সাত শতক ভিটে আগামী মঙ্গলবার লিখে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে সাত ঘণ্টার নির্যাতন থেকে তাদের অব্যহতি মিলে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে অশ্রুস্বজল চোখে নির্মম এ ঘটনার বর্ণনা দিলেন নির্যাতিত শাহানা বেগম ও মেয়ে শামসুন নাহার। এই লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লা গ্রামে।
নির্যাতিত শাহানা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমাদেরকে সকাল ৯টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত হাত-পা বেধে নির্যাতন করে জোড়পূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে ষ্ট্যাম্প ও সাদা কাগজে টিপসই ও স্বাক্ষর রাখেন। আমরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় বাড়িতে তালা জুলিয়ে দেয় গ্রামের মোড়লদের সহযোগিতায় মোছলে উদ্দিন।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, কামাল্লা গ্রামের ব্যবসায়ী মোছলে উদ্দিনের বাড়িতে গৃহপরিচালিকার কাজ করতেন একই গ্রামের আ: হকের মেয়ে শামসুন নাহার (১৬)। গত বৃহস্পতিবার রাতে মোছলে উদ্দিন তার বাড়ির সঞ্চয়ী মাটির ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা চুরির অভিযোগ আনে গৃহপরিচালিকা শামসুন নাহারের বিরুদ্ধে। পরদিন শুক্রবার সকালে শামসুর নাহার, মা শাহানা বেগম (৪০), বাবা আ: হক, ছোট ভাই রবিউলকে (১০) কয়েকজন লোকের মাধ্যমে বাড়ি থেকে ধরে আনে। এ সময় স্থানীয় মোড়ল দরবেশ চৌধুরী, আল-হেলাল চৌধুরী সিন্ধাবাদ, আবুল বাশার মাষ্টার, সাবেক মেম্বার বজলু মিয়া, মোছলেম মুন্সি মেম্বার, জজ মিয়া ও আরিফের উপস্থিতিতে তাদেরকে মোছলে উদ্দিনের বাড়ির একটি কক্ষে সাত ঘণ্টা আটক রেখে অমানসিক নির্ষাতন চালানো হয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তারা জ্ঞান হাড়িয়ে ফেললে স্থানীয় এক পল্লি চিকিৎসক দিয়ে ইনজেকশন পুশ করে জ্ঞান ফিরিয়ে আনে। তখন তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা চুরির স্বীকারোক্তি আদায় করে মোবাইলে ভিডিও করে রাখা হয়। তখন কয়েকটি নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর ও টিপসই রাখে। দার্যকৃত টাকা আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারলে তাদের একমাত্র ভিটে বাড়িটি মোছলে উদ্দিনের নামে লিখে দেওয়ার শর্তে ওইদিন বিকল তিনটায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এমনকি বিষয়টি নিয়ে কোন প্রকার জানাজানি করলে তাদেরকে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়। স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে পেয়ে শনিবার সন্ধ্যায় ওই পরিবার লোকজনকে উদ্ধার করে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
স্থানীয় মোড়ল আল-হেলাল চৌধুরী সিন্ধাবাদ নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মা ও মেয়ের চরিত্র খারাপ, তাই তাদেরকে গ্রাম ছাড়া করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় স্থানীয় বৈঠকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ঘরে তালাবদ্ধ করে নির্যাতন করা হচ্ছে এমন খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে যাই। তবে ছোট্ট এই মাটির ব্যাংক থেকে ১লক্ষ ৭০ হাজার টাকা চুরি হওয়ার বিষয়টি সন্দেহজনক।
টাকা চুরির কারণে শামসুন নাহারে পরিবারের সদস্যদের মারধর করার সত্যতা স্বীকার করে ব্যবসায়ী মোছলে উদ্দিন বলেন, ওই মাটির ব্যাংকে ১লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ছিল। টাকা ফেরৎ দিতে না পারলে আগামী মঙ্গলবার শাহানা বেগম তার বাড়ির সাত শতক জায়গা লিখে দিবেন এই মর্মে ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় স্থানীয়রা।
এদিকে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে ও স্কুল শিক্ষক আবুল বাশার বলেন, চুরির শালিস হচ্ছে এমন খবর পেয়ে আমি ওই বাড়িতে যাই। আটককৃত মা-মেয়ে টাকা চুরি করেছে বলে স্বীকার করে।
এ ব্যাপারে মুরাদনগর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, এ ধরনের ঘটনায় কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর পদ হারালেন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলেরবিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল গ্রেপ্তার
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে রাজধানীরবিস্তারিত পড়ুন