তিন দিনের মধ্যে ক্ষমা না চাইলে টিআইবির বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি টিআইবির উদ্দেশে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু ও তালুকদার মো. ইউনূস।

গত ২৬ অক্টোবর ধানমন্ডির মাইডাস ভবনে ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ সময় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বর্তমান সংসদের সমালোচনা করে বলেন, জাতীয় সংসদ পুতুল নাচের নাট্যশালায় পরিণত হয়েছে।

ড. ইফতেখারুজ্জামানের এ মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহল ও গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।

মঙ্গলবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আমি সংসদে বলেছি, আজও বলছি- তিন দিন সময় দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে টিআইবি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা না চাইলে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন (ব্যবস্থা) নিতে রাজি আছে কমিটি।

বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন বিল-২০১৫ কমিটিতে রয়েছে, এ কথা উল্লেখ করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বিল চূড়ান্ত হয়ে রয়েছে, এখন পাস হবে। আজ আইন কমিটির দুটি বৈঠক হয়েছে। একটা হল ফরেন ডোনেশনের অ্যাক্টের বিষয়ে সাব কমিটির বৈঠক। ওখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভীও উপস্থিত ছিলেন।

সুরঞ্জিত বলেন, আমাদের দেশে এক সময় এনজিওগুলো বিদেশ থেকে পয়সা এনে গরিবদের মাঝে বিতরণ করত। এসব এনজিও এখন ফুলে-ফেঁপে এমন নমুনা ধরছে যে তারা এখন আমাদের ধরে খেতে চায়। এখন তারা সরকারের প্যারলাল হয়ে গেছে, দেশের প্যারলাল হয়ে গেছে।
অন্য কোনো এনজিওর বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। কেবল টিআইবির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ। টিআইবির ড. ইফতেখার সম্প্রতি কিছু কথা বলেছেন, যেটা গ্রহণযোগ্য না। দেশের সংসদকে নিয়ে এ ধরনের তামশা, মজা বিশ্বের কোথাও হয় না।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর এ সদস্য বলেন, গণতন্ত্র একদিনে হয়নি। বৃটিশ গণতন্ত্রও ৫০০ বছরের পুরনো। আমরাও চেষ্টা করছি। এ নিয়ে মতবিরোধ থাকতে পারে। যেমন: নির্বাচন বিএনপি করতে পারে নাই। এটার বিষয়ে বিএনপি-আ.লীগ বুঝবে। সেটা রাজনৈতিক দলের বিষয়। কিন্তু তা নিয়ে এনজিও কোনো কথা বলতে পারে না। তার দেশসেবার কোনো কাজ নেই। তারা যদি দেশসেবা করতে চায় এখানে এসে নিবন্ধন করতে হবে সরকারে কাছে। সরকার যদি মনে করে তাকে রাখবে, তাহলে সে থাকতে পারে। আর যদি দেখা যায়, তারা ভিন্ন কাজ করছে, তা তারা করতে পারবে না। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা নিয়ে অশালীন ভাষায় তারা কথা বলতে পারবে না।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আপনারা দেখেন ইফতেখার সাহেব সংসদ নিয়ে তামশা করেছেন। উনি কে? উনি এনজিও। বাহির থেকে টাকা আনে। সংসদ নিয়ে তার কথা অশালীন। সংসদ পুতুল নাচের নাট্যশালা, এটা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ভাষা না। এটা একটা অশালীন ভাষা। সংসদ সংবিধানের অংশ। জনগণ এটা নির্বাচিত করে। তার মন্তব্য সীমা অতিক্রম করেছে। তারা গবেষণা করবে। কিন্তু কাউকে অপমান করার অধিকার তাদের কেউ দেয়নি। আমাদের যে সংশোধনী আসতেছে- কেউ যদি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বা সরকারে বিরুদ্ধে কোনো সাংঘর্ষিক মন্তব্য করে, সরকার চাইলে যেকোনো সময় ব্যবস্থা নিতে পারবে।

তিনি বলেন, তারা যদি রাজনীতি করতে চায়, রাজনৈতিক দলে যোগদান করুক। আমরাও জেল খেটেছি। এরপর এখানে আসছি। গাছেরটাও খাবেন ,তলেরটাও খাবেন, দুটা তো একসাথে চলবে না।

তিনি আরো বলেন, এখন অন্যান্য এনজিওকে দায়িত্ব নিতে হবে। বলতে হবে ইফতেখার তাদের মুখপাত্র কি না? তারা যদি বলে, সে আমাদের মুখপাত্র না, তাহলে তাদেরটা আমরা একভাবে দেখব, দায় নিলে অন্যভাবে দেখব।