টিকিট বিক্রির প্রথমদিন: কোথাও ফাঁকা কোথাও ভিড়
বগুড়াগামী যাত্রী মো. ছানু মিয়া। সকাল ৬টায় গাবতলী বাস টার্মিনালের হানিফ কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ৭টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার কথা। ১ ঘণ্টা পিছিয়ে শুরু হয় ৮টায়। টিকিট বিক্রি শুরুর ১ ঘণ্টা আগে কাউন্টারে আসলেও লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে অনেকের পেছনে। পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে আগাম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনই নানা অনিয়মে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে ছানু মিয়াসহ অনেককে। তবে কিছু কিছু কাউন্টার অনেকটাই ফাঁকা থাকায় সহজেই টিকিট পচ্ছে সংগ্রহকারীরা।
প্রথমদিনই ৬ ঘণ্টা অপেক্ষার পর দুপুর ১২টায় প্রত্যাশিত টিকিট পেলেন ছানু মিয়া। সেখানেও আবার ভোগান্তি কিছুটা কমাতে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৩০ টাকা বেশি দিতে হয়েছে তাকে। ৩৫০ টাকার ভাড়া নেয়া হয়েছে ৩৮০ টাকা। ৬ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বেশি মূল্য দিতে হয়েছে তাকে। তার মতো অনেকেই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন বলে জানান ভুক্তভোগী ছানু মিয়া।
সোমবার (২০ জুন) রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর ও শ্যামলী কাউন্টার এলাকার সরজমিন ঘুরে এমন চিত্রই চোখে পড়ে। উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ৬০টির বেশি রুটে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিনে এসব কাউন্টারে যাত্রীদের বেশি চাহিদা ছিল ০১ জুলাই থেকে ০৩ জুলাইয়ের টিকিটের।
গাবতলী, কল্যাণপুর ও শ্যামলীর বিভিন্ন কাউন্টারের মতো সোমবার সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালেও অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। অবশ্য গত ঈদে সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে কোনো অগ্রিম টিকিট দেয়া হয়নি। এবার টিকিট দেয়া হচ্ছে বলে বাস মালিকরা জানিয়েছেন।
সায়েদাবাদ বাস কাউন্টারে সোমবার (২০ জুন) সকাল থেকেই অগ্রিম টিকিট প্রত্যাশীরা জড়ো হতে থাকেন। তবে সেখানের বেশিরভাগ কাউন্টারই ছিল ফাঁকা। বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারের সামনে অনেককেই নির্বিঘ্নে টিকিট সংগ্রহ কতে দেখা গেছে। তবে ২, ৩, ৪ ও ৫ জুলাইয়ের টিকিট কোনো কাউন্টারে নেই বলে অনেক টিকিট প্রত্যাশীরা অভিযোগ করেছেন। এছাড়া সবাই টিকিট পেয়েছেন।
তবে দুপুরের দিকে গাবতলী, কল্যাণপুর ও শ্যামলীর সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ, ঈগল, সাকুরা, এস আলমসহ বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারের সামনে টিকিট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন। ভাড়ার তালিকা ও টিকিট বিক্রি বিজ্ঞপ্তিও টানানো ছিল। তালিকায় এলাকাভিত্তিক টিকিটের মূল্যও টাঙানো ছিল। তার পরেও টিকিট প্রতি ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেশি নিয়েছে বলে ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলী জানান।
সময়মত টিকিট বিক্রি না করা ও ধীরগতিতে টিকিট বিক্রির ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ক্রেতাদের। মৌচাক থেকে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে এসআর প্লাস কাউন্টারে টিকিট সংগ্রহ করতে এসেছেন মো. আয়নাল নামে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। তিনি যাবেন দিনাজপুরে। ভোর ৫টায় এসেছেন। কিন্তু দেরিতে এবং স্লোলি টিকিট বিক্রির করার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে অভিযোগ তার। এর পর ভ্যাপসা গরম আর রোজার কারণে অনেকেই অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। তবে সায়েদাবাদে দিনের চিত্র ছিল ভিন্ন।
মালিবাগ থেকে আসা আলী হোসেন বাংলামেইলকে বলেন, ‘খুব সকালেই এসেছি ভাই। ঈদে বাড়িতে যেতে হবে। এ কারণে টিকিটের জন্য আসা। টিকিট পেতেই হবে।’ যাত্রাবাড়ী থেকে আসা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পরে এলে টিকিট পাওয়া যায় না। এ কারণে আগেভাগে আসা। প্রতিবারই পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে গ্রামের বাড়ি গিয়ে ঈদ করি। এবারও ঈদ করতে যাওয়ার জন্য টিকিট নিতে এসেছি। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একটু কষ্ট হচ্ছে। তবে ০৩ তারিখের টিকিট পেয়েছি। এতেই খুশি।’
কোনো কোনো কাউন্টারে ২, ৩, ৪ এবং ৫ জুলাইয়ের টিকিট নেই বলে টিকিট প্রত্যাশীদের জানানো হয়। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, বান্দরবান, নাজিরহাট ও কয়েকটি স্থানের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে বলে এস আলম পরিবহনের কাউন্টারম্যান নরেশ রায় জানান।
আবার কমলাপুর হানিফ কাউন্টারের বিক্রয় প্রতিনিধি রতন মিয়া বলেন, ‘আমাদের কাউন্টারে কোনো ভিড় নেই। যাত্রীরা আসছে আর টিকিট নিয়ে যাচ্ছে।’ টিকিট নেই এমন প্রশ্নের জবাবে রতন মিয়া বলেন, ‘এটা ভুল কথা। চাহিদার তুলনায় যদি পাঁচগুণ বেশি টিকিট প্রত্যাশী আসেন সেখানে একগুণ যাত্রীর টিকিট দিতে পারবো। কিন্তু অতিরিক্ত ৪ গুন মানুষের চাহিদা পূরণ করবো কীভাবে। এইসব যাত্রীরাই বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেন।’
তিনি আরও জানান, এবার বেশিরভাগ পরিবহনের টিকিট অনলাইনে দেয়া আছে। সেখান থেকে টিকিটগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। এ কারণে কাউন্টারে আসা লোকজন তাদের চাহিদা মতো টিকিট পাচ্ছেন না।
কাউন্টার মাস্টার ও টিকেট বিক্রেতারা বলছেন, আজ থেকে (সোমবার) আনুষ্ঠানিকভাবে টিকেট বিক্রি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অনেকেই আগেভাগে অগ্রিম টিকেট দিচ্ছেন। তবে ঈদের এখনও বেশ কিছু দিন বাকি থাকায় যাত্রীরা টিকেট সংগ্রহ শুরু করেনি।
সায়েদাবাদ সরেজমিন ঘুরে অধিকাংশ কাউন্টারই দেখা যায় ফাঁকা। যে দুই একজন যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা গেলো তারা সবাই চলতি বাসের জন্য অপেক্ষমাণ। অগ্রিম টিকেট সংগ্রহকারী কাউকে দেখা যায়নি। তবে ২০ রোজার পর অগ্রিম টিকেট বিক্রির এবং ২৫ রোজার পর ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ বাড়বে বলে ধারণা করছেন শ্যামলী পরিবহনের সুপারভাইজার সুমন মিয়া।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন