ট্রাম্পকে নিয়ে কারা স্বপ্ন দেখেন জানেন?
নির্বাচনের রাতে, নিজের আসন উইসকনসিনে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হন সেই সময় স্যা চ্যাম্বারলিন আনন্দে চিৎকার করেছিলেন, ধরে রাখতে পারেননি চোখের পানি।
চ্যাম্বারলিন মনে করেন, ট্রাম্প তার রক্ষাকারী, ধ্বংসের হাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করতে সৃষ্টিকর্তা তাকে পাঠিয়েছেন। উইসকনসিনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তার একটি নারী পোশাকের দোকান রয়েছে; স্বামী একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাদের দুই সন্তান- দুই সন্তানের পেছনে বছরে ব্যয় হয় ৪৪ হাজার মার্কিন ডলার।
ট্রাম্প তার বিজয়ী ভাষণে বলেছেন, তার জয়ের পেছনে চ্যাম্বারলিনের মতো আমেরিকার এলিট শ্রেণি থেকে শুরু করে নিপীড়িত শ্রমিক নির্বিশেষে সব মানুষের অবদান রয়েছে। নির্বাচনে যখন ট্রাম্প লড়াইয়ের ঘোষণা দেন; চ্যাম্বারলিন তখন থেকেই চিন্তা করতেন, এই একটি মানুষের জন্য সবাই প্রার্থনা করেছেন; যা তার জয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
চ্যাম্বারলিন বলেন, ‘এটি একটি আন্দোলন। তিনি শুধু একজন প্রার্থী নন, এটি একটি আন্দোলন’। চ্যাম্বারলিনের ধারণা, শুধু নিপীড়িত শ্রমিকদের সমর্থন পাননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থনৈতিক মন্দার সময় রিপালিকান শিবির সমর্থকদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছিল।
এর আগে তাদের কাজের সুযোগ কমে এসেছিল; এমনকি যখন দেশের চাকরিবাজার সম্প্রসারিত হচ্ছিল তখনও। কিন্তু রিপাবলিকান শিবির সামাজিক পরিবর্তনে সমলিঙ্গ বিবাহ, তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার, জাতিগত বৈচিত্র্যময়তার দিকে নিজেদের সমর্থন দিয়ে অাসছিলো।
দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত শেতাঙ্গ শ্রমিক শ্রেণি অপ্রত্যাশিতভাবে ট্রাম্পকে একজন মুখপাত্র হিসেবে পেয়েছিল। তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন, অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে প্রাচীর নির্মাণ করবেন; বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করতে চেয়েছিলেন, যাতে আমেরিকান কারখানায় কর্মরত বিদেশিরা কাজ করতে না পারে। তিনি মার্কিন শ্রমিকদের কাজে ফেরানোর অঙ্গীকার করেছেন। এ ছাড়া শেতাঙ্গ শ্রমিকদের জন্য দেশের বিভিন্ন সেক্টর পুনর্বিন্যাস করবেন; যাতে এই শ্রমিকরা মনে করে যে তারা যথাযথ মূল্যায়ন পাচ্ছেন।
নর্থ ক্যারোলিনার দারিদ্র্যপীড়িত ও ছোট্ট শহর জোনস কাউন্টির একটি গ্রাফিকস কোম্পানির মালিক ৫৯ বছর বয়সী জিঞ্জার অস্টিন বার্তাসংস্থা এপিকে বলেন, ‘আমি মনে করি; সব ট্রাম্প সমর্থকই প্রকৃত দেশপ্রেমিক। তারা এই দেশকে ভালোবাসেন। কিন্তু তারা আমাদের দেশের পরিবর্তন আনছেন। তারা সবকিছুতেই পরিবর্তন আনছেন। তবে তাদের অধিকার থেকেও তারা দূরে সরে যাচ্ছেন’।
রিপাবলিকান পার্টিকে তিনি সব সময় সমর্থন করে আসলেও এখন দলটির প্রতি রাগান্বিত। তিনি বারাক ওবামার প্রতিও বিরক্ত। তিনি রাগান্বিত এ কারণে যে, আমেরিকা পরিবর্তিত হচ্ছে এবং তার নাতি-নাতনি এমন একটি পরিবেশে বেড়ে উঠছে, যা একটু বেশিই উদার এবং বেশি রাজনীতিপ্রবণ।
বুধবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই মার্কিনিরা জেনেছেন কীভাবে বিভাজন তৈরি হয়েছে। হিলারি ক্লিনটন অন্তত ২ লাখ পপুলার ভোট জিতেছেন; কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে জয়ী হয়েছেন, যেখানে বারাক ওবামা দু দু’বারই এসব রাজ্যে বিজয়ী হয়েছিলেন।
খনি ও কারখানার অনেক সাবেক শ্রমিক ও হাজার হাজার নিবন্ধিত ডেমোক্রেট সমর্থক দলীয় সীমান্ত অতিক্রম করে ট্রাম্পের দলে ভিড়েছেন। যেমন- উইসকনসিনের ডান কাউন্টি যেখানে চ্যাম্বারলিন বসবাস করছেন, ২০১২ সালে ওবামা ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে মিট রমনিকে (৪৬ শতাংশ) পরাজিত করেছিলেন। এর চার বছর আগে, জন ম্যাককেইন ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এই রাজ্যে ৫২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন; যেখানে হিলারি পেয়েছেন ৪১ শতাংশ।
মার্কিন শ্রমিকদের ব্যাপারে উদাসীন ও সচেতন রাজনীতিবিদদের জন্য এই রাজ্যের ভোটাররা নির্বাচনে মূল ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেন। ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলের খনি শ্রমিকরা স্বপ্ন দেখছেন কাজে ফেরার। নির্বাচনের পর এখানকার শ্রমিকরা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সুযোগ দেখছেন। তারা ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে কথা বলছেন।
ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার শ্রমিক জোনস বলেন, আমরা ওয়াশিংটনের কাছে একটি বার্তা দিলাম যে, এখানকার শ্রমিক শ্রেণির মানুষের জন্য কিছু করতে না পারা দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত। এখানে কয়লা খনিতে বিপর্যয় ঘটেছিল। তিন ভাগের একভাগ পরিবার খনির ওপর নির্ভরশীল ছিল। জীবিকা নির্বাহ করতে শ্রমিকরা লড়াই করছেন; কিন্তু তেমন সহায়তা পায়নি তারা।
তিনি মনে করেন, ক্লিনটন ও এলিট শ্রেণির অন্যান্য রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে তিনি ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। শ্রমিকরাই এই দেশ গড়েছেন; কিন্তু এখন তাদের ভুলে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনই রাজনীতিবিদের মনোযোগ দেয়া উচিত।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে স্বৈরাচারী শাসক বললেন ট্রাম্প
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দাবি ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পবিস্তারিত পড়ুন

ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন

মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন