ট্রাম্পের জন্য কঠিন পরিস্থিতি রেখে যাচ্ছেন ওবামা
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত রাশিয়ার ৩৫ জন কূটনীতিককে বহিষ্কারের মাধ্যমে আদতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য কঠিন পরিস্থিতি রেখে যাচ্ছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নাক গলানোর সন্দেহে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে ওবামা প্রশাসন। তবে সেই নির্বাচনেই বিজয়ী হয়ে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নেওয়ার অপেক্ষায় পুতিনভক্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প।
২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ বৃহস্পতিবার আরোপ করা এ নিষেধাজ্ঞার ফলে দুই দেশের বিদ্যমান অস্থিতিশীল সম্পর্ক আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। শীতল যুদ্ধের পর এটা হবে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতির চরম রূপ। হোয়াইট হাউস ত্যাগের আগ মুহূর্তে ওবামা এমন এক সিদ্ধান্ত দিয়ে গেলেন যার কিছুদিন পরই মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিচ্ছেন একজন রুশবান্ধব মানুষ। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও হচ্ছেন রুশ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী রেক্স টিলারসন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ টিলারসন ২০১৩ সালে রাশিয়ার সম্মানজনক অর্ডার অব ফ্রেন্ডশিপ পুরস্কার লাভ করেন। তবে ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব গ্রহণের পর রুশবিরোধী নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে ট্রাম্প কি করবেন সে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়।
সমালোচকরা বলছেন, ওবামার এমন সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে একইসঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প-দুজনকেই একটা শিক্ষা দেওয়া। এরইমধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। লিখিত প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, ‘আরও বড় ও ভালো কিছুর দিকে আমাদের দেশের এগিয়ে যাওয়ার সময় এখন। তথাপি, আমাদের দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে এই পরিস্থিতির (নিষেধাজ্ঞা) সর্বশেষ অবস্থা জানতে আগামী সপ্তাহে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করব।’ তবে হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নেওয়ার পর রুশবিরোধী নিষেধাজ্ঞা পাল্টে দেবেন-বিবৃতিতে এমন কিছু বলেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ওবামা প্রশাসনের বৃহস্পতিবারের ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বহিষ্কৃত ৩৫ জন রুশ এবং তাদের পরিবারকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে মেরিল্যান্ড এবং নিউ ইয়র্কে গোয়েন্দা তথ্য কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হত এমন দুটি রুশ কম্পাউন্ডও বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া রুশ গোয়েন্দা সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত নয়টি সংস্থা ও ব্যক্তির ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়াও শীঘ্রই নিজের দেশ থেকে মার্কিন কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে এর জবাব দেবে। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ‘খেলো’ করার চেষ্টার জন্য যারা দায়ী এসব পদক্ষেপ তাদের জন্যই নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এ সময় তিনি জানান, ক্ষমতা ছাড়ার আগেই মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করায় রাশিয়াকে তিনি ‘শিক্ষা’ দেবেন। বৃহস্পতিবার ৩৫ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার ও বেশ কয়েকজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়ে রাশিয়াকে শিক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা।
হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে মার্কিন নির্বাচন প্রভাবিত করতে রাশিয়ার জড়িত থাকার বিষয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি। উভয় দেশের নেতারা বাগযুদ্ধেও জড়িয়ে পড়েছেন একাধিকবার। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে রুশ সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার দাবি করার পর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল ওবামা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। ডেমোক্র্যাট শিবির থেকে কঠোর পদক্ষেপের চাপ ছিলো। ওবামা নিজেও জানিয়েছিলেন, দায়িত্ব ছাড়ার আগেই রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষা করে যতটুকু সম্ভব নির্বাচনে রুশ প্রভাবের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
ডিসেম্বরের শুরুতে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর এক মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত করার জন্য রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ইমেইল হ্যাক করেছিল রাশিয়া। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জড়িত যেসব ব্যক্তি উইকিলিকসের হাতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্যদের হাজার হাজার নথি তুলে দিয়েছিলেন, তাদেরও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা শনাক্ত করতে পেরেছে। ওই কর্মকর্তাদের দাবি, যেসব ব্যক্তি ওই কথিত হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত, তারা নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারির সমালোচনা সামনে এনে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের জয়ের পথ সুগম করার কাজ করছিলেন।
অবশ্য নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই রাশিয়ার হ্যাকিং সম্পর্কিত অভিযোগ খারিজ করে আসছেন। এর আগে ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়া কোনও ধরনের হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছে বলে তিনি মনে করেন না। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা এসব অভিযোগকে তিনি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেও উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের অক্টোবরে ওবামা প্রশাসন মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে রাশিয়া সাইবার হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে। মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি ছিল, ডেমোক্র্যাটিক দলের ন্যাশনাল কমিটি, ডেমোক্রেটিক দলের কংগ্রেস প্রচারণা ও অপর রাজনৈতিক সংস্থায় সাইবার হামলা চালিয়েছে মস্কো নিয়ন্ত্রিত হ্যাকাররা। হ্যাক করা গোপন ও ব্যক্তিগত তথ্যগুলো উইকিলিকস ও অপর সন্দেহজনক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফাঁস করা হয়। হিলারির প্রচারণা টিমের প্রধান জন পডেস্টা ও বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ই-মেইল হ্যাক করারও অভিযোগ ওঠে।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ওবামা প্রশাসনের ওপর চাপ ছিল। এসব চাপ ও সমালোচনার প্রেক্ষিতে চলতি বছরের শেষ সংবাদ সম্মেলনে ওবামা জানান, মার্কিন নির্বাচন প্রভাবিত করতে রাশিয়ার হ্যাকিং বন্ধ করতে পুতিনকে বলেছিলেন তিনি।সেপ্টেম্বরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পুতিনকে একথা বলেন তিনি। ওবামা দাবি করেন, পুতিন এই হ্যাকিং সম্পর্কে জানতেন। কারণ পুতিনের অগোচরে রাশিয়ায় তেমন কিছু ঘটে না। ওই সম্মেলনে পুতিনকে সতর্কও করেছিলেন ওবামা। জানিয়েছিলেন এর ফল ভালো হবে না।
পুতিনকে সতর্ক করার একমাস পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন প্রভাবিত করার অভিযোগ উত্থাপন করে। সংবাদ সম্মেলনের আগের দিন বৃহস্পতিবার মার্কিন নির্বাচনে হ্যাকিংয়ের অভিযোগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন বারাক ওবামা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এনপিআর)-কে ওবামা বলেছিলেন, ‘আমদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আর তা আমরা নেব।’ সূত্র: এনবিসি নিউজ, ব্লুমবার্গ, বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন