ট্রাম্পের জয়ে শংকায় পাকিস্তান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিক বিজয়ের পর শংকায় পড়েছে পাকিস্তান। দেশটির জনগণ মনে করছে, ট্রাম্পের বিজয়ের পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের পক্ষে চলে যেতে পারে আমেরিকার সরকারি নীতি। পাকিস্তানি বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে ইংরেজি দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এ খবর দিয়েছে।
ইসলামাবাদ এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুত্ব থাকলেও আমেরিকা অভিযোগ তুলেছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। যদিও এ অভিযোগ পাকিস্তান অস্বীকার করে আসছে তবে এ অভিযোগের প্রেক্ষাপটে দু’দেশের সম্পর্ক অনেকটা তিক্ত হয়ে উঠেছে। গত মে মাসে পাকিস্তানের ভেতরে মার্কিন ড্রোন হামলায় তালেবানের এক নেতা নিহত হলে সম্পর্ক অনেকটা তলানিতে গিয়ে ঠেকে। একইসঙ্গে চলতি বছর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।
১৮ সেপ্টেম্বর ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতের ১৯ সেনা নিহত হওয়ার পর নয়াদিল্লি অভিযোগ তুলেছে- ওই হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে। দু’দেশের মধ্যে এমন সম্পর্ক যখন বিদ্যমান এবং মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তখন পাকিস্তানের ভেতরে এক ধরনের অস্বস্তি দেখা দেয়াটাই স্বাভাবিক। ট্রাম্পের মুসলিমবিরোধী বক্তব্য ও ভারতের সঙ্গে ট্রাম্পের বাণিজ্য সম্পর্কের কারণে বহু পাকিস্তানি নাগরিক মনে করছেন নতুন মার্কিন প্রশাসন দিল্লির দিকে আরও বেশি ঝুঁকে পড়তে পারে।
লাহোরভিত্তিক পররাষ্ট্রবিষয়ক বিশ্লেষক হাসান আসকারি রিজভি বলেন, ‘আমেরিকা পাকিস্তানকে ছুড়ে ফেলবে না, তবে পাকিস্তানের জন্য হিলারির চেয়ে ট্রাম্প হবেন কঠিন একজন প্রেসিডেন্ট। আমার মনে হয় পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক অনেক বেশি সাবলীল হবে।’
দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিস্তারিত নীতি প্রণয়ন করতে হবে যে কাজটি তিনি এখনও করেননি; যদিও তিনি সম্প্রতি কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। গত মে মাসে তিনি মার্কিন ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, আফগানিস্তানে তিনি দশ হাজার সেনা রাখার পক্ষে কারণ আফগানিস্তানের পাশেই রয়েছে পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তান।
পাকিস্তানে নিযুক্ত একজন মার্কিন কূটনীতিক বুধবার খানিকটা আশ্বস্ত করে বলেছেন, ট্রাম্পের বিজয়ের কারণে আমেরিকার নীতিতে আকস্মিক কোনো পরিবর্তন আসবে না। মার্কিন কনসাল জেনারেল গ্রেস শেলটন করাচিতে বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সরকার পরিবর্তন হলেই সেগুলো পরিবর্তন হয়ে যাবে না।’
তবে এতেই আশ্বস্ত হচ্ছেন না পাকিস্তানের নাগরিকরা। সিনেটর ও আমেরিকায় নিযুক্ত সাবেক পাক রাষ্ট্রদূত শেরি রেহমান বলছেন, ‘ট্রাম্প হচ্ছেন ওয়াইল্ড কার্ড। আমেরিকা যাকেই নির্বাচিত করুক না কেন তার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক রক্ষা করে চলাই উচিত হবে। তবে ট্রাম্পের মুসলিমবিরোধী কথাবার্তা একটি অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সম্পর্ককে অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখবে।’
লাভ দেখছে ভারত
ভারতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ট্রাম্পের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বড় ধরনের অংশীদারিত্ব রয়েছে। তবে ভোটের ডামাডোল কাটিয়ে উঠে কীভাবে তিনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তৈরি করবেন তা এখনও পরিষ্কার নয়। নরেন্দ্র মোদি ও বারাক ওবামার সময় ভারত-মার্কিন সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। এ সময় দু’দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিরক্ষাবিষয়ক চুক্তি হয়েছে। ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরে ভূ-রাজনৈতিক খেলার প্রথম রাউন্ডে পরিস্থিতি ভারতের পক্ষে বেশ অনুকূল।
ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি দক্ষিণ এশিয়ার সমীকরণ কতটা বদলে দেবে তা নিয়ে গতকালই হিসেব শুরু হয়েছে বিভিন্ন রাষ্ট্রে। গোটা নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প একযোগে আক্রমণ করে গিয়েছেন চীন এবং পাকিস্তানকে। প্রচারের সময়ে পাকিস্তানকে সরাসরি সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য বলেছিলেন ট্রাম্প। এমন কথা এতদিন পর্যন্ত (ওবামা যুগে) এত স্পষ্টভাবে শুনতে অভ্যস্ত ছিল না পাকিস্তান। ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় নেয়ার জন্য পাকিস্তান ক্ষমা চায়নি বলেও পাকিস্তানকে আক্রমণ করেছিলেন ট্রাম্প। সেইসঙ্গে মুসলিম বিদ্বেষের ইঙ্গিতও তার বক্তব্যে নানা সময়ে ফুটে উঠেছে।
তবে এরই মধ্যে কিছুটা আশার আলো দেখছে ইসলামাবাদ। সম্প্রতি কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করার কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়ার বক্তব্য, ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের কথা হয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতার প্রস্তাবকে আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম।’
এদিকে ভারতের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী ‘হিন্দু সেনা’ ট্রাম্পের বিজয়ের পর ব্যাপক উল্লাস প্রকাশ করে রাজধানী নয়াদিল্লিতে সমাবেশ করে। সংগঠনের নেতা রাশমি গুপ্ত ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তিনি হচ্ছেন আমেরিকার জাতীয়তাবাদী। আমরা হচ্ছি ভারতের জাতীয়তাবাদী। একমাত্র তিনিই আমাদের বুঝতে পারবেন। যখন পাকিস্তান থেকে ভারতে সন্ত্রাসী হামলা হয় তখন তিনি আমাদের সমর্থন করবেন বলে আমরা আশা করি।’ ট্রাম্পের জয়ে চীনের খোঁচা, সুবিধাই দেখছে দিল্লি।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কানোয়াল সিব্বলের মতে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সমীকরণও দিল্লির কাছে স্বাগত। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নয়াদিল্লির জন্য নতুন উপহার। রাশিয়া এবং আমেরিকার সঙ্গে একই সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিছুটা মূল্য দিতে হয়েছে সরকারকে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন