ট্রাম্প ও হিলারির উপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক মানুষেরই অনাস্থা!
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবারে অর্ধেকেরও বেশি আমেরিকান এখন আর ডেমোক্র্যাট অথবা রিপাবলিকান কোনও দলের প্রতিই আস্থা রাখতে পারছেন না। সাম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, দুইটি দলের কেউই জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে আমলে নেয়নি। উভয় শিবিরই তাই জনগণের আস্থা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রার্থীদের প্রতি আস্থাহীনতার সব অতীত রেকর্ড ভেঙে ফেলেছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিয়ে সেখানে পরিচালিত সাম্প্রতিক কয়েকটি জরিপে নাগরিকদের তীব্র হতাশা আর ভয়াবহ ক্ষোভের আভাস মিলেছে।
মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাবলিক রিলিজিয়ন রিসার্স ইন্সটিটিউট (পিআরআরআই), শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল অপিনিয়ন রিসার্চ সেন্টার-এনওআরসি এবং পিউ রিসার্স-এর পরিচালিত ওই জরিপগুলো বলছে, জরিপের ফলাফল বলছে, অধিকাংশ মার্কিন জনগণ তাদের দুজনকেই ভয়ঙ্কর হিসেবে দেখছে। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান দুই প্রার্থীর প্রতি জনগণের এই অনাস্থাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে রায় দিয়েছে। প্রার্থিতার ক্ষেত্রে বার্নি স্যান্ডার্সের মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে জনগণের হতাশার কথাও উঠে এসেছে জরিপের ফলাফলে।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা নির্বাচন নিয়ে মার্কিন জনতার এই অবস্থানের বিপরীতে সেখানকার সমাজের বিরাজমান বিভক্তিকে দুষছেন। দুষছেন অর্থনৈতিক বৈষম্যকে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নিচু তলার মানুষের অংশগ্রহণ না থাকাকেও অনাস্থার কারণ মনে করছেন তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, সমাজে বৈষম্যের বিস্তৃতি, খাদ্যসঙ্কট, কর্মসংস্থানের অভাব, জাতীয় ঋণ বেড়ে যাওয়া, বর্ণবাদের বিস্তৃতি, বীমা করার অক্ষমতা, নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি দুই দলের প্রতি আস্থাহীন করে তুলেছে সে দেশের নাগরিকদের। আর খোদ প্রার্থীদের প্রতি ঐতিহাসিক অনাস্থার ক্ষেত্রে হিলারির ফাঁস হওয়া ইমেইল তথ্য এবং ট্রাম্পের ভয়াবহ বর্ণবাদী-সহিংস ভাষ্য ও নারীবিরোধী অবস্থানকে কারণ বিবেচনা করা হচ্ছে।
গত সেপ্টেম্বরে নমুনায়নের দৈবচয়ন পদ্ধতি ব্যবহার করে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ২,০১০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে এক জরিপ পরিচালনা করে মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাবলিক রিলিজিয়ন রিসার্স ইন্সটিটিউট (পিআরআরআই)। আরেকটি জরিপ পরিচালিত হয় শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ওপিনিয়ন রিসার্চ সেন্টার এনওআরসি-এর তহবিলে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্স ওই জরিপটি পরিচালনা করে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার ১০৬০ জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ওপর জরিপটি পরিচালিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু, জনমত ও ডেমোগ্রাফিক তথ্য নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার সেপ্টেম্বরে আরেকটি জরিপ সম্পন্ন করে।
পিআরআরআই-এর জরিপের আভাস অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির প্রতি মার্কিনিদের অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে। এখন ৬১ শতাংশ মার্কিনি নির্বাচন নিয়ে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। প্রতি ১০ জনে ৬ জনেরও বেশি মার্কিনি মনে করেন, প্রধান দুই দলের কোনটিই মার্কিনিদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারে না। মার্কিন জনগণের কাছে এবারের নির্বাচনে প্রধান দুই দলের প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা এতো কম হওয়ার ঘটনাটিও ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জরিপে আভাস মিলেছে, ১৯৯০ সাল থেকে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই দলের প্রতিই মার্কিনিদের অসন্তোষ তীব্রভাবে বাড়ছে। সে সময় চালানো জরিপে দেখা গিয়েছিল, দুই দলের কেউই জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে সমর্থ হয় না বলে মনে করতেন মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের কম মার্কিনি। তবে ২০১৬ সালে এসে অর্ধেকেরও বেশি মার্কিনি মনে করেন দুই দলের কেউই এখন আর তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্স-এর জরিপের ফলাফলেও এ বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ৭০ শতাংশ মার্কিনিকে হতাশা বোধ করতে দেখা গেছে। জরিপ বলছে, ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকান এ দুই দলের প্রতিও মার্কিনিদের হতাশার মাত্রাটা প্রায় একই রকমের। জরিপে দেখা যায়, নির্বাচন নিয়ে অর্ধেকেরও বেশি মার্কিনি অসহায় বোধ করছেন। সমান সংখ্যক মানুষের মনে নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। দেশের রাজনৈতিক পদ্ধতির প্রতি আস্থার অভাব রয়েছে প্রতি ১০ জনে ৯ জন আমেরিকানেরই। আর রাজনৈতিক বিভক্তির বাস্তবতায় নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের প্রতি আস্থাহীনতার ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য নেই। রাজনৈতিক দল, মনোনয়ন প্রক্রিয়া এবং সরকারের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে দুই দলের অধিকাংশ সমর্থকই আস্থা রাখতে পারেন না। সব মিলিয়ে জরিপের আভাস অনুযায়ী রিপাবলিকান কিংবা ডেমোক্র্যাট কেউই নতুন ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটাতে পারছেন না বলে মনে করছেন অধিকাংশ আমেরিকান। তারা কোনও সুযোগ্য নেতৃত্বকেও পাচ্ছেন না, যারা তাদের সামনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি হাজির করবে।
জরিপের ফলাফল বলছে, বার্নি স্যান্ডার্সকে নেতা হিসেবে পছন্দই করেছিলেন আমেরিকানরা। তারা মনে করছেন, রিপাবলিকান পার্টির হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি তার দলের জন্য যতটা না ভালো হয়েছে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থিতা প্রত্যাশী বার্নি স্যান্ডার্সকে মনোনয়ন দেওয়া হলে সেটি তার (স্যান্ডার্স) দলের জন্য আরও বেশি ভালো হতো।
এদিকে গত সেপ্টেম্বরে পিউ রিসার্স সেন্টারের জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে আগ্রহ ও আশাবাদের চেয়ে হতাশা ও বিরক্তিই বেশি। প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী ৩১ শতাংশ মানুষ, আশাবাদী ১৫ শতাংশ মানুষ এবং উত্তেনা বোধ করছেন মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে ৫৭ শতাংশ মানুষ হতাশা বোধ করছেন, ৫৫ শতাংশ মানুষ বিরক্তি বোধ করছেন আর আতঙ্কিত বোধ করছেন ৪৩ শতাংশ মানুষ।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনই ধারাবাহিকভাবে বিতর্কিত হয়েছেন। উইকিলিকসের ফাঁস করা মেইলে হিলারির বিরুদ্ধে বার্নি স্যান্ডার্সকে জোর করে হারানো, ইমেইল কেলেঙ্কারি থেকে বাঁচতে ঘনিষ্ঠদের অর্থপ্রদান, লিবিয়ায় অন্যায্য আগ্রাসন, আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে অস্ত্র ব্যবসার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। বিপরীতে ট্রাম্প মুসলমান ও নারীবিরোধিতাসহ বিভিন্ন স্ববিরোধী মন্তব্য করে বিতর্কিত হয়েছেন। নির্বাচনের ফলাফল না মানারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
পিআরআরআই-এর জরিপে তাই দেখা গেছে, দুই প্রার্থীর কেউই কেউই তাদের প্রতি জনগণের ইতিবাচক মনোভাব অর্জনের হার ৫০ শতাংশ টপকাতে পারেননি। একে ‘ঐতিহাসিক অনাস্থা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী হিলারিকে ইতিবাচকভাবে দেখেন ৪১ শতাংশ মানুষ আর ট্রাম্পকে ইতিবাচকভাবে দেখেন ৩৩ শতাংশ মানুষ। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চেয়ে হিলারির জনপ্রিয়তা কম। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জনপ্রিয়তার হার ৪৯ শতাংশ হলেও হিলারির ক্ষেত্রে তা ৪১ শতাংশ। নির্বাচনের ভোট গণনা সুষ্ঠু হবে কিনা সে ব্যাপারে ভোটারদের মধ্যে আস্থার অভাব রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস ৪৩ শতাংশ মানুষের। ৩৮ শতাংশ ভোটারের এ ব্যাপারে সামান্য আস্থা রয়েছে। আর ১৭ শতাংশ ভোটারের ব্যাপারে কোনও আস্থা নেই বললেই চলে।
পিআরআরআই-এর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র যে পথে যাচ্ছে তা নিয়ে মানুষের আশাবাদ ২০১২ সালের নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে ভয়াবহভাবে নেমে গেছে। এখন ৭৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র ঠিক পথে যাচ্ছে, অথচ ২০১২ সালের নির্বাচনের সময় ৫৭ শতাংশ মানুষ এমন ভাবত। পিআরআরআই-এর প্রধান নির্বাহী রবার্ট জোন্স বলেন, ‘মার্কিনিদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের জন্য একটি গণভোটের রূপ ধারণ করেছে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা ১৯৫০ এর দশকের সময়গুলো নিয়ে স্মৃতিকাতর হন। ওই সময় দেশে শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টানদের অনেক বেশি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষমতা ছিল। অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটনের সমর্থকরা গত কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে যে বড় ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন হয়েছে তাতে খুশি।’
ট্রাম্প ও হিলারি এথিকস অ্যান্ড পাবলিক পলিসি সেন্টারের কর্মকর্তা হেনরি অলসেন বলেন, ‘এটা নির্ভর করে আপনি সমাজের স্বর কতটা শুনতে পারছেন তার ওপর। মানুষ যখন সমাজের স্বাভাবিকতার সাপেক্ষে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করে, তখন তারা সমাজে নিজেদের সংযুক্তির প্রশ্নে মরিয়া হয়ে চরমপন্থাকেই নিজেদের অস্ত্র করে তোলে।’ তিনি মনে করেন, সমাজেই চরমপন্থার বাস্তবতা হাজির রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মেটাল কোম্পানির প্রেসিডেন্ট স্টিফেন গ্লিসন। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্নাতককে সিএনএন, ফক্স নিউজ, সিএনবিসি, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ওয়াশিংটন টাইমস এবং ন্যাশনাল রিভিউ-এর মতো সংবাদমাধ্যমগুলো যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। তিনি মনে করেন, ২০১৬ সালের নির্বাচন মার্কিন সমাজের কদর্যতাগুলোকে সামনে এনেছে। ভাঙচুর-শারীরিক আঘাত-বড় মাত্রার বর্ণবাদী দাঙ্গা থেকে জঙ্গিবাদী বোমা হামলা এবং বিপণী কেন্দ্রে ছুরিকাঘাত, দুই দলে বিভক্ত আমেরিকায় সামাজিক বিশৃঙ্খলা জনজীবনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি মনে করেন, গোটা সমস্যায় ট্রাম্পকে দায়ী করার একটা প্রবণতা রয়েছে সেখানকার প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতাশক্তির। তবে এর সঙ্গে দ্বিমত করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে ট্রাম্পের সমর্থকরা রাজনৈতিক সহিংসতার ধারক নয় বরং শিকার। উপরন্তু সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করার মতো শক্তিগুলো বছরের পর বছর ধরে তৈরি হয়ে আসছিলো। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট, কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ মিলে বিপুল সংখ্যক আমেরিকান একমত যে ওবামার অধীনে আন্তঃবর্ণ সম্পর্ক তিক্ততর হয়েছে। দেশের প্রথম আধা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারবার বর্ণবাদী উস্কানিদাতাদের পক্ষ নিয়েছেন এবং পুলিশবিরোধী দাঙ্গার সমালোচনা করেছেন। তার অ্যাটর্নি জেনারেল লরেটা লিঞ্চ বিদ্বেষপূর্ণ বর্ণবাদী বয়ানের আইনি বৈধতা দিয়েছেন; যার বাস্তব ভিত্তি নেই বললেই চলে।’
স্টিফেন গ্লিসন মনে করেন, ওবামার বর্ণবাদী শাসনপ্রণালীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন বর্ণবাদী ক্ষত নিয়ে দেশত্যাগ, জাতীয় ঋণ প্রায় প্রায় দ্বিগুণ হওয়া (২০ ট্রিলিয়ন), ঐতিহাসিকভাবে কর্মসংস্থান কমে যাওয়া, খাদ্য সংকটের তীব্রতা এবং খোদ মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বাস্থ্যবীমার মতো জরুরি বিষয়গুলোর সামর্থ্য না থাকার প্রশ্নগুলো ২০১৬ সালে নির্বাচনি পরিস্থিতিকে এমন হতাশাব্যঞ্জক-অস্থির-সহিংস করে তুলেছে।
হিলারির ফাঁস হওয়া ই-মেইল পক্ষে বিচার বিভাগ :
এফবিআই প্রধানের অযৌক্তিক ও বিধিবহির্ভূত পদক্ষেপে ক্ষিপ্ত মার্কিন বিচারকরা জোট বেঁধে হিলারির পক্ষ নিয়েছেন। নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে একজন প্রার্থী সম্পর্কে এমন অযাচিত অভিযোগের আইনগত বৈধতা নেই। হিলারির বিরুদ্ধে নতুন করে ই-মেইল তদন্ত চেয়ে কংগ্রেসে চিঠি দেওয়ার আগেই এফবিআই পরিচালক জেমস কমিকে এ হুশিয়ারি দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা। কিন্তু বিচারকদের সে কথা কানে তোলেননি কমি। নিজের একগুঁয়েমি সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিয়ে শুক্রবার ই-মেইল তদন্ত চেয়ে কংগ্রেসে চিঠি দেন কমি। এফবিআই প্রধানের এ আচরণ সংস্থাটির। নিজস্ব কাঠামোর সঙ্গেই সাংঘর্ষিক, সঙ্গতিপূর্ণ নয়। গত দু’দিন ধরে (শুক্রবার থেকে রোববার) এফবিআই প্রধানের বিরুদ্ধে এমন মন্তব্যই করছেন বিচারক নেতৃবৃন্দ।
ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারিও এফবিআই প্রধানের এ পদক্ষেপকে ‘অদ্ভুত ও অভূতপূর্ব’ বলে শ্লেষ করেছেন। ডেমোক্রেটের ভোটার সমর্থকরা বলছেন, রিপাবলিকানের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইশারায় পথ চলছেন কমি। বিচার বিভাগের মুখপাত্র অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক এইচ, হোল্ডার জুনিয়রও সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। শনিবার এক বিবৃতিতে জুনিয়র বলেন, কমি বোধহয় নিজের বিবেচনাকেই শ্রেষ্ঠ বিচার বলে। বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন। তা না হলে বিচারকদের তোয়াক্কা না করে কেন তিনি এটা করলেন? তিনি কি ভুলে গেছেন যে, দায়িত্বসীমা অ্যাটর্নি জেনারেলের অধীনে। সবমিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এফবিআই প্রধানের কীর্তিই সবার মুখে মুখে। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে কমির দায়িত্বজ্ঞান নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে বলেও মন্তব্য এসেছে বিচার বিভাগ থেকে।
এদিকে নির্বাচনের নয় দিন আগে নতুন ই-মেইল ইস্যুতে ডেমোক্র্যাটদের অবস্থানচ্যুতিতে শঙ্কায় পড়েছেন হিলারি ক্লিনটন। শনিবার ফ্লোরিডার নির্বাচনী প্রচারে এএফবিআই প্রধানের বিরুদ্ধে সেই ঝাল তোলেন তিনি। বলেন, জেমস কমির হঠাৎ এ পদক্ষেপ অপ্রত্যাশিত, নজিরবিহীন ও গভীর সমস্যাপূর্ণ। হিলারির প্রচার শিবিরও জেমস কমিকে তুলাধোনা করছে। তার প্রচার শিবির প্রধান জন পডেস্টা বলেন, জেমস কমির দেওয়া তথ্য বিদ্রূপাত্মক ও ত্রুটিপূর্ণ।
জেমস কমি যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘ভুল করার কোনো প্রমাণ নেই, ভুল করার কোনো অভিযোগ নেই। এমন কোনো নজির নেই, এগুলো (ই-মেইল) হিলারির।’ তবে এফবিআই পরিচালক জেমস কমির দাবি, তিনি নৈতিকতা বোধ থেকেই নতুন এই তদন্তের বিষয়টি জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে আমি ভুল পথে পরিচালিত করতে চাই না।’
এর আগে কমি জানিয়েছিলেন, ‘তদন্তকারীরা হিলারির মেইলগুলোতে কোনো বিশেষ তথ্য আছে বা কোনো বিশেষ বার্তা বহন করে কি-না, তারা তা খতিয়ে দেখছেন। এফবিআই এরই মধ্যে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর ব্যক্তিগত ই-মেইল সার্ভারে বেশ কিছু স্পর্শর্কাতর তথ্য পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবেদিন ও ওয়েনারের কাছ থেকে এফবিআই একটি ডিভাইস আটক করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ওয়েনার নর্থ ক্যারোলাইনার এক ১৫ বছর বয়সী কিশোরীর কাছে যৌন হয়রানিমূলক বার্তা পাঠিয়েছেন।’
নির্বাচনের শুরু থেকে ই-মেইল ইস্যুতে তোপের মুখে ছিলেন হিলারি। প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এ নিয়ে অনেক জল ঘোলা করেছেন। চার মাস আগে এফবিআই বিষয়টি নিষ্পত্তি করে। সিদ্ধান্ত জানায়- হিলারির ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার-সংক্রান্ত ইস্যু শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়। কারণ ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার করে তিনি যেসব ই-মেইল আদান-প্রদান করেছেন, তাতে রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার মতো তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন