ঠাকুরগাঁওয়ের বৃদ্ধাশ্রমই এখন বৃদ্ধ!
‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই মানবিক কথাটির বাস্তবরূপ দিতে ঠাকুরগাঁও রোড এলাকায় স্থাপিত হয়েছে একটি বৃদ্ধাশ্রম। ২০১১ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল ঠাকুরগাঁওয়ের বৃদ্ধাশ্রমটি। এর পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় এক বছর প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। কিন্তু পাঁচ বছরেও কোনো বৃদ্ধকে পায়নি কর্তৃপক্ষ।
বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনার জন্য কোনো জনবলও নিয়োগ দেয়া হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বৃদ্ধাশ্রম চালু করায় আশ্রয়ের জন্য হয়তবা কেউ যাচ্ছেন না। এ ছাড়াও বৃদ্ধাশ্রমে কোন জনবল না থাকায় বৃদ্ধরা কিভাবে থাকবে সেই দিকনির্দেশনাও মিলছে না।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে খানিকটা দূরে রোড এলাকায় বৃদ্ধাশ্রমটি অবস্থিত। জীবনের শেষ সময়ে এসে ঠাকুরগাঁওয়ের অসহায় প্রবীণদের যেন কষ্ট করতে না হয়, এ উদ্দেশ্যে সমাজসেবা অধিদফতরের জেলা কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত ভবনে এটি উদ্বোধন করা হয়।
এর কয়েক বছর আগেই সমাজসেবা অধিদফতর কার্যালয়টি ওই ভবন থেকে স্থানান্তর করা হয়। বৃদ্ধদের আশ্রয়ের জন্য ভবনটিতে নয়টি কক্ষ রয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে আগ্রহীদের আহ্বান জানানো হলেও তাতে সাড়া মেলেনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃদ্ধাশ্রমের ভবনটি তৈরি হয়েছিল ১৯৩৮ সালে। বর্তমানে ভগ্নপ্রায় অবস্থায় রয়েছে এটি। জরাজীর্ণ ভবনটির দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া এটি অপরিচ্ছন্ন। দেয়ালে ফাটল থাকার কারণেই সমাজসেবা অধিদফতরের জেলা কার্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়। অথচ ওই ভবনেই ২০১১ সালের জুনে বৃদ্ধাশ্রম উদ্বোধন করেন সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন। ফলে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো বৃদ্ধ এখানে থাকার আগ্রহ দেখাননি। প্রশাসন শুধু কাগজে-কলমে বৃদ্ধাশ্রম হিসেবে ভবনটি ধরে রেখেছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আশ্রমে কেউ আসছেন না।
নসিমন নেছা (৬৯) বয়সের এক বৃদ্ধা ঠাকুরগাঁও শহরে ভিক্ষা করে জীবন চালায়। আর রাত্রি যাপন করেন জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সিড়ির নিচে। সে কান্না জড়িত কণ্ঠে জানায়, আমার দুই ছেলে। তাদের অনেক কষ্টে মানুষ করেছি। মানুষের বাড়িতে কাজ করে পড়া লেখা শিখিয়েছি। এখন তার ভাল চাকুরী করে ঢাকায় থাকে। বিয়ের পর থেকে দুজনেই আমার আর খোঁজ খবর নেয় না। তাই নিজের জীবন চালানোর জন্য ভিক্ষা করি। আর রাতে ডিসি সাহেবের অফিসের নিচেই থাকি। আবার সকাল হলে ভিক্ষা করতে বেড়িয়ে পরি। শুনেছি ঠাকুরগাঁও রোড এলাকায় একটা বৃদ্ধাশ্রম আছে। গেছিলাম সেখানে, দেখি কেউ নেই সেখানে।
ঠাকুরগাঁওয়ের প্রবীণ শিক্ষাবিদ মনতোষ কুমার দে জানান, যাদের কোন প্রকার আশ্রয় নেই তাদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম। ঠাকুরগাঁও জেলায় অনেক বৃদ্ধা রয়েছে যাদের আশ্রয়ের কোন ব্যবস্থা নেই। ২০১১ সালে ঠাকুরগাঁও রোড এলাকায় শুধু নামে বৃদ্ধাশ্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এর পর থেকেই তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে নাই। তাছাড়া বৃদ্ধাশ্রমের কোন ভূমিকা নেই। জেলায় জরিপ চালিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে রাখার একটা তালিকা করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের নবাগত জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, ভবনটির বিষয়ে আমি অবগত নই। দ্রুত ভবনটি পরিদর্শন করব। পরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভবনটি বৃদ্ধাশ্রমের জন্য উপযোগী হলে অবশ্যই তা পরিচালনার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
বিয়ের প্রলোভন তারপর ধর্ষণ, এখন অন্তঃসত্ত্বা ৭ম শ্রেণির ছাত্রী
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা চিলারং ইউনিয়নে ধর্ষণের পর ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বাবিস্তারিত পড়ুন
ঠাকুরগাঁওয়ে নারীকে নগ্ন করে নির্যাতনের অভিযোগ
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে একবিস্তারিত পড়ুন
মৃত্যুর কাছে হেরে গেল ‘নষ্ট মোল্লা’
১২ ঘন্টা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরেবিস্তারিত পড়ুন