ঢাকা ডায়নামাইটস যেন একটা পরিবার
রাত পোহালে কোয়ালিফায়ার ও এলিমিনেটর ম্যাচ। চোখে ঘুম নেই চার প্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা ডায়নামাইটস, খুলনা টাইটান্স, চিটাগাং ভাইকিংস ও রাজশাহী কিংসের ক্রিকেটার এবং টিম ম্যানেজমেন্ট ফ্র্যাঞ্চাইজিদের। রোববার রাতে ঢাকার সাথে ম্যাচ জয়ের পর আজ বিশ্রাম নেয়া যেত। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল বিশ্রাম বাদ দিয়ে সোমবার সকাল সকাল নেমে পড়লো অনুশীলনে।
সকাল ১১ টায় শুরু হলো খুলনা টাইটান্সের প্র্যাকটিস। দুপুর গড়াতেই প্র্যাকটিস শেষে হোটেলের পথে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাহিনী। সোমবার বিকেলের শেরেবাংলা স্টেডিয়াম ও একাডেমি মাঠে তিন দল পাশাপাশি প্র্যাকটিসে। একাডেমি মাঠে চুটিয়ে অনুশীলনে এলিমিনেটরের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চিটাগাং ভাইকিংস ও রাজশাহী কিংস। আর শেরেবাংলার মূল মাঠ ও ইনডোরে নিবিড় অনুশীলন ঢাকা ডায়নামাইটসের।
একাডেমি মাঠে অনুশীলন শুরুর আগে ও মাঝে দুই দুইবার দেখা হলো দুই অধিনায়ক তামিম ইকবাল (চিটাগাং ভাইকিংস) ও ড্যারেন স্যামির (রাজশাহীর)। সৌজন্যতা বিনিময়েই সীমাবদ্ধ থাকলো না। খানিক্ষণ হাত ধরেই কথা হলো রাজশাহী ও চিটাগাংয়ের ক্যাপ্টেনের।
ওদিকে বিকেল গড়াতেই শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মাঠের উত্তর দিক ঘেষে আকাশি-নীল জার্সি গায়ে ফুটসাল খেলায় ব্যস্ত ১৫/১৬ জন ক্রিকেটার। সেখান থেকেই আওয়াজ আসল ‘ ব্রাভো ভাই’ প্লিজ ট্রাই টু ডু সামথিং একস্ট্রা।’ কাইন্ডলি লেগকাটার। প্লিজ চেঞ্জ দ্য ট্রিক। কাইন্ডলি দিস টাইম অফ কাটার।’
যার উদ্দেশ্যে এমন বলা হচ্ছিল সেই ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভোও কখনো ইনসুইং আবার কোনটা আউট সুইং করালেন। যেমন মাঠেও করাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। মাঝারি গতির ব্রাভোর বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে বিপাকে ও বিব্রত অনেক ব্যাটসম্যান। তার দুই-তিন রকমের স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে অকাতরে উইকেট দিয়ে এসেছেন দেশি ও বিদেশি ব্যাটসম্যানরা।
সেই ব্রাভো ফুটসালে পা দিয়ে সার্ভিস করেছেন আর তার দলের ও বিপক্ষে থাকা সবাই পরম আনন্দে ফুটসালে ব্যস্ত ঢাকা ডায়নামাইটস। সাকিব, মেহেদী মারূফ, নাসির, মোসাদ্দেক, তানভির হায়দার, আবু জায়েদ,সানজামুল ও সোহরাওয়ার্দী শুভদের সাথে মনের আনন্দে ফুটসাল খেললেন কুমারা সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়বর্ধনে, ডোয়াইন ব্রাভো, রবি বোপারা ও সেকুগে প্রসন্নরা।
তার উচ্ছ্বাস-উল্লাস ও আন্তরিকতা মাখা অভিব্যক্তি দেখে বোঝার উপায় ছিল না এক ঝাঁক বাংলাদেশি ক্রিকেটারের সাথে অতগুলো ভিনদেশি তারকা মিলেমিশে একাকার। পরদিন ঠিক প্রায় একই সময়ে খুলনার সাথে এই মাঠে বিপিএলের চতুর্থ আসরের কোয়ালিফায়ার। তার আগে সাকিব বাহিনীর এ উচ্ছল রূপ দেখে বারবার মনে হচ্ছিল এটাই বিপিএলের স্বার্থকতা।
গায়ে কিছু কাল দাগ অবশ্যই লেগেছে। তবে এই যে দেশি-বিদেশী ক্রিকেটারের মিলেমিশে একাকার হয়ে পড়া এটাই বিপিএল। কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনও নিজ দলের মধ্যকার আন্তরিকতায় মুগ্ধ। তাইতো কণ্ঠে মুগ্ধতা, ‘আমাদের বিদেশি ক্রিকেটাররা দলের সাথে মিলে মিশে একাকার। আজ শেরেবাংলায় যে ফুটসাল খেলতে দেখলেন, সেটা শুধু প্র্যাকটিসের অংশই নয়। সেখানে একটা সম্প্রীতির ছোঁয়াও আছে। পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতাও আছে।’
এর আগে ফুটসালে হেরে পুরো টিমকে ‘নান্দুসে খাইয়েছেন কুমারা সাঙ্গাকারা। ৮০ হাজার টাকা বিলও দিয়েছেন ঐ লঙ্কান তারকা।’ আজও নাকি বাজি আছে। যে দল হারবে। তারাই খাওয়াবে অন্য দলকে। অর্থাৎ সবাই মিলে কোয়ালিফায়ার ম্যাচের আগে ডিনার। এখানেও দলগত সম্প্রীতি ও ঐক্য-সংহতির চিহ্ন পরিষ্কার।
ঢাকা শিবিরে একতা, সম্প্রীতি ঐক্য ও সংহতি না থেকে উপায় আছে। দলটির কোচ যে খালেদ মাহমুদ সুজন। সমবয়সী থেকে শুরু করে ছোটদের সবার অতিপ্রিয় ‘চাচা’। যিনি যেচেই ক্রিকেটারদের সুখে-দুঃখের সাথী।
ক্রিকেটীয় খুটিনাটি বুদ্ধি পরামর্শ দেয়া এবং উৎসাহ উদ্দীপনা জোগানোয় যার জুড়ি মেলা ভাড়। খারাপ সময়ে আপন বড় ভাইয়ের মতো আগলে রাখা এবং পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার পরামর্শ দেয়ায় সমসাময়িকদের মধ্যে তার চেয়ে আন্তরিক আর কেউ আছে কি?
দেশ ও বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান অধিনায়ক। শ্রীলঙ্কার দুই সাবেক অধিনায়ক কুমারা সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়বর্ধনের তো সিনিয়র মোস্ট ক্রিকেটার দলে। তারপরও ঢাকার প্রাণশক্তি সবার প্রিয় ‘চাচা’ খালেদ মাহমুদ সুজন। তার আন্তরিকতার পরশেই ঢাকা শিবিরে এমন পারষ্পরিক সম্প্রীতি-সংহতি। পুরো দলের ওপর খালেদ মাহমুদ সুজন কতটা যত্নবান, তার নজর ও খবরদারি কেমন?
তার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ শোনেন। তখন সূর্য্য ডুবু ডুবু প্রায়। ইনডোর থেকে দুই সাংবাদিকের সাথে কথা বলতে বলতে শেরেবাংলায় ঢুকলেন ঢাকা কোচ। দেখলেন মাঠের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে রবি পোপারা, এভিন লুইস, সাকিব আল হাসান ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ছক্কা হাঁকানোর প্র্যাকটিসে ব্যস্ত। ঠিক সেন্টার উইকেটের পাশে দাঁড়িয়ে ঐ চার ক্রিকেটার।
একজন বল ছুড়ে দিচ্ছেন আর পর্যায়ক্রমে সাকিব, বোপারা, লুইস-মোসাদ্দেক সৈকত সেগুলোতে ফুলটচ করে নিয়ে সোজা আবার কখনো লং অফের ওপর দিয়ে সীমানার ওপারে পাঠাচ্ছেন।
খালেদ মাহমুদ স্বশব্দে ডাকলেন মোসাদ্দেককে, ডেকে ঐ ছক্কা মারার প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াতে বললেন।
কারণ একটাই- অযথা শক্তি ক্ষয়। রাত পোহালে বিগ ম্যাচ। মোসাদ্দেকের মতো তরুণরা আগের দিন সন্ধ্যায় অযথা ছক্কা হাঁকানোর প্র্যাকটিস করতে গিয়ে যদি শক্তি খুইয়ে বসে। এ চিন্তায় নিষেধ করা। মোসাদ্দেক সৈকতও কোচের কথা শুনে সোজা ড্রেসিংরুমে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন