শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

তনু হত্যাঃ অশ্রু দিয়ে লেখা সে গান!

মেয়েটা গেয়েছিল, চলে যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে। সে গলা ছেড়ে গেয়ে উঠেছিল- অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান, যেন ভুলে যেও না, একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে, এ বাঁধন খুলে যেও না! গান তার গানই থাকল, বাঁধন গেল খুলে। অশ্রু দিয়ে লেখা যে গান, সেও গেল সবাই ভুলে!

কোন মেয়েটার কথা বলছি? মনে পড়ছে না? অবশ্য মনে না পড়ারই কথা। এমন তুচ্ছ ঘটনা বেশি দিন স্মৃতিতে জিইয়ে রেখে লাভ কী? এসব ঘটনা যত তাড়াতাড়ি ভোলা যায়, দেশ ও জাতির জন্য তত মঙ্গল।

এতক্ষণ নিশ্চয়ই হাতড়ে বেড়াচ্ছেন কোন মেয়ের কথা বলা হচ্ছে, কেই বা গাইল এ গান? মনে না পড়লে বলি শুনুন- এ গান গেয়েছিল সোহাগী জাহান তনু। সুরক্ষিত ক্যান্টনমেন্টের ভেতর যাকে অজানা(!) কারণে আপনারা মরে পড়ে থাকতে দেখেছেন, সেই মেয়েটাই শেষবারের মতো গেয়েছিল এই গানটি।

প্রকৃতি যেমন বড়সড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগে তার আঁচ পায়, মানুষও বোধহয় সে রকম। চলে যাওয়ার আগে, এই আলো-ছাঁয়ার পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেওয়ার আগেই তার কাছে কোনো এক অজানা উপায়ে সে সংবাদ পৌঁছে যায় হয়তো। শুধু কখন কীভাবে ঘটবে তার ইঙ্গিতটুকু পাওয়া যায় না। পেলে মানুষ ঘর থেকেই হয়তো বের হতো না। অবশ্য মৃত্যুকে রোধে এমন ঘর ত্রি-ভুবনে নেই। তবে স্থান-কালের ইঙ্গিত না থাকলেও, ওপারের হাতছানি যেন ঠিকই জানান দেয় নিজের উপস্থিতি।

নইলে সোহাগী জাহান তনু মৃত্যুর ঠিক আগমুহূর্তে শ্রীমঙ্গলের শিক্ষাসফর থেকে ফেরার পথে গাইব কেন এ গান- অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান যেন ভুলে যেও না! পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে যাওয়ার আগে তার প্রাণের সমস্ত আকুতি যেন ঢেলে পড়েছিল এ গানে। এটাই ছিল তনুর শেষ গাওয়া গান। একদল প্রাণোচ্ছল স্বপ্নবাজ ছেলেমেয়ে হৈ-হুল্লোড় করতে করতে গাড়িতে ফিরছিল সেদিন। সবাই যখন আনন্দ-উল্লাসে-উদযাপনে ব্যস্ত, তনু ঠিক সে রকম একটি মুহূর্তে গেয়ে উঠেছিল এ গান। এত শত গানের ভিড়ে এই গানটিই হয়ে থাকল তার শেষ ঝংকার। একটাই শুধু চাওয়া ছিল তার- যদি আমি চলেও যাই কভু, এ গান তোমরা মনে রেখ! আমাকে ভুলে যেও তাতে দুঃখ নেই, শুধু আমার কাজকে মনে রেখ। আমার থিয়েটার, আমার নাচ, আমার গান সবকিছু যেন থেকে যায় তোমাদের হৃদয়ের গহিন কোণে।

আমরা তনুর শেষ আকুতিটুকুও রাখতে পারিনি। ভুলে গেছি তাকে। তার সব চাপা পড়ে গেছে বড় বড় ঘটনার আড়ালে। বেশ কয়েকদিন বিচার চাই বিচার চাই বলে গলার রগ ফুলিয়ে মিছিল-মিটিং, মানববন্ধন করে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে সবাই গাঁট মেরে বসে পড়েছে যে যার যার জায়গায়। তনু হত্যার কোনো সুরাহা হয়নি। তদন্তের ভার এর কাঁধ থেকে ওর কাঁধ, ওর কাঁধ থেকে তার কাঁধে স্থানান্তরিত হয়েছে বারবার। হত্যারহস্য যেন তলিয়ে গেছে অন্ধকার থেকে আরো গভীর অন্ধকারে। যে অন্ধকারের কোনো কূল-কিনারা নেই।

দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হয়ে গেছে আজ ১৮ দিন। তদন্ত প্রতিবেদনের এখনো কোনো হদিস নেই। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগ এই প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করে আছে। সংশ্লিষ্ট ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিসেরা প্রতিবেদন হাতে পেলেই তাঁরা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেবেন। যদিও দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সত্যিই তনুর হত্যাকাণ্ডের কারণ খুঁজে বের করতে পারবে কি না বা এর ভিত্তিতে তদন্ত সংস্থাগুলো কতটা কী করতে পারবে, সে নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও তনুর মৃত্যুর কারণ শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

পত্রপত্রিকায় তনুর খুব কাছের বন্ধুদের বক্তব্য ছাপা হয়েছে। তাদের কথা থেকে জানা যায়, তনু ছিল প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর, আবেগি, উচ্ছল একটি মেয়ে। যেমন পরিশ্রমী, তেমন কর্মঠ। নিজের টিউশনির টাকায় চলত লেখাপড়ার খরচ। আজকালকার ছেলেমেয়েরা যেখানে নিত্যনতুন জোড়ায় জোড়ায় প্রস্থে প্রস্থে জামাকাপড় ছাড়া ঘরের বাইরে বের হয় না, তনুর সেখানে ছিল মাত্র তিনটি জামা। তার সঙ্গী-সাথিরা জানিয়েছে- খুব সাধারণ আর পরিপাটি ছিল তনু। সারা বছর তারা তাকে তিনটি পোশাকই পরতে দেখেছে কেবল। পোশাক আশাকে সাধারণ হলে কি হবে, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার ধার ছিল তুখোড়।

প্রথম আলোর ক্রোড়পত্র ছুটির দিন লিখেছে- কেবল থিয়েটারে নয়, অল্প কয়েক দিনে কলেজের অনেক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল তনু। শিক্ষকরাও ওর নাম শুনলে নিশ্চিন্ত হতেন, ‘ও, তনু আছে? তাহলে তো চিন্তা নেই।’ তনু ছিল কি থিয়েটার, কি কলেজ ক্যাম্পাস সবারই মধ্যমণি।

গত মার্চ মাসে কলেজের বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল সে। সর্বোচ্চ তিনটি বিভাগে অংশ নেওয়া যায়। তিনটিতে অংশ নিয়ে তনু পুরস্কার জিতেছিল তিনটি বিভাগেই! একক নৃত্যে প্রথম, দ্বৈত নৃত্য ও সংগীতে দ্বিতীয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার কথা ছিল ২৬ মার্চে। সে সুযোগ আর হলো না! তার আগেই তার ভবলীলা সাঙ্গ করে পাঠিয়ে দেওয়া হলো নিরুদ্দেশের পথে!

কেবল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের গণ্ডিতেই নয়, তনুর প্রতিভা ছড়িয়ে পড়েছিল আরো বড় পরিসরে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলোর মধ্যে যে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হয়, সেখানেও তনু সফল হয়েছিল। নৃত্যে প্রথম হয়েছিল জেলা পর্যায়ে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় পর্যায়ে অংশ নিতে গিয়েছিল চট্টগ্রামে। ভালো করেছিল সেখানেও। এমন একটি মেয়েকে কে বা কারা ছিন্নভিন্ন করল, আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে মেরে ফেলল, তার হদিস এখনো মিলল না। মিলবে যে, সেই সম্ভাবনাও ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে দিনকে দিন।

তনু এখন নেহাতই কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া এক অভাগী বালিকা! যার স্বপ্নের ডানাগুলো কেটে কুচি কুচি করে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পরপারে। যার দায় নেওয়ার কেউ নেই। যার হত্যাকারীদের খুঁজে বের করা যেন কারো কর্তব্য নয়! তনু যেন কেউ নয়, সে যেন কারো সন্তান নয়, সে যেন ছিলই না এ দেশে কোনোকালে! এমনই নিশ্চুপ মেরে গেছে চারপাশ। তদন্তের নামে হাঁসফাঁস করে দিন গুজার করছেন আমাদের সুদক্ষ তদন্ত সংস্থাগুলো!

আমরাও আছি ঠিকমতোই। নির্বাক, নির্বিকার। দেখে যাওয়াই যেন কাজ আমাদের! এক তনু গেছে, আরো তনু যাবে। আরো অনেক অনেক তনু বা ইয়াসমিন, সোহাগী, সালেহা, রেশমা, পাখি, আঁখিরা সংবাদপত্রের পাতা দখল করে শিরোনাম হবে। চৌদ্দগুষ্টির কারো নাম যাদের অক্ষরে ছাপা হয়নি কোনোদিন, তাদেরও পরিবারের কারো কারো নাম পত্রিকার পাতায় পাতায় লাল ব্যানারে ছাপা হবে। টেলিভিশনগুলো সন্ধ্যার চা-নাশতার পর বা নিশুতি রাতে বিশেষ টকশোর আয়োজন করবে। রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাবে, টক অব দ্য টাউন, টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে উঠবে তনুরা! তারপর?

তারপর আর কী? নিস্তব্ধ নীরবতা! সময় বয়ে যাবে সময়ের নিয়মে। কারো কিছুই হবে না। কোনো অপরাধী ধরা পড়বে না! কোনো হত্যার মোটিভ উদঘটিত হবে না! কোনো রহস্যের জাল ছিন্ন হবে না, বরং গভীর থেকে গভীরে তলিয়ে যাবে আরো। আরো উল্লাসে নিত্যনতুন কায়দায় ঝাঁপিয়ে পড়বে নরপশুর দল। দাপিয়ে বেড়াবে পথঘাট, নগর-বন্দর।

এসব বিচারহীনতার সংস্কৃতির ভয়ঙ্কর চড়ামূল্য যে আমাদের দিতে হবে একদিন সে কথা বলাই বাহুল্য।

তবু আমরা ভুলে যাব। ভুলে গিয়ে আরাম-আয়েশে দিনাতিপাত করব। তনুদের মনে রাখব না। শুধু তনু কেন, কাউকে মনে রাখব না। আমরা ভুলে যেতে পারি, খুব সহজেই ভুলে যেতে পারি, সে সাগর-রুনিই হোক, ত্বকী-ইয়াসমিনই হোক বা বাঁশখালীতে পুলিশের গুলি খেয়ে মরে যাওয়া চাষার দলই হোক। মনে রেখে লাভ কী?

যে যতই গলায় দরদ ঢেলে গাক- অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান যেন ভুলে যেও না, আমরা ভুলে যাবই!

লেখক : শিক্ষক, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ

দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে স্বাগতিক ওয়েস্টবিস্তারিত পড়ুন

রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ

যমুনা ফিউচার পার্কে মোবাইলের দোকানে চুরির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভবিস্তারিত পড়ুন

যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা

থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশি নাগরিকদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • ধর্ম উপদেষ্টা: মসজিদে নববীর আদলে গড়ে তোলা হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ
  • রাজশাহীতে মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য ভাঙারির দোকানে
  • ২ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-যশোর-বেনাপোল রুটে ট্রেন চলবে
  • ভরিতে এবার ১,৯৯৪ টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম
  • সংস্কার হলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত কমানো সম্ভব জানালো সিপিডি
  • রাজশাহীতে সমন্বয়ককে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ
  • ড. ইউনূস: খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত
  • দেশের নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দীন
  • ঢাবি ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে শাটল বাস সার্ভিস
  • পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে বন্দুকধারীর গুলি, নিহত ৩৮
  • সায়েন্সল্যাব এলাকা থেকে সিটি কলেজ সরিয়ে নেওয়ার দাবি ঢাকা কলেজের
  • ড. ইউনূস: আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে, এটি ত্রুটিপূর্ণ