তনু হত্যাকান্ড: সেনানিবাসে ফের সিআইডি
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর হত্যার এক মাসেও রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি তদন্তকারী কর্মকর্তারা। হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ ৩০ দিন পেরিয়ে গেলেও খুনিরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তনুর খুনিদের শনাক্তও করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তনু হত্যা মামলা তদারকি করতে মামলার তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান সিআইডি ঢাকার সিনিয়র পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি দল ১২ দিন পর ফের গতকাল মঙ্গলবার আবারো কুমিল্লায় এসেছেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উচ্চ পর্যায়ের এ দলটি কুমিল্লা সেনানিবাসে প্রবেশ করেন। তনুর মরদেহ পাওয়ার স্থান পুনরায় পরিদর্শন ও মামলার বিষয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ছাড়াও এ প্রতিনিধি দল বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।দুপুর সোয়া ১ টায় মুঠোফোনে সিআইডি কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান জানান, ‘মামলার তদন্তে ঢাকার সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা এখন সেনানিবাসের ভেতর রয়েছি। সেখানে মামলার বিষয়ে নানা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
এদিকে এক মাসেও মেয়ের হত্যাকারীরা গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তনুর বাবা ইয়ার হোসেন। তিনি বলেছেন- সিআইডির কাছে তদন্তভার যাওয়ার পর আশা করেছিলাম আমার মেয়ের খুনিরা দ্রুত গ্রেফতার হবে। কিন্তু এতদিনেও তদন্তের কোনো অগ্রগতির খবর আমার জানা নেই। জানি না মেয়ে হত্যার বিচার পাব কিনা। দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের দিকে তাকিয়ে আছি-যোগ করেন ইয়ার উদ্দিন।
জানা যায়, গত ২০ মার্চ তনু হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ ও ডিবির হাত বদল হয়ে মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছেন কুমিল্লা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মো. ইব্রাহিম। গত ৩০ মার্চ সিআইডি ঢাকার সিনিয়র পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আখন্দকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে মামলার তদারকি করতে সিনিয়র পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আখন্দের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের এ দলটি গত ২, ৩ ও ৭ এপ্রিল সেনানিবাস এলাকায় তনুর মরদেহ উদ্ধারের স্থানসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। এ সময় এ দলটি তনুর মা-বাবা, ডাক্তার, নার্সসহ কিছু সামরিক ও বেসামরিক লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
সর্বশেষ গত ১০ এপ্রিল সিআইডির ডিআইজি (ক্রাইম-ইস্ট) মো. মাহবুব মোহসিনের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি দল কুমিল্লা সেনানিবাসে আসেন। এ সময় উচ্চ এ দলটি কুমিল্লা সেনানিবাসের ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের এরিয়া কমান্ডার ও জিওসি মেজর জেনারেল মো. এনায়েত উল্লাহ ও স্টেশন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কাজী শওকত আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে তারা তনুর মরদেহ পাওয়ার স্থান পরিদর্শন ও তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে কুমিল্লা সিআইডি কার্যালয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। কিন্তু সিআইডির এতো সব দৌড়ঝাপের মাঝে ঘটনার প্রায় ১ মাসেও হত্যার রহস্য বের করতে পারেনি সিআইডি, ব্যাব, পুলিশ, পিবিআই, ডিবিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তনু হত্যার মামলায় এ যাবৎ স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবী, এক সেনা কর্মকর্তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছেলে, ঘটনাস্থলে আশপাশের ডিউটিতে থাকা কয়েক সেনা সদস্য ও প্রথম দফা ময়নাতদন্তকারী দুই চিকিৎসকসহ অন্তত ৮০ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিআইডি কর্মকর্তারা। ওইসব জিজ্ঞাসাদের তথ্য নিয়ে গতকালও ফাইল ওয়ার্ক করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়া মামলার আর কী অগ্রগতি আছে জানতে চাইলে সিআইডির কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তনু হত্যার তদন্তে অবশ্যই অগ্রগতি রয়েছে বলে দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দলের প্রধান ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা জানান, যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে, ওই প্রতিবেদনগুলো হাতে পাওয়া মাত্র তিন সদস্যের বোর্ড বসে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করবে। এক প্রশ্নের জবাবে ডা. সাহা দাবি করেন, পরীক্ষায় যা পাওয়া যাবে তাই আমরা উল্লেখ করব। বিশেষ কোনো মহলের প্রভাব ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনকে প্রভাবিত করতে পারবে না।
২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় নিজের বাড়ির কয়েকশ’ গজের মধ্যে পাওয়া যায় ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনুর ক্ষতবিক্ষত লাশ। পরদিন কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ না করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত কলেজছাত্রীর বাবা ইয়ার হোসেন। এরপর ৪ দিন মামলা তদন্তে ছিল কোতোয়ালি পুলিশ। ২৫ মার্চ মামলা স্থানান্তর করা হয় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ৪ দিন মামলার তদন্ত করে ডিবি। কিন্তু খুনিরা শনাক্ত ও গ্রেফতার না হওয়ায় থানা পুলিশ ও ডিবির হাত ঘুরে ২৯ মার্চ আলোচিত এ মামলার তদন্তভার দেয়া হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য ৩০ মার্চ তনুর লাশ কবর থেকে তোলা হয়। এরপর থেকে কুমিল্লার এ কলেজছাত্রী চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটি তদন্ত করে আসছে সিআইডি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ভরিতে এবার ১,৯৯৪ টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনবিস্তারিত পড়ুন
সংস্কার হলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত কমানো সম্ভব জানালো সিপিডি
মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কার হলে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ১১বিস্তারিত পড়ুন
রাজশাহীতে সমন্বয়ককে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় এক সমন্বয়ককে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগবিস্তারিত পড়ুন