কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ বদ্ধপরিকর। পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকান্ডে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য কোনো আন্দোলন বা বিক্ষোভের প্রয়োজন নেই। এটা পুলিশের পেশাগত ও নৈতিক দায়িত্ব।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘তনু হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্তে জনগণের সহায়তা চায় পুলিশ’ শীর্ষক গণমাধ্যমে পাঠানো পুলিশের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় সোহাগী জাহান তনু খুন হওয়ার নয় দিন পরও সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে সোহাগীর লাশ সেনানিবাসে তাঁদের বাসার দুই-তিন শ গজ দূরে উদ্ধার হয়। খুন করার আগে হত্যাকারীরা সোহাগীর মাথার হিজাব টেনে খুলে ফেলে, মাথার লম্বা চুল কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলে।

সোহাগী হত্যাকান্ডের ঘটনায় তাঁর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মচারী ইয়ার হোসেন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। আজ মঙ্গলবার ওই হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়েছে।

এদিকে তনুর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ চলছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তনু হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ বদ্ধপরিকর। যাঁরা হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানাচ্ছেন, তাঁদের দাবির প্রতি পুলিশের শ্রদ্ধা রয়েছে। তবে সে জন্য রাস্তা ঘাটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। পুলিশের অপরাধ দমন এবং উদ্ঘাটনের পেশাগত দায়িত্বও বাধাগ্রস্থ হয়। কোন হত্যাকান্ডে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য কোনো আন্দোলন বা বিক্ষোভের প্রয়োজন নেই। এটা পুলিশের পেশাগত ও নৈতিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পুলিশ অঙ্গীকারাবদ্ধ। সে জন্য আমরা (পুলিশ) সকলের কাছে সোহাগী জাহান তনু হত্যাকান্ডের যথাযথ তদন্তের জন্য অনুকুল সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। এক্ষেত্রে সমব্যাথী সকলকে ধৈর্য ধরে পুলিশি তদন্তের সহযোগিতা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোহাগী জাহান তনুর মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের আসামি গ্রেপ্তার সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিবর্গের আন্দোলনের বিষয়টির প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। পুলিশ সদরদপ্তর মানুষের ওই অনুভুতি ও দাবিকে যথাযথভাবে সম্মান করে। ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে বিশেষজ্ঞ ইউনিট সিআইডিকে এই হত্যাকান্ডে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে জেলা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, তনু হত্যাকান্ড প্রকাশ্যে ঘটেনি। তাই সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সাক্ষী সংগ্রহ করা সময়সাপেক্ষ বিষয়। নানা বস্তুগত সাক্ষ্য, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সাক্ষ্য সংগ্রহ করা, বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়নের মাধ্যমে এ ধরনের ক্লুলেস অপরাধে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়। অনুমানের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করলে সেক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তদন্ত ভুল হলে সবার কাছেই তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এমনকি প্রকৃত দায়ী ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গ সেই ভুলের দিকে আঙুল তুলে নানা সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। এতে মামলাটির ন্যায়বিচার ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সে জন্য সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রকৃত আসামি চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তনু হত্যাকান্ডের প্রকৃত আসামিকে চিহ্নিত করেই তাকে গ্রেপ্তার করার ব্যাপারে আমরা প্রত্যয়ী। তবে এটা অবশ্যই সময় সাপেক্ষ। আরও লক্ষণীয় যে, পুলিশকে বেশির ভাগ সময়ই কাজ করতে হয় আইন-কানুন ও বিধি-বিধানের মধ্যে থেকে। পুলিশের পেশাগত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা সংবলিত তদন্ত কর্মকর্তাদের এ ধরনের ক্লুলেস ও স্পর্শকাতর মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে যথেষ্ট সাফল্য আছে। ক্লুলেস মামলা তদন্ত করা সব সময়ই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অত্র মামলার তদন্তের জন্য গঠিত দল এই মামলাটিতে উদ্ঘাটনে যথাযথ মনোযোগী এবং আন্তরিক।