তারেকের কারাদণ্ড: বিপাকে বিএনপি, হতাশায় নেতাকর্মীরা
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দুর্নীতির মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এতে পরবর্তী জাতীয় সংসদসহ সব ধরনের নির্বাচনে তার অংশ নেয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা বিচারাধীন। সব মিলিয়ে নির্বাচনের রাজনীতিতে এক ধরনের বেকায়দায় পড়েছে দলটি। তবে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তারা প্রস্তুত।
অর্থ পাচার মামলায় নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদ- ও ২০ কোটি টাকার অর্থদ-ে দ-িত করেছেন হাইকোর্ট। গত বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এতে পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারালেন বিএনপির দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এ সাজা না হলে তারেক লন্ডনে থেকেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন।
বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা বর্ণনা করা আছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইনে। এ আইনের ১২ ধারায় কোনো নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা অংশে বলা হয়েছে, ফৌজদারি আইনে দ-প্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতি ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইনেও একই কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ফৌজদারি অপরাধে কেউ দুই বছর বা বেশি সাজা ভোগ করলে ও সাজা ভোগের পর পাঁচ বছর অতিক্রান্ত না হলে সে ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে ফৌজদারি মামলায় হাইকোর্টের রায়ের পর একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিলম্ব মার্জনার আবেদন করেও আপিল করার সুযোগ থাকে।
বর্তমানে রাজনৈতিক তৎপরতা স্তিমিত হয়ে এলেও বিএনপি শুরু থেকেই একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। এক্ষেত্রে দলটি বর্তমান সংসদকে অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। যদিও সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী নির্বাচন ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যবর্তী সময়ে হওয়ার কথা। তবে নির্বাচন যখনই হোক না কেন, তাতে অংশ নেয়াটা তারেকের জন্য অনিশ্চিত হয়ে গেল। মামলার রায়ে সাজা হওয়ার কারণে দেশের বাইরে থেকে তারেক জিয়ার পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আইনজীবীরা বলছেন, এ রায়ের ফলে পরবর্তী নির্বাচনে তারেক রহমানের অংশ নেয়াটা অনেকগুলো যদি ও কিন্তুর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে তারেকের যা করণীয়, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা তার পক্ষে দুরূহ। ফলে পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে আইনি কোনো সুবিধা নিতে ব্যর্থ হতে পারেন তিনি।
তারা বলছেন, নির্বাচনে যোগ্য হতে হলে তারেককে দেশে ফিরে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে। নিয়মিত আপিলে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে তাকে। নির্বাচনের আগে এসে আপিল করার ক্ষেত্রে প্রথমে আপিল বিভাগ থেকে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ না পেলে নির্বাচন করতে পারবেন না তারেক। তবে যে প্রক্রিয়াই অবলম্বন করা হোক না কেন আগে আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতে হবে তারেককে।
যোগাযোগ করা হলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সময় হলে তারেক দেশে ফিরে আপিল করবেন। তখন দেখানো হবে, এ মামলা সম্পূর্ণ বে আইনিভাবে করা হয়েছে।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়েরকৃত দুটি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। গত বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় চার সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এর আগের দিনও নেয়া হয় দুজনের জবানবন্দি। ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ আদালতে চলমান মামলাটির পরবর্তী ধার্য দিন ২৮ জুলাই। কারা অধিদপ্তরের মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এ বিশেষ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাও চলছে একই বিশেষ আদালতে। আগামী ১১ আগস্ট এ মামলার তারিখ ধার্য রয়েছে। এরই মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে মামলাটির। এছাড়া মামলার দুই আসামি আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে তাদের বক্তব্যও দাখিল করেছেন। তবে মামলার বাদী হারুনুর রশিদের চাকরির বৈধতার প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন খালেদা জিয়া। এ আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রসঙ্গত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এতে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে জমি কেনার সময় ৬ কোটি ৫২ লাখ ৭ হাজার টাকা অবৈধভাবে লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি করা হয়।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আইনি লড়াইসহ আন্দোলন করে এ মিথ্যা রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। এছাড়া আইনি বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখছে বিএনপি। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বিএনপি সবসময় প্রস্তুত। সুত্র-আমাদের সময়
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন