তিন-তালাক বন্ধ করেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র, ভারত পারবে না?
তিন-তালাকের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে কেন্দ্র, পার্সোনাল ল’বোর্ডের নৈতিক সমর্থনই থাকবে
সম্প্রতি একটি সুসংবাদ চোখে পড়ল। কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে মুসলিম মেয়েদের তিন-তালাক প্রথার হাত থেকে বাঁচানোর আর্জি নিয়ে। রাগের মাথায় কিংবা নেশার ঘোরে স্বামী স্ত্রীকে তিন বার ‘তালাক’ বলে দিলে সেই নারী বিবাহবিচ্ছিন্না হয়ে যান। ওই নারীকে তাঁর তালাক দেওয়া স্বামী পুনরায় গ্রহণ করতে পারেন, যদি ওই নারী অন্য কোনও পুরুষকে বিবাহ করে সেখানে তালাকপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসেন। এসএমএসে তিন বার ‘তালাক’ লিখে প্রবাসী স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিচ্ছেন, ইদানীং এমন উদাহরণও বিরল নয়। এই অযৌক্তিক তিন-তালাক নিয়ে বহু সময়েই অনেকে সরব হয়েছেন। কিন্তু কোনও এক রহস্যজনক কারণে তিন-তালাক রদ করা যায়নি ভারতে। অথচ, পাকিস্তান বা বাংলাদেশে তিন-তালাক প্রথা উঠে গিয়েছে।
ভারতীয় সুন্নিদের কিছু অংশের মধ্যে তিন-তালাকের প্রচলন রয়েছে। অন্যদিকে, শিয়া সম্প্রদায় মনে করে, তিন-তালাক অজ্ঞ লোকের প্রথা। তাদের মতে, হজরত মহম্মদ এর ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। সুন্নিদের চারটি মজহাব— হানাফি, মালিকি, শাফায়ি ও হানবালি। প্রথম তিন শাখা তিন-তালাকে বিশ্বাসী। তবে হানবালিরা একে অবৈধ মনে করেন। তুরস্ক, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, ইরাক, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ তিন-তালাক নিষিদ্ধ করেছে। বছরআটেক আগে অল ইন্ডিয়া মুসলিম উইমেন’স পার্সোনাল ল’ বোর্ড এই চটজলদি তালাকের বিরোধিতা করেছিল। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড তাদের মডেল নিকাহ্-নামায়
তিন-তালাককে নিরুৎসাহিত করেছে। কাজেই, তিন-তালাকের বিরোধিতা করে কেন্দ্র যে আদালতে যাচ্ছে, তাতে পার্সোনাল ল’ বোর্ডের নৈতিক সমর্থনই থাকবে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির দাবির প্রেক্ষিতেই কেন্দ্র যে তিন-তালাক প্রথার বিরোধিতা করছে, এমন নয়। কেন্দ্রের মত— এই চটজলদি তালাক অযৌক্তিক এবং নারীর অধিকারের পরিপন্থী।
এই প্রসঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর নারীর খোরপোশের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। শাহবানু মামলার কথা সকলেরই মনে আছে। ইসলাম তিন ধরনের খোরপোশের কথা বলে থাকে। এক, পোষ্য প্রাণীদের খোরপোশ দেওয়া বাধ্যতামূলক। দুই, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের খোরপোশ দেবেন তাঁদের পিতামাতা, বয়স্ক পিতামাতাকে সন্তান। তিন, স্বামী স্ত্রীয়ের ভরণপোষণ করবেন। প্রথমটির ভিত্তি মালিকানা। দ্বিতীয়টির ভিত্তি স্বাভাবিক অধিকার ও কর্তব্যবোধ। তবে তৃতীয়টির ভিত্তি অস্পষ্ট। বিচ্ছেদের পরে ভরণপোষণের দায় স্বামীর থাকে কি না, তাই তা অমীমাংসিতই। তবে ধর্মজ্ঞেরা বলেন, বিবাহবিচ্ছেদের পরে স্ত্রীকে খোরপোশ দেবেন স্বামী, এটাই ধর্মের বিধান।
১৯৯৫ সালে ঢাকা হাইকোর্ট জনৈক হাফিজুর রহমানকে তাঁর তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। বিচারপতি রব্বানি ও হক তাঁদের রায়ে জানান, বিবাহবিচ্ছিন্না তাঁর বাকি জীবনভর খোরপোশ পাবেন, যদি না তিনি পুনর্বিবাহ করেন। তাঁদের রায় যে কোরানের নিয়ম মেনেই, সে কথাও জানিয়েছিলেন দুই বিচারপতি।
তিন-তালাক রদ করা থেকে খোরপোশ বিষয়ে বলিষ্ঠ নির্দেশ— প্রতিবেশী বাংলাদেশ পারলে বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারত পারবে না কেন?
■ লেখক রামকৃষ্ণ মিশন বেলুড় বিদ্যামন্দিরে দর্শনের বিভাগীয় প্রধান। মতামত নিজস্ব
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন