‘তোপের মুখে আমার সম্পাদক বাবা’
এক এগারোর সময়ে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের ‘ভুল’ খবর প্রকাশের দায় স্বীকার করার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা দায়েরের পর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি নিবন্ধ লিখেছেন তার কন্যা তাহমিমা আনাম। ‘মাই ফাদার, দ্য এডিটর, আন্ডার ফায়ার’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধটির চৌম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
আমি অনেকগুলো ভিডিও এবং ছবি দেখতে পেয়েছি। প্রথমটির শিরোনাম ছিল ‘স্বীকারোক্তি’ এবং সেখানে একটি টক’শো অনুষ্ঠানে উপস্থাপিকার দ্বারা সংবাদপত্রের সম্পাদককে পরিকল্পিতভাবে আগ্রাসী বক্তব্য শোনানো হয়। আরও নীচের দিকের একটি ছবিতে দেখতে পাই লোকজন ওই ব্যক্তির কুশপুত্তলিকা দাহ করছেন। সেখানে ফটোশটে এডিট করা আরও একটি ছবি ছিল যেখানে ওই মানুষটির মাথায় শয়তানের শিং বসানো হয়েছে। এরপর সংবাদ হয়েছে, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৩০, ৪০ তারপর ৭০টি। সর্বশেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেছেন ওই সম্পাদকের পদত্যাগ করে বিচারের সম্মুখীন হওয়া উচিত।
এই সম্পাদক আমার বাবা এবং পত্রিকার নাম দ্য ডেইলি স্টার, ইংরেজি-ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে যাত্রা শুরু করিয়েছিলেন ২৫ বছর আগে।
আমার বাবা মাঝে মাঝে কৌতুক করে বলতেন আইসক্রিম পার্লার খোলার খুব ইচ্ছে তার। কিন্তু এর বদলে ৪১ বছর বয়সে সংবাদপত্র খোলার জন্য তিনি জাতিসংঘের চাকরি ছেড়ে দেন।
তখন আমার বয়স ১৫ এবং আমরা থাইল্যান্ডে থাকি। খুব তাড়াতাড়ি আমরা সকল কিছু গুছিয়ে নিয়ে আমাদের শহর ঢাকায় চলে আসি। প্রেসিডেন্ট এইচ. এম. এরশাদের আট বছরের স্বৈরশাসন শেষ হওয়ার পর ১৯৯১ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশ পায় সংবাদপত্রটি। এর ২০ বছর আগে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিলেন দেশকে এবং দেশের গণতন্ত্রের সূচনাকালে সে দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি দেশে ফিরেছিলেন, দেশের প্রতি তার কর্তব্য পালনে।
এডিটর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের একমাসের মাথায় তিনি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা করেন। কেননা, ওই সরকার বিরোধী দল এবং দ্বিদলীয় ঐক্যমত তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছিলো। পরে তিনি বিরোধী দলের সংসদ বর্জন নিয়েও সমালোচনা করেন।
আস্তে আস্তে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত ডেইলি স্টার এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাংলায় প্রকাশিত সংবাদপত্র প্রথম আলো দেশের সর্বাধিক প্রকাশিত সংবাদপত্রের তালিকায় স্থান করে নেয়। প্রিন্ট মিডিয়ায় বড় স্থান দখলের পাশাপাশি দেশে স্বাধীন সংবাদিকতার পরিবেশ তৈরি করে।
তবে এরপরও দেশের শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত নন আমার বাবা। তিনি সরকার, গোয়েন্দা বাহিনী, সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য যেসব জায়গাতে তিনি স্বচ্ছতা চান সেসব জায়গা থেকে চাপের সম্মুখীন হয়েছেন।
২০০৭ সালে যখন সেনাবাহিনী গঠিত তত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় তখনও এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি। সেসময়ে গোয়েন্দা সংস্থা সংবাদ মাধ্যমকে বিভিন্ন কাগজ, অডিও এবং ভিডিও দিত দুর্নিতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পর্কে এমনকি আওয়ামী লীগের নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামেও। সে প্রতিবেদনগুলো আলাদাভাবে যাচাই করার সুযোগ থাকতো না কিন্তু অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমগুলোর মতো ডেইলি স্টারও সেগুলো ছাপিয়েছে।
২০০৭ সালের জুলাইতে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা। তিনি ১১ মাস বন্দি অবস্থায় ছিলেন।
সেনাবাহিনীর শাসনামল শেষ হওয়ার পর যে হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি বলেন জেলে চাপের মুখে এ অভিযোগ করেছিলেন তিনি। সেই তথ্যও ছাপা হয় ডেইলি স্টারে। এরপরেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে ডেইলি স্টারের ২৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
কিন্তু পরদিন সকালেই তার ‘স্বীকারোক্তি’ নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্তান সজিব ওয়াজেদ জয় শেখ হাসিনার কারাভোগের জন্য আমার বাবার গ্রেফতার দাবি করেন। এরপর থেকে সারা দেশে আমার বাবার নামে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং মানহানির মামলা করা হয়।
ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলোকে সরকার থেকে চাপ দেয়ার এটাই হচ্ছে সাম্প্রতিক ঘটনা। ২০১৫ সালের মার্চে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত হয় হিজবুত তাহরিরের নিয়োগদানের একটি পোস্টার প্রকাশিত হয় যেখানে সারাদেশে সংন্ত্রসী কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়া নিয়ে কথা বলা হয়। তখন হাসিনা বিষয়টি নিয়ে সংসদে সমালোচনা করেছিলেন। আগস্টে হঠাৎ করেই টেলিকম কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া হয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশে।
বাবার ‘স্বীকারোক্তির’ পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে তার নামে মামলা হচ্ছে। কিছুদিন আগে তিনি আমাকে একটা টেক্সট করেন। আমি তখন লন্ডনে। সেখানে লেখা ছিলো,‘আমার বিরুদ্ধে ১৭ মিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা হয়েছে’। যেটি কিনা স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের মোট বাজেটেরও বেশি।
এক বছর একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন ব্লগার অভিজিৎ রায়। এরপর থেকে আমরা ওইসব চরমপন্থীদের ভয় পেতাম যারা কিনা লেখকদের হত্যা করছেন। কিন্তু এখন রাষ্ট্র নিজেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ভিন্ন মত অবলম্বনকারীদের নির্মমভাবে দমন করছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন
ময়মনসিংহে ওসি-এসপি’র বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর
সরকারি দায়-দায়িত্ব ও কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের যথাযথবিস্তারিত পড়ুন
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জনগণের সাথে রায়েছে বিচার বিভাগ
দেশের মানুষের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিচার বিভাগ জনগণের সঙ্গে আছেবিস্তারিত পড়ুন