থমকে আছে মিতু হত্যা মামলা
চট্টগ্রামে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কতদূর? মামলার প্রধান আসামি মুছাতেই কি থমকে আছে মামলার অগ্রগতি নাকি কোনো ক্লু পেয়েছে পুলিশ।
ঘটনার প্রায় সাড়ে ৬ মাস পর মামলার বাদী বাবুল আক্তারই বা কী তথ্য দিলেন তদন্ত কর্মকর্তাকে তাও অনেকটা অজানাই রয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে সিএমপির কেউ মুখ খুলছেন না।
এদিকে দু-এক দিনের মধ্যে বাবুল আক্তারের শ্বশুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। মিতু হত্যা সম্পর্কে জানতে তাকে চট্টগ্রামে আসতে বলা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একটি সূত্র বিষয়টি জানান।
মামলার কয়েকজন আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হত্যা রহস্য আংশিক উন্মোচিত হলেও মূল অপরাধী রয়ে গেছে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দাবি অনুসারে, মিতু হত্যার পরিকল্পনাকারীর পরিচয় এখনো জানা যায়নি। ধারণা মেলেনি হত্যার কারণ সম্পর্কে। তবে পুলিশ সোর্স মুছা সিকদারের মাধ্যমে হত্যা মিশন বাস্তবায়ন করা হয়েছে, আর তাতে অংশ নিয়েছে পেশাদার অপরাধীদের গ্রুপ। এ পর্যায়ে মুছাকে গ্রেফতার করা গেলেই হত্যার ‘সব রহস্য’ জানা যাবে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করে আসছেন ঘটনার পর থেকেই।
মুছাকে ধরিয়ে দিতে পুলিশ দেশের সব জায়গায় জরুরি বার্তা প্রেরণ করে। মুছাকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫ লাখ টাকা পুরষ্কারও ঘোষণা করেন সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার।
পুলিশের কাছে মুছা পলাতক হলেও মুছা সিকদারের স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি অনুসারে, ২২ জুন মুছাকে চট্টগ্রামের বন্দর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মুছার সন্ধান দিতে পারেননি। রহস্যজনক `নিখোঁজ` মুছাতেই মূলত আটকে আছে তদন্ত।
বাদী হিসেবে বাবুল আক্তারের নাম বাদ দেওয়ার বিষয় নিয়েও নানা আলোচনা চলছে। এসব বিষয় নিয়ে রহস্যজনক কর্মকাণ্ডে মিতু হত্যার ‘প্রকৃত রহস্য’ জানা যাবে কি না তা নিয়ে জনমনে দানা বাঁধছে সন্দেহ।
অপরদিকে অনেকটা গোপনীয়তা রক্ষা করেই বাবুল আক্তার গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার মুখোমুখি হয়েছেন। বাবুল আক্তারকে এই প্রথম চট্টগ্রামে ডেকে নিয়ে তিন ঘণ্টা ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তার বেশির ভাগ প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি তিনি।
স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যার ‘পরিকল্পনাকারী’ নিখোঁজ কামরুল শিকদার ওরফে মুছা এবং কারাগারে থাকা এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা তার ‘সোর্স’ হিসেবে কাজ করতেন বলে জানান বাবুল আক্তার।
তদন্ত কর্মকর্তার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কী কারণে এবং কার নির্দেশে তারা (সোর্স) মাহমুদাকে খুন করেছেন, তা তার জানা নেই। তিনি স্ত্রী হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বৃহস্পতিবার বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় বাবুল আক্তার একটি সাদা প্রাইভেটকারে করে ডিবি কার্যালয়ে যান। গাড়ি থেকে নেমে তিনি সরাসরি কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় তদন্ত কর্মকর্তার কক্ষে ঢোকেন। তখনই ভেতর থেকে কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যে কক্ষে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তার পাশের কক্ষেই এক সময় বসতেন বাবুল আক্তার। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গেই বাবুল আক্তার ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমরা কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি আর কিছু তিনি এড়িয়ে গেছেন তবে তদন্তের স্বার্থে তা বলা যাবে না।
এছাড়া খুব শিগগিরই বাবুল আক্তারের শ্বশুর চট্টগ্রাম আসবেন এবং তাকেও মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে স্বীকার করেছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
অন্যদিকে ‘নিখোঁজ’ মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার জানান, ২০১৩ সাল থেকে তার স্বামী বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। ফোনে প্রায়ই মুছার সঙ্গে বাবুল আক্তারের কথা হতো বলে দাবি করেন তিনি। তবে কখনো তার বাসায় বাবুল আক্তার আসেননি। তার জানামতে মুছাও কখনো বাবুল আক্তারের বাসায় যাননি।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় মাহমুদা খানমকে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার অজ্ঞাত পরিচয় তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করেন। অস্ত্র-গুলিসহ অনেক জঙ্গিকে গ্রেফতার করেন। এ কারণে প্রতিহিংসাবশত জঙ্গিরা তার স্ত্রীকে হত্যা করতে পারে।
গত জুন মাসেই পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ থেকে ঢাকার পুলিশ সদর দফতরে যোগ দেন বাবুল আক্তার। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) ছিলেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন