দারুণ বল করছ, চালিয়ে যাও, বুমরাকে বলে গেলেন মালিঙ্গা
তাঁকে বলা হচ্ছে ভারতের লাসিথ মালিঙ্গা। দু’জনের প্রায় একইরকম ভ্যাবচ্যাকা খাইয়ে দেওয়ার মতো বোলিং অ্যাকশন। দু’জনেরই অস্ত্র ইয়র্কার।
কী আশ্চর্য— মালিঙ্গা আর তিনি একইসঙ্গে আইপিএলেও খেলেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে। এখানেই শেষ নয়। ভারতীয় বোলিং আকাশে উদিত নতুন তারা যশপ্রীত বুমরাকে নানা পরামর্শ দিয়েও পরিণত হতে সাহায্য করেছেন মালিঙ্গা। স্বয়ং বুমরা স্বীকার করছেন, তিনি ইয়র্কারের মন্ত্র শিখেছেন মালিঙ্গার থেকেই।
ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পরের দিন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের গুরু-শিষ্যের দেখা হয়ে গেল। এখানে এয়ারপোর্টের কাছে এবার রাখার ব্যবস্থা হয়েছে সমস্ত দলকে। সেখানেই রুফটপে সুইমিং পুলের ধারে বিকেলের দিকে দেখা গেল এই সাক্ষাৎ।
বুমরাকে এমনিতে খুবই স্নেহ করেন মালিঙ্গা। মঙ্গলবার মাঠে দেখা হতেই শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন।
বুধবারের দৃশ্য যেন আরও আবেগপূর্ণ হয়ে থাকল। বুমরা সুইমিং পুলের ধারে এসে বসেছিলেন অনেকক্ষণ ধরে। তিনি যে ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন তারা হিসাবে উঠে এসেছেন, বুঝে নেওয়া গেল দ্রুতই। একের পর এক ছবি তোলার অনুরোধ আর অটোগ্রাফের আবদার নিয়ে ঠিক ভিড় জমে গেল। কেউ এসে বললেন, ‘‘আপনাকে আমাদের দারুণ লাগছে।’’ কেউ বললেন, ‘‘আপনার ইয়র্কারগুলো তো কেউ খেলতেই পারছে না!’’ বুমরা লাজুকভাবে হাসতে থাকলেন আর ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ আউড়ে যেতে থাকলেন।
কিছুক্ষণ পরে মালিঙ্গা সেখানে এলেন। সঙ্গী আরও কয়েকজন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার। তার মধ্যে মঙ্গলবার ভারতকে শুরুতে ধাক্কা দেওয়া নুয়ান কুলশেখরাকেও দেখা গেল। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বোলিং তারকাকে দেখতে পাওয়ামাত্র চেয়ার থেকে উঠে পড়লেন বুমরা। ঠিক যেভাবে স্যারকে দেখে উঠে দাঁড়ায় ছাত্র। মুখে সেই সরল, লাজুক হাসি। মালিঙ্গা এসে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘‘খুব ভাল বল করছ। আমি খুব খুশি হয়েছি তোমার পারফরম্যান্স দেখে।’’
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে বুমরাকে দেখার পর থেকেই খুব ভাল লেগে যায় মালিঙ্গার। যদিও ভারতীয় পেস বোলিংয়ের নতুন প্রতিভাকে আবিষ্কার করেন তিনি নন, জন রাইট। পেসারদের ‘ওপেন ক্যাম্প’ থেকে তাঁকে বেছে নেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জমানার ভারতীয় দলের কোচই। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স কর্তৃপক্ষকে রাইট সেই ক্যাম্পের পরেই বলেন, এই ছেলেটাকে নিতে হবে। এরকম প্যাঁচ খাওয়ানো অ্যাকশনেও নিয়ন্ত্রণটা অসাধারণ।
আর বোলার হিসাবে আত্মবিশ্বাস দেওয়া থেকে শুরু করে পরিণত করা— নানা ব্যাপারে ভূমিকা রয়েছে মালিঙ্গার। বিস্ময়কর অ্যাকশন নিয়ে প্রথমেই তিনি বুমরাকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, অনেকে এটা পাল্টানোর কথা বলবে। কারও কথা শুনো না। আমাকেও অনেকে বলেছে। আমি কখনও পাল্টাইনি। এখন মনে হয়, যাবতীয় সাফল্যের আসল কারণ আমার অ্যাকশনই।
বুধবার ফের সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে গেলেন এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক। বুমরার অ্যাকশন নিয়ে যে নানারকম মন্তব্য করা হয়েছে, সেটা তিনি শুনেছেন। অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, এই অ্যাকশন নিয়ে চোটমুক্ত থাকতে পারবেন কি না বুমরা। সেটাও মালিঙ্গা শুনেছেন। তাই আইপিএলের অনুজ সতীর্থকে বলে গেলেন, ‘‘ওসবে একদম কান দিতে যেও না। নিজের যেটা স্বাভাবিক অ্যাকশন সেটাই রেখে দেওয়া উচিত। পাল্টাতে গেলে অনেকরকম সমস্যা হতে পারে।’’
দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, আইপিএল সত্যিই কত রকম হাইওয়ে খুলে দিয়েছে! বছর দশেক আগেও কেউ ভাবতে পারত, বুমরার মতো কোনও তরুণ অভিষেক ঘটিয়ে বলবেন, আমি ইয়র্কার শিখেছি মালিঙ্গার থেকে!
দু’জনের আবেগপূর্ণ সাক্ষাৎ দেখতে দেখতে কে’ই বা বলবে, মালিঙ্গা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলেননি। নিজের দেশের ক্রিকেটে নানা বিতর্ক আর জটিলতা তৈরি হয়েছে। তা নিয়েও বেশ চাপে মালিঙ্গা। আর বুমরার মধুচন্দ্রিমা চলছে। যা ধরছেন, সোনা। একজন অস্তাচলের কাছে এসে পড়া তারকা। অন্যজন উদিত তারা। সুইমিং পুলের ধারে তবু মালিঙ্গার আন্তরিক মনোভাব দেখে কে বলবে, তিনি ক্ষতবিক্ষত। মনে হবে এক ভারতীয় তরুণের মধ্যে তিনি যেন নিজেকে আবিষ্কার করেছেন।
ভারতীয় দলের অন্দরমহলে বুধবার বুমরাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শুনছিলাম। মনে করা হচ্ছে, অনেকদিন পরে একজন ‘থিঙ্কিং’ বোলার এসেছেন। যাঁকে বুদ্ধি খাটিয়ে বল করতে দেখা যাচ্ছে। যিনি ক্যাপ্টেন ধোনির মতোই যেন ‘কুল’। কখনও চাপে আছেন বলে মনেই হবে না। ভীষণ ঠাণ্ডা মাথা আর সেটাই তাঁর প্রধান অস্ত্র হতে যাচ্ছে বলে দলের গরিষ্ঠ অংশের ধারণা। কারও কারও কথা শুনে এমনও মনে হল যে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বোলিংয়ের তুরুপের তাস ধরা হচ্ছে বুমরাকেই। নেহরাকে নয়। অশ্বিনকেও নয়।
মাত্র দু’মাসে এমন নাটকীয় উত্থান— শেষ কবে দেখা গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটে!
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন