দিনাজপুরে আবারও এক শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ছয় বছর বয়সী শিশুটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বীরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আসামিকেও আটক করেছে পুলিশ।

স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়, পারিবারিক কলহের জের ধরে গত ৬ নভেম্বর রাতে দিনাজপুর বীরগঞ্জ উপজেলার বৃষ্টপুর সোনাচালানী এলাকায় ৬ বছর বয়সী শিশুকন্যাকে (বাবুল ইসলামের মেয়ে বৃষ্টি, স্থানীয় আনন্দ স্কুলের ছাত্রী) একই এলাকার মতিউর রহমানের বাড়িতে রেখে বাবার বাড়িতে যান ওই শিশুর মা। মতিউর রহমান ওই এলাকার জয়নালের ছেলে ও শিশুটির মায়ের পাতানো (ধর্ম) পিতা। রাতে ওই শিশুটিকে ধর্ষণ করে মতিউর রহমান। শিশুটির চিৎকারে পরিবারের লোকজন টের পেলে ধর্ষক মতিউর রহমান পালিয়ে যায়। পরের দিন শিশুটি তার মাকে ঘটনা জানায়। এ সময় মেয়ের রক্তক্ষরণ দেখতে পেয়ে স্থানীয় এক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কাছে যান মা। এরই মধ্যে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য স্থানীয় পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুয়েলুর রহমান ও ইউপি সদস্য নুরে আলম চেষ্টা চালায়। তারা স্থানীয় দুলাল ও জহুরুলের সহযোগিতায় ৮ দিন ওই শিশুটিকে চিকিৎসা ও আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধা দেয়। কিন্তু আপসরফা শেষ না হতেই ওই শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘট।

গত ১৪ নভেম্বর প্রথমে তাকে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার আরও অবনতি হলে গুরুতর অবস্থায় গত ১৬ নভেম্বর তাকে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ওই দিন রাতে বীরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন শিশুটির বাবা। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় বৃহস্পতিবার অভিযুক্তকে আটক করে।

ওই শিশুর বাবা-মা জানান, ঘটনার পরপরই স্থানীয় মেম্বার নুরে আলম ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। সে ভয় দেখায় যদি এই ঘটনা জানাজানি হয়ে যায় তাহলে শিশুটির ভবিষ্যৎ খারাপ হয়ে যাবে। তিনি এই ঘটনার জন্য ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা জানান। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানকে জানানো হলেও চেয়ারম্যান তেমন পাত্তা দেয়নি।

এলাকাবাসী জানায়, ধর্ষণের ঘটনার পরই মেম্বার ও চেয়ারম্যানের ভূমিকা রহস্যজনক ছিল। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায় তারা। এমনকি গোপনে মেয়েটির চিকিৎসা করাতে বলে স্থানীয় মেম্বার। কিন্তু মেয়েটির অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়া বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।

বর্তমানে শিশুটি দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লেবার ও গাইনি ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. জাহানারা মুন্নির তত্ত্বাবধানে রয়েছে। সেখানকার দায়িত্বরত ইর্ন্টান চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মেয়েটির রক্তক্ষরণ হয়েছে ও ক্ষত হয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ধর্ষণের ঘটনার এক সপ্তাহ পরে হাসপাতালে আসায় বিষয়টি ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছে না। রিপোর্ট আসলে বিষয়টি ভালোভাবে জানা যাবে বলে জানান ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

বীরগঞ্জ থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আযম হোসেন প্রধান জানান, এ ঘটনায় ওই শিশুর বাবা বাদী হয়ে বীরগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত মতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার দায় স্বীকার করেছে অভিযুক্ত ওই ধর্ষক।

তবে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি মেম্বার নুরে আলম বাইরে আছেন বলে মোবাইল কেটে দেন। আর চেয়ারম্যান জুয়েলুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয় বলে জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ঘটনাটি তিনি অনেক কয়েকদিন পরে জেনেছেন। স্থানীয় মেম্বার বিষয়টি তাকে ঘটনাটি বলেনি দাবি করে তিনি বলেন, শিশুর পরিবারকে আইনি সহায়তা গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।