‘দিবস এলেই খবর হয়’
আব্দুল্লাহ আল মামুন : তাজরীন ট্র্যাজেডির তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল। ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা এখন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। বছর ঘুরলেই বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা এবং সাংবাদিকরা তাদের খবর নেন। দিবসটি পার হলে আর কোনো খবর নেন না তারা। সহযোগিতার হাতও বাড়ান না।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের কারখানায় সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের অনেকে আঘাত-ক্ষত নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। আগের সেই কর্মক্ষম মানুষ এখন সংসারের বোঝায় পরিণত হয়েছেন। সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কেড়ে নিয়েছে তাদের উপার্জন ক্ষমতা।পরিবারের অন্য সদস্যদের আয় এবং মানুষের দয়াই এখন বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। সব হারিয়ে তিন বছরে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর ছেড়ে চলে গেছেন বেশির ভাগ আহত শ্রমিক। অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত করছেন নিশ্চিন্তপুরের এসব শ্রমিক।
ওই দুর্ঘটনায় ১৫০ জনের বেশি শ্রমিক মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। এদের অধিকাংশই প্রাণে বাঁচতে উঁচু ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন মাটিতে। আগুনের হাত থেকে বাঁচলেও তাদের হারাতে হয়েছে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হাত, পা, মেরুদণ্ড এবং মাথার আঘাত নিয়ে এখনো নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের। সুস্থতার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও অর্থের অভাবে তা করাতে পারছেন না তারা।
তাজরীন ফ্যাশনসে সেলাইয়ের কাজ করতেন ২৭ বছর বয়সি জরিনা বেগম। আগুনের হাত থেকে বাঁচতে পাঁচতলা থেকে মাটিতে লাফিয়ে পড়েছিলেন তিনি। এখন মেরুদণ্ডের আঘাত নিয়ে ছোট বোন শ্যামলীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল তিনি। বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা বাবদ অনেক টাকা ঋণ করে ফেলেছেন তিনি। কীভাবে এই ঋণ শোধ করবেন, জানা নেই তার। প্রথম দফায় দেড় লাখ টাকা পেলেও আর কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি তিনি।
জরিনা বলেন, ‘শুরুতে এই টাকা পেলেও আর কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। কোনো কাজও করতে পারি না।কেউ কোনো খবরও নেয় না।শুধু বছর ঘুরলে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা মানববন্ধন করার জন্য ডাকে।’
নিশ্চিন্তপুরের মফিজ উদ্দিনের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে এক রুমে ভাড়া থাকেন গোপালগঞ্জের রুপা (২১)। সেলাইয়ের কাজ করতেন তিনি। আগুনের হাত থেকে বাঁচতে ভবনটির ষষ্ঠ তলা থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন রুপা। হারিয়েছেন দুটো পা। বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করা মায়ের আয়ের ওপর নির্ভরশীল রুপা চিরতরেই হারিয়ে ফেলেছেন কর্মক্ষমতা।পা হারানোর কারণে তাকে বিয়ে দিতে পারছেন না বলে জানান রুপার মা রাখা বেগম। শুরুতে ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার পর আর কোনো টাকা পাননি তারা।এখন টাকার জন্য চিকিৎসা করাতেও পারছেন না তিনি।
ষষ্ঠতলায় সেলাইয়ের কাজ করতেন আলেয়া বেগম। তিনিও ষষ্ঠ তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন। মেরুদণ্ড এবং মাথায় আঘাত পাওয়ার পর কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। স্বামীও একই ভবনে কাজ করতেন। তিনিও পঙ্গু। সন্তানদের নিয়ে অনেক টাকা ঋণ করে ফেলেছেন তারা।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তুবা গ্রুপের মালিকানাধীন তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ১১১ জন। অনেকে জীবন বাঁচাতে লাফিয়ে পড়েন মাটিতে। বর্তমানে বিকলাঙ্গ জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের। ভয়াবহ এই ঘটনাকে নাশকতা হিসেবে দাবি করেছিল প্রশাসন। কিন্তু নাশকতার রহস্য উদ্ঘাটন কিংবা বিকলাঙ্গ শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ায়নি সরকার ও বিজিএমইএ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু বলেন, আমরা নিহত-নিখোঁজ শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক জীবনের আয় ৪৮ লাখ টাকা দাবি করেছিলাম।পাশাপাশি সুচিকিৎসা ও পূনর্বাসনের দাবি করি। কিন্তু ১১৯ জন নিহত শ্রমিকের মধ্যে ১০৭ জন ৭ লাখ টাকা করে পেয়েছে।এ ছাড়া আহত ১৫০ জন শ্রমিক ১ থেকে দেড় লাখ টাকার বেশি পায়নি।
পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি (অর্থ)মোহাম্মদ নাসির বলেন, তাজরীন ফ্যাশনসের সব শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এখনো যারা ক্ষতিপূরণ পাননি তাদের দেওয়া হচ্ছে।আহত শ্রমিকদের চিকিৎসাও করিয়েছি আমরা। রাইজিংবিডি
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
উপদেষ্টা মাহফুজ: সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন,“গণ-অভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থেবিস্তারিত পড়ুন
বড় ব্যবধানে অ্যান্টিগা টেস্টে হারলো বাংলাদেশ
চতুর্থ দিনেই অ্যান্টিগা টেস্টের ফল কোন দিকে গড়াচ্ছে, তা নির্ধারণবিস্তারিত পড়ুন
কিশোরগঞ্জে মা-বাবা ও ২ সন্তানের মরদেহ উদ্ধার
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় একই পরিবারের চার জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেবিস্তারিত পড়ুন