শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

দুই এমপির দ্বন্দ্ব আয় ভাগাভাগি নিয়ে !

শ্যামপুর-কদমতলীতে সংসদ সদস্য দু’জন। একজন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অন্যজন আওয়ামী লীগের সানজিদা খানম। তিনি সংরক্ষিত আসনের এমপি। এই শিল্প এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দু’জনের অনুসারীরাই প্রকাশ্য বিরোধে লিপ্ত। এখান থেকে মাসে কোটি টাকার ‘আয়’ ভাগাভাগিই এর নেপথ্য কারণ বলে জানা গেছে। দুই এমপিরই দাবি, এই ‘আয়ের’ হকদার তাদের কর্মীরাই।

শ্যামপুর-কদমতলীতে দুই এমপির একজন আওয়ামী লীগের, অন্যজন জাতীয় পার্টির। তাদের সব কিছুতেই বিরোধ। তবে এ বিরোধ রাজনৈতিক নয়। শিল্প এলাকা থেকে মাসিক কোটি টাকা ‘আয়’-এর ভাগাভাগি নিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব। দুই এমপিই দাবি করেন, এ ‘আয়’ তার অনুসারীদের পাওয়া উচিত। ঢাকা-৪ (শ্যামপুর-কদমতলী) আসনের এমপি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সানজিদা খানম।

পরের নির্বাচনে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় শ্যামপুর-কদমতলী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সানজিদা খানমকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পর থেকেই বাবলা-সানজিদার দ্বন্দ্ব চলছে শিল্প এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে এই দখল-পাল্টা দখলকে ‘অপরাধ’ বলে মনে করে না স্থানীয় কোনো গ্রুপই। প্রতি গ্রুপের সঙ্গে আলাপকালে মনে হয়েছে, শিল্পাঞ্চলের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ তাদেরই অধিকার। আবু হোসেন বাবলার দাবি, স্থানীয় এমপি হিসেবে সব কিছু তার নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।

সানজিদা খানমের দাবি, সরকারি দলের এমপি হিসেবে তিনি একমাত্র দাবিদার। শ্যামপুরে ১ ও ২ নম্বর নামে দুটি শিল্পাঞ্চল রয়েছে। স্থানীয়ভাবে এগুলো বালুর মাঠ নামে পরিচিত। স্থানীয় শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মইনুল হোসেন জানান, ১ নম্বর শিল্প এলাকায় ৩০০ প্লট রয়েছে। এ এলাকায় চালু কারখানার সংখ্যা ২১৫। ২ নম্বর শিল্প এলাকায় ১৪৫টি কারখানা চালু রয়েছে। গার্মেন্ট, আসবাব, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সিমেন্ট ও রি রোলিং কারখানা রয়েছে এই এলাকায়। তবে এই কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে বাবলা-সানজিদার। আগের কমিটির সভাপতি ছিলেন সানজিদা খানম।

গত ২৪ জুন কমিটি পুনর্গঠন করে সভাপতি হন আবু হোসেন বাবলা। এ কমিটিই নিয়ন্ত্রণ করে শিল্পাঞ্চল। সানজিদা খানম বলেন, ‘আমি কমিটির বৈধ সভাপতি। বাবলা হোটেলে কয়েক ব্যবসায়ীকে নিয়ে শলাপরামর্শ করে কমিটি করেছেন। এর আইনি ভিত্তি নেই।’ সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্থানীয় এমপি পদাধিকার বলে সভাপতি হন। তবে গঠনতন্ত্রের এ ধারা মানতে নারাজ সানজিদা খানম। তিনি বলেন, ‘প্রথা অনুযায়ী সরকারি দলের এমপি সভাপতি হবেন।

বাবলা বিরোধী দলের এমপি। তার সভাপতি হওয়ার অধিকার নেই।’ স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ৩৫৫টি কারখানা থেকে মাসে গড়ে প্রায় ৭০ লাখ টাকা আয় হয় ঝুট ব্যবসা থেকে। ১ নম্বর শিল্প এলাকায় কারখানার সংখ্যা বেশি হলেও, এখানকার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান আকারে ছোট। ২১৫টি প্রতিষ্ঠানের ঝুট ব্যবসা থেকে আয় হয় ৩০ লাখ টাকা।

২ নম্বর শিল্প এলাকার ১৪৫টি কারখানা থেকে আসে আয়ের বড় অংশ। পোস্তাগোলা সিএনজি অটোরিকশা টার্মিনাল থেকে মাসে আয় আরও ২০ লাখ টাকা। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতারা এ ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। দুই এমপিই তা থেকে সুবিধাভোগী। এ এলাকায় রয়েছে ১৪টি স্কুল। একটি বাদে সব স্কুলের সভাপতি সানজিদা সমর্থিত লোক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও ‘আয়’ রয়েছে জানান স্থানীয় অভিভাবকরা। ঢাকা-৪ আসনের সীমানাধীন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি নিয়ে বিরোধ চলছে দুই এমপির।

নির্বাচনের পর এই ঝুট ব্যবসা নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে এক সময়কার মিত্র বাবলা-সানজিদা ‘শত্রু’ হয়েছেন। গত ১০ জুন বাবলার কার্যালয়ে স্থানীয় যুবলীগের সানজিদা গ্রুপের সভাপতি আলমগীর হোসেন ও ছাত্রলীগ সভাপতি আকাশের নেতৃত্বে হামলা হয়। তারা সানজিদার সমর্থক হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি সূত্র জানিয়েছে, ঝুট ব্যবসার ভাগাভাগি নিয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। আবু হোসেন বাবলার অভিযোগ, ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ পেতেই সানজিদার অনুসারীরা তার কার্যালয়ে হামলা করে। তার দাবি, শিল্পাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ থেকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে লাভবান নন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সমানভাবে ব্যবসা ভাগ করে দিতে চান। যাতে সবাই ‘করে’ খেতে পারে। তিনি অভিযোগ করেন, সানজিদা খানম একাই পুরো ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ চান। তা নিয়েই দ্বন্দ্ব শুরু। তবে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সানজিদা খানম দাবি করেন, তিনি কোনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। এমপি বাবলা ও আওয়ামী লীগের ‘একাংশ’ জোরপূর্বক শিল্প এলাকার দখল নিয়েছে। আবু হোসেন বাবলার ঘনিষ্ঠ নেতারা জানান, নির্বাচনের পর সানজিদা ও বাবলার আট দফা বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ১ নম্বর শিল্প এলাকার নিয়ন্ত্রণ করবে জাতীয় পার্টি। ২ নম্বর নিয়ন্ত্রণ করবে আওয়ামী লীগ।

দুই এমপির ‘চুক্তি’ এক মাস টিকে ছিল। সানজিদা খানম ২ নম্বর শিল্প এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এক নম্বর শিল্প এলাকারও বড় অংশ ‘দখল’ করে নিয়েছেন। আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘সানজিদা কখনও কোনো কথা রাখেন না। তিনি কথা দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ৫০-৫০ ভাগ করে নেবে সব কিছু। তিনি কথা রাখেননি। একাই ৮০ ভাগ ব্যবসা দখল করে নিয়েছেন। জাতীয় পার্টিকে দিয়েছেন ২০ ভাগ। জাতীয় পার্টি এই ২০ ভাগও আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে। সানজিদা নিজ দলের ত্যাগী নেতাদেরও এক টাকা ব্যবসা দেননি।’

চুক্তির বিষয়টি অস্বীকার করে সানজিদা খানম বলেন, ‘তার সঙ্গে ভাগাভাগি নিয়ে চুক্তি করব কেন? বাবলা বিরোধী দলের এমপি। নিয়ম অনুযায়ী আমার নিয়ন্ত্রণে থাকবে সব কিছু। তার সঙ্গে কোনো ভাগাভাগির কথা হয়নি।’ ঢাকা-৪ আসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ড রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে সম্প্রতি ২০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজ নিয়েও চলছে বাবলা-সানজিদার দ্বন্দ্ব।

সানজিদা খানম তা স্বীকার করে বলেন, ‘সরকার দলীয় এমপি হিসেবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তদারক করা আমার দায়িত্ব। আমি সেই দায়িত্ব পালন করছি।’ তবে আবু হোসেন বাবলার দাবি, স্থানীয় এমপি হিসেবে তিনি ‘তদারকের’ এখতিয়ার রাখেন। তিনি জানান, এসব কাজ উদ্বোধন করছেন সানজিদা খানম। তার লোকজনকে কাজ না দিলে ঠিকাদারদের কাজ করতে দেন না। ১ নম্বর শিল্প এলাকার এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ী জানান, আবু হোসেন বাবলার ভাগিনা শেখ মাসুক রহমান এত দিন এলাকার নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার অনুসারীদের ঝুট দিতেন।

কয়েক মাস আগে সানজিদার সমর্থক আলমগীর হোসেন ঝুট নিয়ে যান। দুই এমপির চাপে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ ব্যবসায়ী। ব্যবসার ভাগাভাগি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগও ভাগ হয়েছে। শ্যামপুর-কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, সিনিয়র সহসভাপতি ও শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সাইজুলও ভিড়েছেন আবু হোসেন বাবলার শিবিরে। বিগত নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ড. আওলাদ হোসেনও সমর্থন দিচ্ছেন তাদের।

সানজিদা খানমকে দল থেকে বহিষ্কার করতে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বরাবর আবেদন করেছে শ্যামপুর-কদমতলী আওয়ামী লীগ। সানজিদা খানমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। গত ২০ মে তোফাজ্জল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভাতেও উঠে আসে ঝুট ব্যবসা নিয়ে আলোচনা। তবে সানজিদা খানমের দাবি, আওয়ামী লীগের কোনো বৈধ কমিটি নেই শ্যামপুর-কদমতলীতে। ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ পেতে তার বিরোধীরা বাবলাকে নিয়ে একজোট হয়েছে। থানা সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ঝুট ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘বাবলা জাতীয় পার্টির নেতা হলেও যতক্ষণ শেখ হাসিনা তাকে সমর্থন দেবেন ততক্ষণ আমরাও তার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকব।’ দলীয় সাধারণ সম্পাদক সানজিদা খানমের বিরোধিতার কারণ প্রসঙ্গে তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘সানজিদা খাতুনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী নেই।

যদি প্রকৃত নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে একটু ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ পেত, তাহলে আমরা কোনো আপত্তি করতাম না।’ শফিকুল ইসলাম সাইজুলের দাবি, শিল্প এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, হাজী শরিয়তুল্লাহ, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. বাবলু, মফিজ ও শামিমকে দিয়ে শিল্পাঞ্চল ও পোস্তগোলার বাসস্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন সানজিদা খানম। মফিজ, শামিম হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি। বাবলার বিরোধী এক আওয়ামী লীগ নেতা সমকালকে জানান, বাবলার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের ছয় নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। ভয়ে অন্যরা মুখ খুলতে চান না। এই নেতা জানান, ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের জন্যই আওয়ামী লীগের বড় অংশ সানজিদাকে ছেড়ে বাবলার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এখানে রাজনীতি নেই, পুরোটাই ব্যক্তিগত স্বার্থ।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

সাবেক এমপি মিয়াজী যশোরের পার্ক থেকে আটক

ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাবেক এমপি ও শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক সচিববিস্তারিত পড়ুন

ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক

রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন

আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন

  • জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
  • হাসিনার পতনে জাতির মনোজগত পরিবর্তন হয়েছে, নতুন রাজনীতি হতে হবে স্বচ্ছ: আমীর খসরু
  • বগুড়ায় হাসিনা-কাদেরের বিরুদ্ধে আরও এক মামলা
  • ১৭ বছর পর সচল হলো আবদুল আউয়াল মিন্টুর ব্যাংক হিসাব
  • ১০ দিনের রিমান্ডে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক
  • ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি নুরের দলের
  • কোটা আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ইমেজ ড্যামেজ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের
  • বিএনপি ও সমমনা দলের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  • বিকেলে বাসায় ফিরবেন খালেদা জিয়া
  • খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে দেশের গণতন্ত্র মুক্তি পাবে : এ্যানী
  • রায়পুরায়  বিএনপির প্রায় ১০০ নেতা কর্মী আ’লীগে যোগদান
  • বিএনপির আন্দোলন ভুয়া, তারেক রহমানের নেতৃত্বে আতঙ্কিত: ওবায়দুল কাদের