শরীয়তপুরে প্রধানমন্ত্রী
দুই-চারশ কোটি খরচ মোটেই কষ্টের নয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ দুই হাজার ৭০০ কোটি ডলার। সেখান থেকে পদ্মা সেতুর জন্য দুই-চারশ কোটি খরচ করা মোটেই কষ্টের নয়।
আজ শনিবার দুপুরে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মাসেতুর নদীশাসন কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে এক জনসভায় দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। দুপুর ১২টার দিকে তিনি নদীশাসন কাজের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এর আগে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ চলছে। এই সেতুটির নির্মাণ একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে জাপান সফরের সময় রূপসা ও পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়ে কথা বলে আসেন তিনি। এরপর বেশকিছু কাজও এগিয়ে যায়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সেতুর স্থান বদলে ফেলা হয়। এমনকি নির্মাণকাজের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আবারও সেতুর বিষয়ে উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার।
‘আমাদের দুর্নীতিগ্রস্ত দেখানোর চেষ্টা শুরু হলো’
বক্তব্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোথায় দুর্নীতি হয়েছে তার প্রমাণ বিশ্বব্যাংকের কাছে চান প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের কাছে চিঠি লেখা হলেও এখনো কোনো উত্তর আসেনি বলে জানান তিনি।
বিশ্বব্যাংকের নানা টালবাহানার পর নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার ঘোষণা দেওয়ার কথা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি ঘোষণা দেই আমরা আমাদের নিজেদের অর্থায়নে এই সেতু করব। অনেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অর্থ ও চেক নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। আমি পিতামাতা, ভাই সব হারিয়েছি। সব হারিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলাম মানুষের জন্য কাজ করতে। সেখানে কাজ করতে এসে দুর্নীতি করব, সে ধরনের কোনো চিন্তা আমার ছিল না। আমার পরিবারের কারোরই ছিল না। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই সেতু নিয়ে আমাদের দুর্নীতিগ্রস্ত দেখানোর নানা ধরনের প্রচেষ্টা শুরু হলো।’
পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থ বিশ্বব্যাংক থেকে নেওয়া হবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজের টাকায় যে সেতু নির্মাণ করতে পারি আমরা তা দেখাব। আজকে আল্লাহর রহমতে আমরা সেই দিনটিতে এসে পড়েছি। বাংলাদেশের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। উপরে রাব্বুল আলামিন আর নিচে বাংলাদেশের মানুষ। এরাই আমার শক্তি। বাঙালি জাতি অসাধ্য সাধন করতে পারে। একবার যদি কোনো চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা যায়, তাহলে যে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা যায় তা প্রমাণ করেছিলেন জাতির জনক।’
নিজের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যই আমার কাজ। বিশ্বের দরবারে একটি উন্নত জাতি হিসেব বাংলাদেশকে স্থান করে দেওয়া এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য, একমাত্র উদ্দেশ্য।’
‘এই জাতি কারো কাছে মাথা নত করবে না। কোনোদিন করেনি। যখনই কেউ শোষণ করতে এসেছে তখনই বিদ্রোহ করেছে। বাঙালি জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আজকেও সেটা প্রমাণিত হতে যাচ্ছে’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সেঞ্চুরি
বক্তব্যে বাংলাদেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বহুমুখী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, বিনা মূল্যে বই বিতরণ, শিক্ষাবৃত্তি, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণসহ বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সারা দেশে ঘরে ঘরে আলো জ্বালানো তাঁর সরকারের লক্ষ্য। যেভাবে ক্রিকেটে বাংলাদেশ সেঞ্চুরি করে, সেভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেও সেঞ্চুরি করেছে সরকার। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে শরীয়তপুরের জাজিরায় এখানে নতুন শহর গড়ে উঠবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এই এলাকাকে আরো উন্নত করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। তাঁর মতে, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, জীবন মান উন্নত হবে। এই সেতুর সঙ্গে সঙ্গে যেমন এই অঞ্চলের মানুষের দুঃখ দূর হবে, সেই সঙ্গে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের স্থান নেই
বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে কোনো জঙ্গিবাদের স্থান হবে না। ইসলাম কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না। কেউ যেন এর সঙ্গে না জড়ায় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
২০২১ সালের মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে নদীশাসনের কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে নদীশাসনের শুভ কাজ শুরু করছি। সেই সাথে নির্মাণকাজও শুরু হবে।’
ওই সময় এই কাজে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। সেই সঙ্গে এ কাজের সঙ্গে জড়িতদের ধন্যবাদ জানান।
‘সেতুটি নির্মিত হলে শুধু দেশের জন্য না, আঞ্চলিক অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য সেতুটি অত্যস্ত গুরুত্বপূর্ণ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের রিজার্ভ ২৭ বিলিয়নের ওপরে। সেখান থেকে ২-৪ বিলিয়ন খরচ করা বাংলাদেশের জন্য মোটেই কষ্টের না। কারণ আমাদের আয় বেড়েছে, আমাদের বাজেট আমরা চারগুণ বৃদ্ধি করেছি। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশ সাবলম্বী হবে। তাই এখন খাদ্যের জন্য কারো কাছে হাত পাততে হয় না। আমরাই উৎপাদন করি’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি সমাবেশে ভাষণ দেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে স্বাগতিক ওয়েস্টবিস্তারিত পড়ুন
রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
যমুনা ফিউচার পার্কে মোবাইলের দোকানে চুরির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভবিস্তারিত পড়ুন
যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশি নাগরিকদেরবিস্তারিত পড়ুন