দুই দিনে বজ্রপাতে মোট ২১ জনের মৃ্ত্যু..!
দেশের বিভিন্ন স্থানে গত দুদিনে বজ্রপাতে ২১ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরো অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন।
গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার বজ্রপাতের ঘটনায় সুনামগঞ্জে ছয়, কিশোরগঞ্জ পাঁচ, টাঙ্গাইলে তিন, রাজশাহীতে দুই, হবিগঞ্জ দুই, দিনাজপুরে এক ও মানিকগঞ্জে একজন নিহত হয়েছেন।
আমাদের সুনামগঞ্জের প্রতিনিধি দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী জানান, আজ জেলার দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় বজ্রপাতে ছয়জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ছয়জন। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দিরাইয়ে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আর শাল্লা উপজেলায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একই ঘটনা ঘটে।
দিরাই উপজেলার নিহত ব্যক্তিরা হলেন মাটিয়াপুর গ্রামের আবদুল হান্নানের ছেলে শামীম মিয়া (৪৫), একই গ্রামের আবদুল হাসিমের ছেলে তহুর মিয়া (৩৫) ও টুকদিরাই গ্রামের আজিদ উল্লাহর ছেলেশিশু শেমরান হোসেন (১১)।
শাল্লা উপজেলায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন শ্রীহাইন গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে খাইনুল মিয়া (২২), আকিকুল ইসলামের ছেলে ঈমান মিয়া (২০) ও আবদুস সালামের ছেলে হৃদয় মিয়া (১৮)।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের টুকদিরাই গ্রামের আজিদ উল্লাহর ছেলে শেমরান হোসেন বাড়ির পাশের উঠানে খেলার সময় বজ্রপাতে নিহত হয়। একই ইউনিয়নের মাটিয়াপুর গ্রামের হাওরে নৌকায় করে দিরাইয়ে বাঁশ আনতে যাচ্ছিলেন আট-নয়জন। সকাল থেকেই ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। হঠাৎ নৌকায় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই শামীম মিয়া ও তহুর মিয়া নিহত হন। একই ঘটনায় আরো পাঁচজন আহত হন। পরে আহত অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়।
আহত দুজন দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। গুরুতর আহত দুজনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে শাল্লা উপজেলার বেড়া মোহনা নদীতে চিংড়ি মাছ ধরতে গেলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বজ্রপাতে তিন জেলে নিহত হন। তাঁদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শিশু মিয়া (২২) নামে এক জেলে আহত হন। তাঁকে শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
দিরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলতাফ হোসেন জানান, বাঁশ আনতে গিয়ে দুই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরো পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া একই ইউনিয়নের ১১ বছরের আরেক শিশু নিহত হয়েছে।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজ্রপাতে তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন।
আমাদের কিশোরগঞ্জের প্রতিনিধি মারুফ আহমেদ জানান, জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের করমসী গ্রামে বজ্রপাতে এক গৃহবধূ ও তাঁর ছেলে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ওই গৃহবধূর মেয়ে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন ললিতা (৪০) ও তাঁর ছেলে রিমন (১৫)। ললিতার স্বামী মারুফ মিয়া একজন কৃষক বলে জানা গেছে।
বজ্রপাতে ললিতার মেয়ে বিউটি (২০) গুরুতর আহত হন। তাঁকে তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, আজ সকালে করমসী গ্রামে নিজ ঘরে অবস্থান করছিলেন ললিতা ও রিমন। এ সময় আকস্মিক বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়।
করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির রাব্বানী বলেন, ‘বজ্রপাতে হতাহতের বিষয়টি জেনেছি।’
গত রোববার করিমগঞ্জে বজ্রপাতে দুজন নিহত হন। আর গতকাল সোমবার নিকলীতে দুজন ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল গ্রামে একজন নিহত হয়।
আমাদের টাঙ্গাইলের প্রতিনিধি মহব্বত হোসেন জানান, জেলার মধুপুর উপজেলায় বজ্রপাতে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো একজন। আজ মঙ্গলবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত তিনজন হলেন উপজেলার মাগুনতিনগর গ্রামের আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দা নিখিল হাজং (৩৫) এবং তাঁর দুই ছেলে জজ সিং সাং (১০) ও লোটন সিং সাং (৮)।
আহত ব্যক্তির নাম জনতা সিং সাং। তাঁকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, ওই চারজন ঘরেই ঘুমিয়েছিলেন। ভোরে হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাঁরা হতাহত হন।
আমাদের রাজশাহী প্রতিনিধি জানান শ ম সাজু জানান, জেলার পুঠিয়া ও তানোর উপজেলায় বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে তিনজন। গতকাল সোমবার বিকেলে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুল জানান, গতকাল বিকেল ৫টার দিকে ইউনিয়নের অমৃতপাড়া গ্রামে বজ্রপাতে শাহ আবদুল আজিজ (৪৮) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হন একই গ্রামের উজ্জ্বল হোসেন (২২) ও বিদিরপুর গ্রামের কালাম মণ্ডল (৪৫)। তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চেয়ারম্যান জানান, তিনজনই ক্ষেতের মধ্যে আখ কাটছিলেন। এ সময় হালকা বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই আবদুল আজিজের মৃত্যু হয়।
তানোর উপজেলার কলমা ইউপির চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না জানান, ইউনিয়নের কুজিশহর গ্রামে গতকাল বিকেল ৩টার দিকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থেকে বজ্রপাত ঘটলে সুজন (৩০) নামের এক কৃষক মারা যান। এ সময় সঙ্গে থাকা তাঁর বাবা আশরাফুল আলম (৫০) আহত হন। ঘটনার সময় সুজন ও তাঁর বাবা জমির আইলে ঘাস কেটে বাড়ি ফিরছিলেন।
আমাদের হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের প্রতিনিধি মহিবুর রহমান চৌধুরী তছনু জানান, জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার বেলা ৩টার দিকে উপজেলার কারগাঁও ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন নবীগঞ্জ উপজেলার সাকুয়া গ্রামের ইছহারুল হকের ছেলে জাবেদ মিয়া ও দুর্গাপুর গ্রামের হরিচরণ দাশের ছেলে কৃষ্ণ গোপাল দাশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুরে জাবেদ মিয়া ও কৃষ্ণ গোপাল দাশ বাড়ির পাশের হাওরে ধানক্ষেতে কাজ করতে যান। এ সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন তাঁরা। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাতেন খান বজ্রপাতে দুই ব্যক্তির নিহতের বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান।
আমাদের দিনাজপুরের প্রতিনিধি ফারুক হোসেন জানান, গতকাল সোমবার দুপুরে জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়াড়ি ইউনিয়নের ভেড়ম গ্রামে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত ব্যক্তির নাম মো. সাদ্দাম (৩২)। তিনি এলুয়াড়ি ইউনিয়নের ভেড়ম বাসিয়াপাড়া গ্রামের মো. সজমুদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাদ্দাম গতকাল দুপুর ১২টায় পাশের ঝাঝিরা গ্রামের জমিতে কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে তিনি গুরুতর আহত হন। লোকজন উদ্ধার করে স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকসেদ আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আমাদের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি আহমেদ সাব্বির সোহেল জানান, জেলার সাটুরিয়া উপজেলার রাইল্ল্যা গ্রামে বজ্রপাতে মইজুদ্দিন শেখ (৪৮) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, নিহত মইজুদ্দিন রাইল্ল্যা গ্রামের নদু শেখের ছেলে। তিনি কৃষি কাজ করে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাতেন। আজ সকাল ৮টার দিকে দুধ দোয়াতে গাভী বের করে গোয়ালের দুয়ারে বাঁধেন তিনি। এরপর বাছুর বের করে গাভীটির কাছে নেওয়ার সময় বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। গাভী ও বাছুরটিও এ সময় মারা যায়।
ফকুরহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আফাজ উদ্দিন জানান, বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে দাফনের প্রক্রিয়া করছেন স্বজনরা।
সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল্লাহ সরকার জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন