দুই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের খোঁজ পেল পরিবার, ৪৪ বছর পর
যুদ্ধ শেষ হয়েছে, স্বাধীন হয়েছে দেশ। কিন্তু যুদ্ধ থেকে ফিরে আসেনি স্বজন। পাওয়া যায়নি কোন খোঁজ। প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে পেরিয়ে গেছে ৪৪টি বছর। হঠাৎই খবর এলো না ফেরা দুই মুক্তিযোদ্ধার। পাওয়া গেছে তাদের কবরের সন্ধান। দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার দশমাইলে চিরনিদ্রায় শায়িত এ দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
খবর পেয়ে শনিবার (৩১ অক্টোবর ২০১৫) বিকেল সাড়ে ৫টায় ওই দুই পরিবারের সদস্যরা দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার দশমাইলে শায়িত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ল্যান্স নায়েক মোস্তাফিজুর রহমান ও হাবিলদার মিয়া হোসেনের কবরে ছুটে আসেন। অবতারণা হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। চোখের পানিতে ভিজে যায় কবরের মাটি। দুই পরিবারের আশা, সরকার যেন এই দুইজনকে শহীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রদান করেন। ব্যক্তিগতভাবে আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই তাদের।
অশ্রুস্বজল কন্ঠে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হাবিলদার মিয়া হোসেনের স্ত্রী শামসুন নাহার বলেন, ”আমার স্বামী দেশের প্রয়োজনে যুদ্ধে যান। দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু আমার স্বামী ফিরে এলো না। কত জায়গায় খুঁজলাম, পেলাম না। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে। তবুও আশায় ছিলাম কোন একদিন সে ঠিকই ফিরে আসবে। ৪৪ বছর পর খুঁজে পেলাম স্বামীর কবর। দুঃখ নেই, দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমার স্বামী প্রাণ দিয়েছেন। সে না আসায় মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছিল, সেগুলোর উত্তর খুঁজে পেলাম আজ।”
আরেক শহীদ ল্যান্স নায়েক মোস্তাফিজুর রহমানের ছোট ভাই মো. হুমায়ুন কবির একইভাবে বললেন, ভাইয়া দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। তিনি আমাদের অহংকার। পিতা-মাতা অনেক আগেই মারা গেছেন। এখন শুধু এক ভাই ও এক বোন বেঁচে আছেন। ভাইয়ার খোঁজ পাব তা ভাবতে পারিনি। তাকে জীবিত পাইনি, তবে শান্তনা এটুকু যে, অন্তত তার কবরটা খুঁজে পেলাম।
১৯৭১ সালের ১২ এপ্রিল দিনাজপুরের দশমাইল এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতার পক্ষে তৎকালীন ইপিআর এর একটি বিদ্রোহী দল অবস্থান নিলে হানাদারদের কামানের গোলায় সেখানেই শহীদ হন এই দুই মুক্তিযোদ্ধা। পরে স্থানীয় লোকজন সেখানেই রাস্তার পাশে একটি বাড়ির পিছনে গর্ত খুঁড়ে দু’জনকে একসাথে দাফন করেন। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বিডিআর- এর পক্ষ থেকে কবরটি পাকা করা হলেও শহীদদের পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ঠিকানা খুঁজে বের করার প্রশংসনীয় কাজটি করেছেন চট্রগ্রাম বিনিয়োগ বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মাহবুব কবির মিলন। মাহবুব কবির মিলন জানান, এই দুই বীর শহীদের পারিবারিক ঠিকানার বিষয়ে দিনাজপুরের প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা এবং দিনাজপুরের বিজিবি দফতরে কোন রেকর্ড নেই।
সম্প্রতি বিজিবি’র সদর দফতর পিলখানার রেকর্ড অফিস থেকে তাদের পারিবারিক ঠিকানা বের করেন মাহবুব কবির। ল্যান্স নায়েক মোস্তাফিজুর রহমান ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা ইউনিয়নের উত্তর বাটমারা গ্রামের সফিউর রহমানের পুত্র।
আরেকজন হাবিলদার মিয়া হোসেন নেত্রকোনার পূর্বধোলা উপজেলার খলিশাউর ইউনিয়নের গৌরকান্দা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। মিয়া হোসেনের স্ত্রী ও এক ছেলে বেঁচে আছেন।
দিনাজপুরের দশমাইল মোড়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল ও স্মৃতিচারণ করা হয়।
এসময় স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল জানান, শহীদ পরিবারের দাবির বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়ে জোর তৎপরতা অব্যাহত রাখব।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ভরিতে এবার ১,৯৯৪ টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনবিস্তারিত পড়ুন
সংস্কার হলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত কমানো সম্ভব জানালো সিপিডি
মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কার হলে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ১১বিস্তারিত পড়ুন
রাজশাহীতে সমন্বয়ককে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় এক সমন্বয়ককে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগবিস্তারিত পড়ুন