‘দুদক দুর্নীতি দমনের চেয়ে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রতিষ্ঠান’
বাংলাদেশে বিশ্লেষকরা দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বুধবার আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবসে বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, দুদক ক্ষমতাসীন এবং প্রভাবশালীদের জন্য দায়মুক্তি এবং বিরোধী রাজনীতিকদের হেনস্তা করার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, দুর্নীতি দমনে দুদকের কাজের প্রভাব পড়ছে না। এজন্য বিশ্লেষকরা রাজনৈতিক প্রভাব এবং দুদকের সক্ষমতার অভাবকে দায়ী করছেন। তবে দুদকের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা রাজনৈতিক চাপের বাইরে থেকে শক্ত অবস্থান নিয়ে কাজ করছেন।
সেনাসমর্থিত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সাল থেকে এখন অর্থাৎ চলতি বছর পর্যন্ত ২২ হাজার অভিযোগ অনুসন্ধান করে মাত্র চার হাজার অভিযোগের ক্ষেত্রে মামলা করেছে দুদক। আঠারো হাজারের বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে তথ্য প্রমাণ না পাওয়ার কথা তুলে ধরে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা, সাবেক মন্ত্রী, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছেন।
বিরোধীদল বিএনপির একটা বড় অভিযোগ রাজনৈতিক কারণে তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে কোন মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। সিনিয়র আইনজীবী এবং মানবাধিকার সংগঠক শাহদীন মালিক বলেছেন, দুদক তাদের সক্ষমতার অভাবে ক্ষমতাসীনদের জন্য দায়মুক্তির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে।
“দুদক দুর্নীতি দমনের চেয়ে দায়মুক্তি দেয়ার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিচ্ছে। কিন্তু সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বহাল রেখে তাদের হেনস্তা করছে।”
শাহদীন মালিক মনে করেন, দুদকের আইন এবং সুযোগ বা ক্ষমতা সবই রয়েছে। কিন্তু যোগ্যতা এবং দক্ষতার অভাব রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাসহ সংসদ সদস্যদের অনেকে হলফনামায় সম্পদের হিসাব দেয়ার ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করেছিলেন। এই অভিযোগের ব্যাপারে তাদের দুদক দায়মুক্তি দিয়েছিল।এ নিয়েও অনেক সমালোচনা হয়েছিল।
২০১২ সালে দুদকের আইন সংশোধন করে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে তখন দুদকের পক্ষ থেকেও বিষয়টাতে আপত্তি ছিল। সে সময় দুদকের চেয়ারম্যান ছিলেন গোলাম রহমান । তখন তিনি বলেছিলেন, দুদক নখ এবং দন্তহীন বাঘে পরিণত হচ্ছে। তার এই মন্তব্য ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছিল।
তিনি বলছিলেন, দুদক এখনও সমাজে প্রত্যাশিত প্রভাব ফেলতে পারছে না। এর কারণ হিসেবে তিনি অভিযোগের অনুসন্ধান, তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়কে উল্লেখ করেছেন। ক্ষমতাসীন বা প্রভাবশালীদের অনেককে অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেয়ায় দুদক যে প্রশ্নের মুখে পড়ছে, সেটা প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের অনেকে স্বীকার করছেন।
একইসাথে তারা বলছেন, রাজনৈতিক চাপ বা সরকারের কোন হস্তক্ষেপ তাদের ওপর নেই। দুদকের চেয়ারম্যান মো: বদিউজ্জামান বলেছেন, দুদককে নিয়ে ঢালাও মন্তব্য করা হচ্ছে বলে তারা মনে করেন। তিনি বলছিলেন, যে সব অভিযোগের ক্ষেত্রে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়না, সেগুলোর ক্ষেত্রে অব্যহতি দেয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না। কিন্তু এখন সরকারি দলের একজন সংসদ সদস্য এবং দু’জন সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
দুর্নীতি বিরোধী বেসরকারি সংস্থা টিআইবিও মনে করে, মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী বা ক্ষমতার সাথে থাকা প্রভাবশালীদের দুদকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়টি ইতিবাচক। কিন্তু দু’একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ছাড়া তাদের বেশিরভাগকেই বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। টিআইবি বলছে, এ ধরণের কিছু ভূমিকার কারণে দুদক নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ভরিতে এবার ১,৯৯৪ টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনবিস্তারিত পড়ুন
সংস্কার হলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত কমানো সম্ভব জানালো সিপিডি
মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কার হলে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ১১বিস্তারিত পড়ুন
রাজশাহীতে সমন্বয়ককে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় এক সমন্বয়ককে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগবিস্তারিত পড়ুন