দুর্গাপুজা নিয়ে এবার যা বললেন কোয়েল মল্লিক!
হিথরো এয়ারপোর্টের ডিউটি ফ্রি থেকে আত্মীয়স্বজন আর বন্ধু বান্ধবদের জন্য চকোলেট, চিজ, পারফিউম কিনে বসলাম গিয়ে গেট ‘এ’– ফাইভের কাছে। বোর্ডিং শুরু হবে কিছুক্ষণেই।
গত মাসটা কেমন নিমেষেই কেটে গেল। যেতে হয়েছিল হায়দরাবাদ। অস্কার-এর ইন্ডিয়ান সেকশনের জুরি হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন ভাষার দারুণ কিছু ছবি উপভোগ করলাম। কী অসামান্য সিনেমাটিক ব্রিলিয়ান্স। কত যত্ন নিয়ে ছবি বানিয়েছেন তাঁরা। দেখে মুগ্ধ হলাম। জুরিতে ছিলেন অত্যন্ত অভিজ্ঞ কয়েক জন। কিন্তু সেরা ছবিটা বেছে নেওয়াই ছিল সব চেয়ে কঠিন পর্ব। সিনেমা সম্পর্কে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন মত প্রকাশ করার ছিল সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। কোন সিনেমা কী কারণে কেন ভাল লাগছে, বা ফরেন সেকশনে বিশ্বের বাকি সিনেমার সঙ্গে কমপিট করার জন্য উপযুক্ত কিনা সেই নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলত আলোচনা, ডিবেটস। শুধু কনফারেন্স রুমেই নয়, তার বাইরেও চলত সিনেমা নিয়ে আড্ডা। হোটেল থেকে স্ক্রিনিং থিয়েটারে আসা যাওয়ার সময় থেকে প্রত্যেক সিনেমা দেখার মাঝে যে গ্যাপ— ছাতে গিয়ে বসার সময়টুকু—সবটা জুড়ে ছিল শুধু সিনেমা। এক্কেবারে ইট, ড্রিংক অ্যান্ড স্লিপ সিনেমা মোডে ছিলাম আমরা।
ফিরে এসেই শুরু হল আমার মহালয়ার শ্যুটিং। এ বারেরটা যদিও ছিল একটু আলাদা। ‘নবরূপে দুর্গা’। মা দুর্গার ন’টা রূপ নিয়ে ছিল কনসেপ্ট। শেষে হল মহিষাসুরমর্দিনী। সেটাই তো সব চেয়ে এক্সাইটিং! শ্যুটিং করতে করতে মহালয়ার দিন গুনছি। ট্রানজিস্টারে ভোর চারটে কাঁটায় কাঁটায়। শুরু হবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ, এ ছাড়া যেন পুজো অসম্পূর্ণ। চিরকালটা যে এমনই হয়ে এসেছে। তবে এই বছর একটু অন্য ভাবে শুরু হল পুজোর মেজাজ। ভোরে উঠে চণ্ডীপাঠটা আমি ঠিকই শুনলাম। তবে রেডিওয় নয়। ফোনে রেকর্ডিংয়ে লন্ডনে বসে।
এখানে দশ ডিগ্রি। হোটেলে ঢুকেই স্যুটকেস রেখে লং জ্যাকেট আর হাই বুটস পড়ে সাউথ কেনসিংটন থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
একটি ইংলিশ পাব রেস্তোরাঁ ‘বাম্পকিনস’য়ে ডিনার সেরে গেলাম অ্যালবার্ট হলে ব্রডওয়ে শো ‘উইকেড’ দেখতে। তার কী একস্ট্রাভ্যাগেঞ্জা, কী জাঁকজমক। যেমন অভিনেতাদের অভিনয়, তেমন লাইভ অর্কেস্ট্রার সঙ্গে মাঝে মধ্যে দরাজ গলায় গান। অভিভূত করল আমায়। মাদাম তুসোর ওয়াক্স মিউজিয়ামে পৃথিবীর সব পেশার বিখ্যাত ব্যক্তিদের কিছু অনবদ্য মূর্তি আছে। অবাক হয়ে গিয়েছি তার নৈপুণ্য দেখে। এতটাই জীবন্ত! গ্যালিলেও, সক্রেটিস থেকে পেলে, এলভিস প্রেসলি, জর্জ ক্লুনি, টম ক্রুজ সবাই আছেন সেখানে। টাওয়ার ব্রিজের নীচে টেমস নদীর পাশে বেঞ্চে বসে যেমন কয়েক জন মগ্ন হয়ে কিছু লেখাজোকা করছে, তেমনই আবার কেউ বই পড়ছে, ছবি আঁকছে। কেমন আনায়াসে সময় কেটে যায় ওখানে বসে। তার পর গেলাম বাকিংহাম প্যালেস, পার্লামেন্ট স্কোয়ার, বিগবেনের পাশেই লন্ডন আই। লল্ডন আইয়ের ওপর থেকে পুরো শহরের এক অপূর্ব দৃশ্য পাওয়া যায়। এরই মাঝে চলত আমাদের পেটপুজো পুরোদমে। ওখানে অক্সফোর্ড স্ট্রিটয়ে ওপেন রেস্তোরাঁয় বসে ইংলিশ ব্রেকফাস্ট করার মজাই আলাদা। এই রাস্তা জুড়ে বিশ্বের সব চেয়ে হাই এন্ড ব্র্যান্ডস লুই ভিতোঁ, মাইকেল কর্স থেকে কেলভিন ক্লেন—রাস্তার দু’ পাশে তাদের সারি দিয়ে স্টোর। আবার কোনও গলিতে চলে কোনও এক শিল্পীর প্রাণখোলা লাইভ মিউজিক। ডায়েট গিয়েছিল চুলোয়। ব্লুবেরি চিজ কেক খেতে খেতে ঢুকে পড়লাম নটিং হিলের পথে। সেখানে আবার রাস্তা জুড়ে মেলা। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের স্টল বসেছে। আবার আর এক দিকে সব দেশের বিশিষ্ট খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। আমি দৌড়ে মিক্সড কম্বো স্প্যানিশ বুফে নিয়ে জমিয়ে বসলাম কাউচে।
পরের দিন লাগেজপত্র গুছিয়ে ট্রেনে রওনা দিলাম স্কটল্যান্ডের পথে।
সেদিন যেমন ঠান্ডা, ততটাই হাওয়া আর বৃষ্টি। ভিজতে ভিজতে ঢুকলাম এডিনবুর্গ ক্যাসেলে। যেমন তার স্ট্রাকচার, ততটা গভীর তার ইতিহাস। ওখানে পর্যটকদের জন্য বিখ্যাত আকর্ষণের অন্যতম রয়াল ক্রুজ, হলিরুড প্যালেস, রয়্যাল বোটানিক গার্ডেন ঘুরে হপ অন, হপ অফ বাস থেকে নেমে জানতে পারলাম এডিনবুর্গ হন্টেড কর্নারসের ব্যাপারে। ব্রডিস ক্লোজ, নিড্রি সেন্ট ভল্ট… বিবিসিতেও বহুবার এ সব জায়গা দেখিয়ে বলেছে সত্যিই ওখানে অশরীরী কিছু আভাস পাওয়া যায়। তার অনুভব করতে অনেকেই রাত এগারোটার পর যায় সেখানে। আমার ইচ্ছে থাকলেও সাহসে কুলোল না। যাক গে সে সব কথা—স্কটল্যান্ডের সৌন্দর্য দেখে আমি অভিভূত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। যেন পিকচার পোস্ট কার্ড। ঈশ্বর যেন একটু বেশি সময় নিয়েই জায়গাটা বানিয়েছেন। এবারে লন্ডন আর এডিনবুর্গ গিয়ে টিউব রেল আর তেতলার খালি ছাদের বাসে এ ক’টা দিন এমনই চড়কি পাক কেটেছি যে ফলাও করে বলতে পারি এখন আমি কারও ফ্রি টুরিস্ট গাইড হলে মন্দ হয় না।
দুর্গাপুজো তো এসেই গিয়েছে। এই সময় আমার শহর হয় সব চেয়ে সুন্দরী। চারিদিক ঝলমল করে আলোয়। পশ্চিম বাংলার যত শিল্পী আছেন কত দিন আগে কলকাতায় চলে আসেন প্যান্ডেল তৈরি করতে। কী অপূর্ব তাঁদের হাতের কাজ। বিভিন্ন থিম পুজোর রূপই আলাদা। সারা বিশ্ব থেকে লোক ভিড় করে মেতে ওঠে এই উৎসবে। আর আমি এ ক’টা দিনের জন্য তো সারা বছর অপেক্ষায় থাকি। কত আড্ডা, মজা, আনন্দ আর মন প্রাণ দিয়ে মাকে ডাকা। ঢাক, ধুনুচি, নতুন জামা… উপোস করে অঞ্জলি দেওয়া আর তার পর সন্ধ্যারতি। রাত জেগে দালানে বসে চুটিয়ে আড্ডা। ঘুম মানে সময় নষ্ট।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি বান্ধবীদের, গুছিয়ে সাজগোজ করুন। তবে পুজোর ক’দিন শাড়ির সঙ্গে আরামদায়ক জুতো পরতে ভুলবেন না। স্নিকার্স পরলেও ক্ষতি নেই। নতুন জুতোর কামড় খেতে নিশ্চয়ই চাইবেন না। তা হলে মণ্ডপে ঘোরার মজাই য়ে মাটি। পুজোয় চলুক চুটিয়ে আড্ডা, মজা, হইচই, ভূরিভোজ আর প্যান্ডেল হপিং তো মাস্ট। সকলকে জানাই পুজোর আন্তরিক শুভেচ্ছা আর ভালবাসা। গুরুজনদের আমার প্রণাম
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সমুদ্র পাড়ে দুর্গারূপে নওশাবা
শুধু ঈদ কিংবা পূজা নয়, বিশেষ ধর্মীয় দিন উপলক্ষে ফটোশুটেবিস্তারিত পড়ুন
শুল্কমুক্ত গাড়ি খালাস করেছেন সাকিব-ফেরদৌস, পারেননি সুমনসহ অনেকে
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের জন্য আমদানি করাবিস্তারিত পড়ুন
আলোচিত নায়িকা পরীমনির পরিবার সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানতেন?
গভীর রাতে সাভারের বোট ক্লাবে গিয়ে যৌন হেনস্তা ও মারধরেরবিস্তারিত পড়ুন