দুর্বল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট, বাড়ছে কলড্রপ, নির্বিকার বিটিআরসি
দুর্ভোগে মোবাইল ব্যবহারকারীরা
মোবাইল ফোনের গ্রাহক সেবার মান নিচের দিকে নামছেই। নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না, সীমাহীন কলড্রপ, ইন্টারনেট সার্ভিসও খুবই দুর্বল। খোদ রাজধানী ঢাকাতে পাওয়া যাচ্ছে না থ্রিজি। কিছুক্ষণ পরপর থ্রিজি নেমে আসে টুজিতে। সবকিছু মিলিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মোবাইল ফোন গ্রাহকদের। কিন্তু প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই।
বেসিস সভাপতি প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘এটা নিয়ে চিত্কার করতে করতে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এখন আমি ভাবছি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যে মনিটরিং সেল আছে সেখানে নালিশ জানাবো। তাতে যদি কিছু ফল পাওয়া যায়। বিটিআরসি যতদিন পর্যন্ত এটা নিয়ে সক্রিয় না হবে ততদিনে এ থেকে প্রতিকার মিলবে না। এখন পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে জনগণ কার কাছে যাবে, কিছুই জানি না।’
মোবাইল ফোনের সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা এখন গ্রাহকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও বলছেন। সেখানে প্রতিদিনই নানা অভিযোগের চিত্র উঠে আসছে। রশীদ হায়দার নামে একজন লিখেছেন, ‘আমরা কি পেছনের দিকেই যাব? থ্রিজি থেকে ফোরজিতে যাচ্ছি? অথচ মোবাইল ফোনে আসছে টুজির ইন্টারনেট।’ কাদের হোসেন ফকির নামে একজন লিখেছেন, ‘আমার মোবাইল ফোনে আজ ৮ বার কল কেটে গেছে। কোনোবারই টানা তিন মিনিট কথা বলতে পারিনি। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাব কবে?’ এই অভিযোগগুলো সব অপারেটরের বিরুদ্ধেই।
টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের উপস্থিতিতে সবগুলো অপারেটরের সিইওকে নিয়ে আমরা একটা বৈঠক করেছি। সেখানে কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিয়ে কথা হয়েছে। অপারেটররা প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা (Technology neutrality) চেয়েছে। আমরা বিটিআরসিকে প্রায় এক মাস আগে চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। গ্রাহক সেবা বাড়াতে আমরা অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছি। সেগুলো কাজও শুরু করেছে। এখন কিন্তু মোবাইল ফোন অপারেটররা কলড্রপে কল ফেরত দিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেয়া হলেও বিটিআরসিকে এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘বিটিআরসি যতদিন শক্ত না হবে, ততদিন কারো উদ্যোগই কাজে আসবে না। এখানে বিটিআরসিকেই শক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। এখানে সাধারণ মানুষের কি করার আছে?’ তিনি বলন, ‘ঢাকায় তো তা-ও একটু-আধটু ইন্টারনেট পাওয়া যায়, জেলা শহরগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। সেখানে একটা মেইল খুলতেই কয়েক মিনিট পার। ইন্টারনেটে সবাই এগিয়ে যাচ্ছে আর আমরা পিছিয়ে পড়ছি।’
তবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহ্জাহান মাহমুদ বলেন, ‘গ্রাহক সেবা বাড়াতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ফোরজি এলে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে।’ তিনি বলেন, ‘কলড্রপ পরিমাপ করতে আমরা কিছু যন্ত্রপাতি কিনেছি। সেগুলোর ব্যবহার শুরু হচ্ছে। এখন আমাদের অপারেটরদের দিকেই চেয়ে থাকতে হয়। তারা যে রিপোর্ট দেয় সেটাই বিশ্বাস করতে হয়। ফলে তাদের ধরতে পারছি না। যন্ত্রপাতির ব্যবহার পুরোপুরি শুরু হলে তখন আমরা তাদের ধরতে পারব। তখন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’ তিনি বলেন, ‘গ্রাহকদের অভিযোগ নিয়ে আমরা তাদের কাছে ব্যাখ্যাও চাচ্ছি।’
গ্রাহকদের কিছু অভিযোগ তো প্রতিনিয়তই পাওয়া যাচ্ছে। তার মধ্যে আছে, ফোন থেকে কল করার পর ব্যালান্স অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া, দু-এক টাকা এমনিই কেটে নেয়াসহ আরো অনেক। এই অবস্থা শুধু গ্রামীণফোন বা বাংলালিংকের নয়, রবি, এয়ারটেল ও টেলিটক- সবার। শুধু কি তাই, কল ড্রপ, ইন্টারনেটের গতি ঘোষণা অনুযায়ী না পাওয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ গ্রাহকের। কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। এর বাইরে প্রমোশনাল এসএমসের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ। গড়ে প্রতিদিন ৮-১০টি করে এসএমএস আসে। এ ছাড়া বিরক্তিকর কল তো আছেই। সেখানে শোনানো হয় গান।
প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৮৪ হাজার। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক প্রায় ৬ কোটি। বাংলালিংকের ৩ কোটি ১৩ লাখ ও রবির ২ কোটি ৭০ লাখ, এয়ারটেলের ৮২ লাখ ১৯ হাজার। আর টেলিটকের ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার। আর দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা বর্তমানে ৬ কোটি ৭২ লাখ ৪৫ হাজার।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
আজকের যত আয়োজন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্রে আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছেবিস্তারিত পড়ুন
মোবাইল নম্বর ঠিক রেখেই অপারেটর পরিবর্তন করা যাবে: প্রক্রিয়া শুরু
মোবাইল ফোনের নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর পরিবর্তন (মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি-এমএনপি)বিস্তারিত পড়ুন
স্মার্টফোন কিনে লাখপতি হলেন পারভেজ
নির্দিষ্ট মডেলের ওয়ালটন স্মার্টফোন কিনে পণ্য নিবন্ধন করলেই মিলছে সর্বোচ্চবিস্তারিত পড়ুন