দ্রুত ডিজিটালকরণের আশা আছে, ঝুঁকিও আছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন টাইমস পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছেন।‘র্যাপিড ডিজিটাইজেশন ব্রিংস হোপ অ্যান্ড সাম ডেঞ্জার টু বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রবন্ধটি এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য অনুবাদ করা হলো।
নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থ চুরির সংবাদ আপনি যদি পড়ে থাকেন, তাহলে আপনি ভুল ধারণা করছেন যে, বাংলাদেশ ডিজিটাল-বিষয়ে একটি অদক্ষ দেশ।
সত্যকে চেপে রাখা যায় না।
হ্যাকিংয়ের ঘটনা অনুতাপের এবং বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার এবং হ্যাকারদের গ্রেপ্তারে একযোগে কাজ করছে। তবে বিশেষ করে বাংলাদেশ লক্ষ্যবস্ত হওয়ার কারণ হলো দেশটি খুব দ্রুত এবং বিশাল পরিসরে ডিজিটাল হচ্ছে।
বাংলাদেশের ডিজিটাল প্রবৃদ্ধি—৪৫ বছরের ইতিহাসে অন্যান্য উন্নয়নের মতোই—খুব তড়িৎ গতিতে হয়েছে। দেশটি এরই মধ্যে দ্বিতীয় প্রজন্মের ডিজিটাল ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যা দ্রুত গতির, ব্যবহারের দিক থেকে সহজ ও সুরক্ষিত। এটা ভালো খবর। খারাপ দিক হলো, এখনো অবশিষ্ট থাকা প্রথম প্রজন্মের ব্যবস্থা হ্যাকারদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের ডিজিটাল-করণ প্রক্রিয়া কেমন গতিতে এগুচ্ছে? ২০০৮ সালে মাত্র দশমিক ৩ শতাংশ বাংলাদেশের নাগরিক ডিজিটাল মাধ্যম হয়ে সরকারি সুবিধা পেত, সেসময় ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছিল, সরকারি সেবা জনগণকে সরাসরি দেওয়ার জন্য। আজ ৩৫ শতাংশ নাগরিক এ সুবিধা পান এবং সংখ্যাটা বাড়ছে।
প্রতিটি আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সব নাগরিকের কাছাকাছি যেতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি চালু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেক বাংলাদেশির বাড়িতে ডেস্কটপ কম্পিউটার বা ইন্টারনেট নেই, তবে ৯৫ শতাংশ মানুষের মোবাইল ফোন আছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য হলো নাগরিকদের যাঁরা যেখানেই আছেন সেখানে তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এবং সরকারি সেবা তাঁদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। এই প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ, সরকারের স্বচ্ছতা দ্রুত গতিতে বেড়ে যায়।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি রপ্তানি হয় ২৬ মিলিয়ন (দুই কোটি ৬০ লাখ) ডলারের। বর্তমানে এ অঙ্ক ৩০০ (৩০ কোটি) মিলিয়ন ডলারের বেশি।
তৈরি পোশাকশিল্প এখনো অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। তবে মাত্র একটি শিল্পে নির্ভরতা খারাপ ব্যাপার। এ কারণে আগামী দুই বছরে বাংলাদেশ ৭৫ হাজার তথ্যপ্রযুক্তি প্রফেশনালকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। হাইটেক খাতে বৈশ্বিক পর্যায়ে খেলোয়াড় হওয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ পরিকল্পনা।
ডিজিটালকরণের চিহ্ন সর্বত্র। সরকার দেশজুড়ে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি ডিজিটাল সেবাকেন্দ্র নির্মাণ করেছে, যা প্রতিটি গ্রামে হেঁটে যাওয়ার মতো দূরত্বে রয়েছে। ঢাকার বাইরে ২৩১ একরের একটি হাইটেক পার্ক নির্মাণ হচ্ছে, যা রাজধানীর হাইটেক ব্যবসাকে প্রণোদনা দেবে। গত বছর বাংলাদেশ ৬০ হাজার বর্গ ফুটের একটি সফটওয়ার প্রযুক্তির পার্ক চালু করেছে, পরিকল্পনায় থাকা এ ধরনের সাতটি পার্কের মধ্যে প্রথম এটি। দেশজুড়ে সরকার ডিজিটাল ডাটা সেন্টার স্থাপন করছে এবং তথ্যপ্রযুক্তির জন্য একটি ব্যবসা-সহায়ক কর্মসূচি চালু করেছে। এ ছাড়া দেশের এক লাখ ৭০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতে মাল্টিমিডিয়া ও ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষ চালুর চিন্তাভাবনা করছে সরকার।
তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের আগামী ২০ বছরে ২০ লাখ প্রোগ্রামার প্রয়োজন হবে এবং কেবল বাংলাদেশ থেকেই কয়েক লাখ প্রোগ্রামার নেওয়া হবে। নতুন কর্মসূচিগুলোর লক্ষ্য হলো শ্রমনির্ভর দেশ থেকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তর করা।
বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প দ্রুত বেগে অগ্রসর হচ্ছে। ২০১৩ সালের প্রামাণ্যচিত্র ‘স্টার্টাপ ঢাকা’য় দেশের উদ্যোক্তা ও উলম্ফন হতে থাকা ব্যবসার ওপর আলোকপাত করা হয়। এ রকম অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে।
বাংলাদেশে ভ্রমণকারীদের ওয়ান-স্টপ দোকান হলো ‘ট্রিপুলি’। ‘লাইটক্যাসল ডাটা’ কোম্পানিগুলোকে নিজ নামে ভোক্তাদের নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ দেয়। ‘লেট’স ইট’ হলো রেস্তোরাঁর একটি নির্দেশিকা। ‘বঙ্গবিডি’ হলো বাংলা সিনেমা ও ভিডিওর জন্য স্ট্রিমিং সেবা। গাড়ির জন্য চাওয়া মাত্র পেয়ে যাবেন ‘চলো’ মোবাইল অ্যাপে, ভ্রমণ-যোগাযোগ নিয়ে এ ধরনের আরো অ্যাপস আছে। বাংলাদেশে সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় উদ্যোগটির নাম ‘চালডাল’, খাবার সরবরাহকারী এ সেবাটির পেছনে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ওয়াই কম্বিনেটর। অনেক প্রতিষ্ঠান কেবল নারীরাই পরিচালনা করে থাকে, যেমন, মায়া, যা মাতৃস্বাস্থ্যসহ নারীবিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়।
বাংলাদেশের সাফল্য এসেছে বলে হ্যাকাররা নজর দিয়েছে, ব্যাপারটি এভাবে দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে বিদেশি পুঁজির কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগের গন্তব্যস্থলও এই দেশ, শ্রেষ্ঠ মনের জন্য সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এবং প্রযুক্তি নিয়ে একুশ শতকের প্রারম্ভে না-বলা গল্পগুলোর মধ্যে একটি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদবিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকবির ম্যুরাল থেকে কালি মুছে দিল উপজেলা প্রশাসন
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরালে কালি দিয়ে মুখবিস্তারিত পড়ুন

ফখরুল: ইউনূস–মোদির বৈঠক আশার আলো দেখাচ্ছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন