দয়ালীদের ‘দয়া’ করারও কেউ নেই

‘আসমানীদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি…।’ পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের ‘আসমানী’ কবিতার সেই আসমানীকে রসুলপুর দেখতে যেতে হবে না। রংপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম ভগবানপুরে গেলেই মিলবে তার দেখা। যদিও আসমানী নামের সাথেও তার নামের মিল নেই; তবে বৈশিষ্ট্য একই। শুধু নাম তার দয়ালী রায় (৮০)।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এ বৃদ্ধার সাথে অনলাইনের এ প্রতিবেদকের কথা হয় মুঠোফোনে। বর্ণনা করেন তার নিদারুণ কষ্টের কথা। তার ভাষ্য, পাঁচ ছেলে আর তিন মেয়ের জন্ম দিয়েছেন তিনি। ছেলে-মেয়েদের সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামী নিমাই চন্দ্র কয়েক বছর আগে মারা যাওয়ার পর খুবই অভাব-অনাটনে পড়েন।
দয়ালী বলেন, এই বয়সে আর এতো কষ্ট সহ্য হয় না। গায়ে (শরীরে) জোর নেই; ঠিকভাবে কাজও করতে পারি না।
তিনি আরো বলেন, কেউ কোনো রকম সাহায্য সহযোগীতা করে না। খুবই কষ্ট হচ্ছে। এর চেয়ে মরে যাওয়াও ভালো।
আক্ষেপ করে অশীতিপর এ বৃদ্ধা বলেন, ‘বাবা শখ করে নাম দয়ালী রাখলেও; আমাকে কেউ দয়া দেখায় না।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দয়ালী প্লাটিক দিয়ে মোড়ানো এক মাটির ঘরে বাস করেন। যখন বৃষ্টি আসে, তখন পানিতে ভিজিয়ে দেয় সারা ঘর। এ জন্য রাতে ঘুমাতেও পারেন না। সেখানে সব সময়ই রোদ-বৃষ্টি আর আলো-হাওয়ার খেলা চলে। নিজের একখণ্ড জমিও নেই। অন্যের জমিতে নামমাত্র একটি ঘর তুলে কাটছে তার জীবন।
দয়ালীদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি কোনো উদ্যোগ নেই। নেই কোনো রকমের সরকারি সাহায্য-সহযোগীতা। ফলে বয়স্ক এসব অসহায় মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। না খেয়ে, খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে কোনো রকমে বেঁচে আছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু দয়ালী নয় এই অঞ্চলের অনেক দয়ালীরই দেখার কেউ নেই। সরকারের ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’র আওতায় বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা কোনটিই তাদের ভাগ্যে জোটে না।
এর পেছনের কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, বয়স্ক বা বিধবা ভাতা পেতে গেলে তাদের উচু দরের তদবির করতে হয়। সেই তদবিরে তারা কুলিয়ে উঠতে পারে না, তাই তাদের ভাগ্যে কিছুই জোটে না।
অার চিকিৎসার সেবার বিষয়টি আরো মারাত্মক। এসব অসহায় মানুষদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাই নেই।
‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’র আওতায় বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা না পাওয়ার বিষয়টি রংপুরের পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রাজুর কাজে জানতে চাইলে তিনি অনলাইনকে বলেন, এমন তো অনেকেই আছে, আমি কাকে রেখে কাকে দিবো? আর একটি বিষয়, তাদের তো হুট করে আমি কিছু দিতে পারি না। যদি ভাতা পাওয়া কেউ একজন মারা যায়; তাহলে তার জায়গায় অন্য একজনকে ভাতার ব্যবস্থা করতে পারি।
যদিও তিনি দায়ালী রায়ের ঠিকানাটা তালিকায় রাখবেন বলে আশ্বাস দেন।
এমন বৃদ্ধাও কেনো এখনো সরকারি অনুদান বা সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন; তা জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন অনলাইনকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সমাজের সুবিধা বঞ্চিত নারীদের সহযোগিতা করার। তবে, এমন কেউ যদি বাদ পড়ে তার জন্য দুঃখিত। পরবর্তীতে কেউ যাতে বাদ না পড়ে এ জন্য ব্যবস্থা করা হবে।
অবশ্য এজন্য ওই ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে দয়ালী রায়ের জন্য কিছু একটা করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যথাযথ দেখভালের ব্যবস্থা করলে এমন অসহায় মানুষদের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন

আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন

সিলেটের জঙ্গি নেতা আব্দুল বারি ও শামসু জামিনে মুক্ত
নিজস্ব সংবাদদাতা: শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিবাদী সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এরবিস্তারিত পড়ুন