ধর্ষণের পর অন্তঃসত্ত্বা প্রতিবন্ধীর মৃত্যু, চিকিৎসায় অবহেলা!
সিরাজগঞ্জে ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা এক প্রতিবন্ধী নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের অবহেলা ছিল বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারীর স্বজন ও অন্য নারীরা।
মৃত্যুর দুদিন আগে গ্রাম্য সালিসে অভিযুক্ত ধর্ষককে এক লাখ টাকা জরিমানা ও ১২ শতক জমি ওই প্রতিবন্ধী নারীর নামে লিখে দেওয়ার রায় হয়েছিল।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, জেলার কামারখন্দ উপজেলার পাইকোশা গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী সেলিনা খাতুনকে (৩০) নয় মাস আগে একই এলাকার আবু সাঈদ ধর্ষণ করেন।
সেলিনার বড় ভাই মোকাদ্দেস আলী জানান, আবু সাঈদের হুমকিতে এতদিন সেলিনা বিষয়টি কাউকে জানায়নি। কিন্তু গত ২৯ ডিসেম্বর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডাক্তারি পরীক্ষায় জানা যায়, সেলিনা নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এরপর সেলিনা ধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়টি জানান। গত ৩০ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটি গ্রাম্য সালিস হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল ও মেম্বার আবদুল কুদ্দুসের মধ্যস্থতায় এই সালিসে অভিযুক্ত সাঈদ ঘটনার কথা স্বীকার করেন। এরপর সালিসের রায়ে তাঁকে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং ১২ শতক জমি সেলিনার নামে লিখে দিতে বলা হয়। এ ছাড়া সন্তান প্রসবের পর সেলিনাকে স্ত্রী হিসেবে ঘরে তুলে নেওয়ার রায়ও ঘোষণা করা হয়।
মোকাদ্দেস আলীর অভিযোগ, এই রায় ঘোষণার পর সে রাতেই সেলিনা আকস্মিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর নানা অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসকের অবহেলায় সেলিনা আজ দুপুরে মারা গেছেন।
সেলিনার বোন শাহিনুর খাতুন বলেন, ‘আজ সকালে সেলিনার অবস্থা বেশি খারাপ হলে আমি ও আমার চার ভাই অনেক অনুরোধ করা সত্ত্বেও ডাক্তার ও নার্সরা চিকিৎসা দিতে আসেননি। অথচ সেলিনা মারা যাওয়ার পর সব ডাক্তার ও নার্সরা ওর লাশ ঘিরে ছিল।’
হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী বেবি খাতুন জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে সেলিনা প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তাঁকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সময়মতো চিকিৎসা কিংবা অক্সিজেন দেয়নি। তাঁর পরিবারের লোকজন বারবার চেষ্টা করেও কোনো চিকিৎসক বা নার্সকে রোগীর কাছে আনতে পারেননি।
সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আঞ্জুমান আরা বকুল জানান, রোগীর জন্য সাধ্যমতো চেষ্টাই করা হয়েছে। তিনি এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করেন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, ৩০ ডিসেম্বর তিনি সালিসি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে জমি এবং টাকা জরিমানার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী সেলিনাকে বিয়ে করার রায় ঘোষণার সঙ্গে এই মৃত্যুর একটি যোগসূত্র থাকতে পারে। প্রায় ৫০ বছর বয়সী সাঈদের পাঁচ ছেলেমেয়েসহ মেয়ের ঘরে নাতি নাতনিও রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. দেবব্রত রায় জানান, অভিযোগটি তিনি শুনেছেন। তদন্ত করে চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগের প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এ বিষয়ে কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল উদ্দিন সরকার জানান, বিষয়টি নিয়ে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেননি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর পদ হারালেন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলেরবিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল গ্রেপ্তার
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে রাজধানীরবিস্তারিত পড়ুন