ধারাভাষ্য আমার কাছে অভিনয়ের মতো: মরিসন
সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার। কণ্ঠের বৈচিত্র্য, নাটকীয়তা আর বিশেষণের দারুণ ব্যবহারে জোগান বিনোদনের খোরাক। ক্রিকেট ক্যারিয়ার ছিল চোট জর্জর; তারপরও বেশ সফল। রিচার্ড হ্যাডলির অবসরের পর টেনে নিয়েছেন নিউ জিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ। টেস্টে সবচেয়ে বেশি শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ড এক সময় তারই ছিল। মাঠ ও ধারাভাষ্যকক্ষের ভেতরে-বাইরে দারুণ আমুদে চরিত্র সাবেক কিউই ফাস্ট বোলার ড্যানি মরিসন একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বললেন তার ক্রিকেট ও ধারাভাষ্য ক্যারিয়ার নিয়ে।
ধারাভাষ্যকার পরিচয়টাই তো এখন বড়। সেটি দিয়েই শুরু হোক। আপনার কাছে বা আপনার জন্য, ধারাভাষ্য ব্যাপারটি কি?
ড্যানি মরিসন: ইন্টারেস্টিং কোনো কিছু যোগ করা। ছবি তো টিভিতে দেখা যাচ্ছে। দর্শকের জন্য তাই ভিন্ন কিছু নিয়ে আসা, বাড়তি কিছু যোগ করা। মাঠে যা হচ্ছে, সেসব তো বলতে হবেই। কিন্তু সেটির বর্ণনা ভিন্নভাবে করা। আমি চেষ্টা করি, ব্যাপারটিকে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত করে তুলতে। খ্যাপাটে, পাগলাটে কিছু যোগ করি।
আমার কাছে ধারাভাষ্য অনেকটা অভিনয় করার মত। কখনও নাটকীয়, কখনও ক্রাইম-থ্রিলার, কখনও আবার সিরিয়াস কিছু বা ডকুমেন্টারি। একজন অভিনেতাকে যেমন সব চরিত্রে মানিয়ে নিতে হয়, ধারাভাষ্যকারকেও ম্যাচের সব ধরনের পরিস্থিতি কণ্ঠে ধারণ করতে হয়। সব ধারাভাষ্যকারের নিজস্ব ধরন আছে। আমি একটু ক্রেজি বা হাই-এনার্জিতে থাকতে পছন্দ করি।
সেটা কি ইচ্ছে করেই? মানে বরাবরই এই ঘরানার ধারভাষ্যকার হতে চেয়েছেন নাকি সহজাতভাবেই এসেছে?
মরিসন: সেটা সময়ের সঙ্গে হয়েছে। ধারাভাষ্যকার হিসেবে আমার শুরুর সময়টায়, যখনও আমি কেবল শিখছিলাম, তখন টেস্ট ক্রিকেটের ধারাভাষ্য অনেকটাই একঘেয়ে মনে হতো আমার। বলছি ১৯৯৮-৯৯, ২০০০ সালের দিকের কথা। আমি তখন থেকেই ভিন্ন কিছু করার কথা ভাবতাম। সৌভাগ্যবশত সে সময় আমি মার্টিন ক্রোর ক্রিকেট ম্যাক্সে (ভিন্ন ঘরানার সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেট) কাজ করার সুযোগ পেলাম। যেখানো মাঠের খেলার মত ধারাভাষ্যও ছিল খুব ‘হাই-অকটেন’, দ্রুতলয়ের, বুম বুম…ওখানেই আমি নিজেকে সত্যিকার অর্থে আবিষ্কার করলাম ধারাভাষ্যকার হিসেবে।
এরপর তো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এলো। ২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপের পর দারণ জনপ্রিয়তা পেল। বিশ্ব জুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলো শুরু হলো। আমার ধারাভাষ্যের ধরনটার সঙ্গে টি-টোয়েন্টি খুব মানিয়ে যায়। আগে আমি ইচ্ছে করেই নিজেকে একটু দমিয়ে রাখতাম। টি-টোয়েন্টি আসার পর মনে হলো, নিজেকে প্রকাশ করার, আমার সহজাত ব্যপারগুলো ফুটিয়ে তোলার এটিই সুযোগ।
নিউ জিল্যান্ড থেকে বেরিয়ে আসাও একটি ব্যাপার। ১০ বছর আগে আমি নিউ জিল্যান্ড ছেড়েছি, এখন ব্রিজবেনে থিতু হয়েছি। নিউ জিল্যান্ড ছেড়ে আসাও ওখানকার প্রচলিত ধারাকে পেছনে ফেলতে সহায়তা করেছে। নিউ জিল্যান্ডে আমি খুব কমই কাজ করি, বাইরেই করি প্রায় সব।
দারুণ সব বিশেষণ ব্যবহার করেন আপনি, বর্ণনা হয় অনেক নাটকীয়। সেটা কিভাবে হয়?
মরিসন: সহজাতভাবেই। ধারাভাষ্য তো স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসে হয় না। এটা সভা-সেমিনারে বক্তৃতা নয়। সরাসরি ধারাভাষ্যের সৌন্দর্যই এটি যে তাৎক্ষণিক ভাবনাটারই বহিঃপ্রকাশ থাকে। আমার দর্শনটা হলো, মাঠকে ধরে নেই একটা থিয়েটার। ওখানে কিছু হচ্ছে, আমরা সেখানে সৃষ্টিশীলতা যোগ করি। আমার ক্ষেত্রে প্রকাশটা হয় একটু বুনোভাবে। মজা করতে পছন্দ করি।
আমার ক্ষেত্রে কথার ছন্দ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাল-লয়ে কথা বললে ভিন্ন মাত্রা আসে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যেমন ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’, আমার ধারাভাষ্যও তা-ই। এই যে আপনার সঙ্গে কথা বলছি, এখন দেখছেন মাঝেমধ্যেই চিৎকার করে বলে ফেলছি… ‘তামিম ইকবাল হ্যাজ কাম ডান্সিং ডাউন দা ট্র্যাক অ্যান্ড হিট দিস ওয়ান মাইলসসসস’… শুরুটায় দেখলেন অনেক জোরে বলে শেষ দিকে আবার ধীরে ধীরে বললাম… দর্শককে এত সম্পৃক্ত করা যায় ভালোভাবে।
আপনার কণ্ঠের এই ওঠা-নামা, বৈচিত্র, নাটকীয়তাই আপনাকে অনেকের থেকে আলাদা করে তুলেছে। এটাও কি সহজাত নাকি সময়ের সঙ্গে এসেছে?
মরিসন: আমি সৌভাগ্যবান যে আমার মা ছিলেন নাট্য জগতের। ১৯৭৮ সালে অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়েছিলেন নাটকের কাজ। আমার বয়স তখন ১১-১২, কাছ থেকে দেখেছি। সত্তুরের শেষ দিকে মা নিয়মিতই নাটকে কাজ করতেন। পরে আমি নিজেও নাটকের ক্লাস করেছি। সেটা পরে আমার কাজে লেগেছে ধারাভাষ্যে এসে। কখন উত্তেজিত হতে হবে, কণ্ঠের ওঠা-নামা কেমন থাকবে, ডেলিভারি কিভাবে দেব, নাটকের ক্লাসেই এসব হয়ত আমার ভেতরে গেঁথে গিয়েছিল।
ধারাভাষ্য শুরুর সময় আদর্শ কে ছিল?
মরিসন: আমাদের প্রজন্ম আমরা বেড়ে উঠেছি রিচি বেনোর ধারাভাষ্য শুনে। আমাদের অনেকের কাছেই ধারাভাষ্যের শেষ কথা রিচি। সে সময় আমরা খুব রেডিও শুনতাম। বিবিসির টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে জন আর্লট, ব্রায়ান জনস্টন মনে দাগ কেটে ছিল। ফ্রেডি ট্রুম্যানের ধরন ভালো লাগত। জেফ্রিকে (জিওফ বয়কট) অনেকেই হয়ত ততটা পছন্দ করত না, একটু একগুঁয়ে। কিন্তু দারুণ শক্তিশালী কণ্ঠ।
টনি গ্রেগের সঙ্গে অনেকটা কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। টনিও চিৎকার করতে পছন্দ করত, দারুণ প্রাণবন্ত ছিল। হয়ত ক্যারি প্যাকার সিরিজে কাজ করার কারণে। বিল লরিও দারুণ, একটা নিজস্বতা আছে তার। ইংল্যান্ডের জ্যাক ব্যানিস্টার, টম গ্র্যাভেনিকেও ভালো লাগত।
এখন কার সঙ্গে ধারাভাষ্যকক্ষে বসতে ভালো লাগে?
মরিসন: অনেকেই আছে, বিশেষ করে আইপিএলে তো অনেকে কাজ করেন। তবে মেয়েরা ধারাভাষ্যে যোগ দিয়ে একটা ভিন্ন মাত্রা এনেছে। মেল জোনস, লিসা স্টালেকার, আনজুম চোপড়া, ইশা গুহ…সবাই ভালো করছে।
আমার নিজ দেশের ওদের সঙ্গে কাজ করতেও ভালো লাগে… মার্টির ক্রো ছিলেন, ইয়ান স্মিথ, সাইমন ডুল, স্কট স্টাইরিস। এছাড়া অ্যালান উইলকিন্স, ওর সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। আইপিএলে অনেক সময় কাটাতে হয়; রবি শাস্ত্রী, সঞ্জয় মাঞ্জরেকারদের সঙ্গে কাজ উপভোগ করি। সবাই খুব আলাদা, ধরন আছে। আমি সবার সঙ্গই উপভোগ করি।
এবার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আসা যাক। নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন।
মরিসন: এক কথায় বললে, উপভোগ করেছি। হয়ত অনেক সময়ই আমি খুব সিরিয়াস ছিলাম না, যতটা থাকা উচিত ছিল। কারণটা মূলত ছিল, ক্রিকেট আমার কাছে যতটা না পেশা বা রুটি রুজির ব্যাপার ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল প্যাশন। ক্রিকেটের বাইরেও অনেক কিছু করার ছিল।
তবে রিচার্ড হ্যাডলির সঙ্গে খেলার সময়টা আমি দারুণ উপভোগ করেছি। জন রাইট ছিল, ইয়ান স্মিথ, জেফ ও মার্টিন ক্রো, দিপক প্যাটেল…আশির শেষ দিকে আর নব্বইয়ের শুরুর দিকের সময়টা ছিল অদ্ভুত আনন্দময়।
তখন সিরিয়াস ছিলেন না বলে আফসোস হয় না এখন?
মরিসন: সিরিয়াস ছিলাম না মানেই যে আলসে ছিলাম, তা নয়। হ্যাঁ, হয়ত আরেকটু নিজেকে পুশ করতে পারতাম, হয়ত আরেকটু স্মার্ট হতে পারতাম ভাবনায় ও কাজের ধরনে। তবে এখন যেমন ট্রেনিং থেকে শুরু করে সব কিছুতেই পেশাদারী আবহ আছে, আমাদের সময় ততটা ছিল না। নিজেদেরই অনেক কিছু করতে হতো। সবসময় নিখুঁত থাকতে পারিনি।
আমাদের সময় আমরা খেলেছি, মজা করেছি, পার্টি করেছি। জীবনটা এখনকার চেয়ে সহজ ছিল। এখনকার ছেলেরা হয়ত এতটা করতে পারেন না। এত পেশাদারি মনোভাব, এত খেলা, এত ইভেন্ট, আমাদের মত পার্টি করার সুযোগ কোথায়!
১০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। ইনজুরি যদিও আপনার পিছু লেগে ছিল, তার পরও কি মনে হয় না, ক্যারিয়ারটা আরেকটু লম্বা হতে পারত?
মরিসন: হয়ত। তবে ইনজুরি ভুগিয়েছে অনেক। তুলনামূলক ভাবে খাটো ফাস্ট বোলার হিসেবে কাজটাও কঠিন ছিল। শরীরের ওপর ধকল গেছে অনেক। আর সত্যি বলতে, তখন খেলাটায় এত অর্থের হাতছানি ছিল না যে চালিয়ে যাওয়ার একটা অনুপ্রেরণা থাকবে। এখন যেমন এত খেলা, এত এত জায়গায় সুযোগ যে নিজের সঙ্গে লড়াই করা যায়। সে সময় এমনটি ছিল না। আমার মনে হয়েছে, ‘যথেস্ট হয়েছে, এবার শরীরটার কথা শোনা উচিত।’
অন্তত একটা তৃপ্তি নিশ্চয় আছে যে হ্যাডলির পর নিউ জিল্যান্ডের ফাস্ট বোলিংকে নেতৃত্ব দিয়ে টেনেছেন?
মরিসন: চেষ্টা করেছি। তবে সত্যি বলতে, দায়িত্বটাকে অনেক বড় ভাবিনি। কারণ, হ্যাডলির উত্তরসূরি হিসেবেই ভাবিনি নিজেকে! সে ছিল অনেক বেশি উচ্চতায়, ধরাছোঁয়ার বাইরে, আমরা সবাই বেশ নীচে। আমরা তাকে ডাকতাম ‘সুপারম্যান’।
আমার মনে আছে, ড্রেসিং রুমে যখন আমি মিউজিক চালিয়ে নাচতাম-গাইতাম, সবাইকে মাতিয়ে রাখতাম, কোচ বব কিউনিস এসে বলতেন, ‘যতটা ভালো নাচো, ততটা ভালো যদি বোলিং করতে পারতে!’ আমি তখন বলতাম, ‘কোচ, আমরা তো আর রিচার্ড হ্যাডলি হতে পারব না, নাচেই ভালো হই!’
আমি তাই প্রত্যাশার চাপ খুব বেশি অনুভব করিনি যে, হ্যাডলির ধারা ধরে রাখতে হবে। নিজের কাজটা করে যেতে চেয়েছি।
নিউ জিল্যান্ডের পেসাররা কেন এত বেশি ইনজুরিতে পড়ত? নব্বইয়ের কথা যদি ধরা হয়, আপনি ছাড়াও ডিওন ন্যাশ, ক্রিস কেয়ার্নস, জিওফ অ্যালট, সাইমন ডুল, শেন ও’কনর, রবার্ট কেনেডি, ড্যারিল টাফি, শেন বন্ড… সবারই ক্যারিয়ার ছিল চোট-জর্জর!
মরিসন: আবহাওয়া একটা কারণ হতে পারে। আরেকটা বড় ব্যাপার ছিল মাঠ। আমরা খেলতাম বা ট্রেনিং করতাম বালির ভিত বা টার্ফের মাঠে। কিন্তু উপমহাদেশে, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকায় শক্ত মাঠে খেলতে হতো। শরীর হয়ত মানিয়ে নিতে পারেনি। আমরা অস্ট্রেলিয়ায় প্রচুর খেলতাম, আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছাড়াও। পার্থে, গ্যাবায়, এমনকি অ্যাডিলেডেও খুব শক্ত মাঠ থাকত।
এটাও ঠিক, আমাদের ট্রেনিং পদ্ধতি হয়ত আরেকটু ভিন্ন হতে পারত। আরেকটু স্মার্ট হতে পারতাম আমরা। অনেক ব্যাপারই ছিল।
ক্যারিয়ারের সেরা সময় কোনটিকে বলবেন? অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯৯৩ সালের সিরিজ? ৩ টেস্টে ১৭ উইকেট, অকল্যান্ডে জয়ের নায়ক..
মরিসন: অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে সব সময়ই পছন্দ করতাম। আমরা ওদের বিপক্ষে সব সময়ই তেতে থাকতাম। তবে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারতাম কমই। সেজন্যই ওদের বিপক্ষে অকল্যান্ডের জয়টা ছিল বিশেষ কিছু। ওয়েলিংটনে ৭ উইকেট নিয়েছিলাম, কিন্তু ম্যাচ ড্র। অকল্যান্ডে ৬টি নিলাম, দল জিতে সিরিজ ড্র করল। সেই শেষ বার আমরা ট্রান্স-তাসমান ট্রফি ধরে রাখতে পেরেছিলাম। এরপর অস্ট্রেলিয়া প্রতিবার রেখে দিয়েছে। দুঃখজনকভাবে, নিজেদের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমাদের শেষ টেস্ট জয়ও সেটিই।
১৯৯২ বিশ্বকাপও ছিল স্মরণীয়। মার্টিন ক্রোর নেতৃত্বে অসাধারণ সময় কেটেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তানের কাছে দুটি ম্যাচই হেরে গেলাম। ওয়ানডে হ্যাটট্রিকটাও ছিল দারুণ (১৯৯৪ সালে ভারতের বিপক্ষে), তিনটিই বোল্ড।
তবে সত্যি বলতে, হ্যাডলি, জেফ ও মার্টিন ক্রো, চ্যাটফিল্ড, তাদের সঙ্গে খেলাটাই ছিল স্বপ্নের মতো। যাদের দেখে বড় হয়েছি, তাদের সঙ্গে খেলতে পেরেছি, এটাই বড় পাওয়া।
হ্যাডলির পর নিউ জিল্যান্ডের সেরা কে? ড্যানি মরিসন, শেন বন্ড নাকি ক্রিস মার্টিন?
মরিসন: শেন বন্ড। আমাদের চেয়ে অনেক বেশি গতিময় ছিল সে, সবচেয়ে বড় কথা সেই ‘এক্স ফ্যাক্টর’ ছিল। ইনজুরি না থাকলে তো আরও অনেক অনেক উইকেট নিত। ক্যারিয়ার আরও উজ্জ্বল হতো। তারপরও হ্যাডলির পর সেরা বন্ডি।
মরিসন, মার্টিন আর কোর্টনি ওয়ালশ তিনজনের মধ্যে সেরা ব্যাটসম্যান কে?
মরিসন: আমি তো ক্রিস মার্টিনের ব্যাটিং কোচ ছিলাম! হাহাহাহাহা… বেচারা মার্টিন, খুব ধুঁকতে হয়েছে তাকে। আমি কিন্তু খারাপ ছিলাম না! অনেক দিন নাইটওয়াচম্যানের কাজ চালিয়েছি। ব্যাটিংটা আমি কিন্তু উপভোগ করতাম। আমি উইকেটে গেলেই একটা হাসাহাসি, বোলাররা উইকেট নেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছে, বাউন্সার মারছে বা নানা কিছু, এসব আমার ভালো লাগত।
এমনিতে ওয়াসিম-ওয়াকার, ডোনাল্ড, ম্যাকডারমট-ম্যাকগ্রা, অ্যামব্রোস-ওয়ালশ তো বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদেরই মাথাব্যথার কারণ ছিল। আমাদের মত ব্যাটসম্যানদের হারানোর কিছু ছিল না!
আপনার শূন্যের রেকর্ডটা (২৪ বার) তো হাতছাড়া হয়ে গেছে! সবার ওপরে মার্টিন (৩৬ বার) ও কোর্টনি ওয়ালশ (৪৩ বার)!
মরিসন: আমার কিছু দিন ছিল রেকর্ডটা, এখন তো আমি ১০ নম্বরে! অনেকেই ছাড়িয়ে গেছে আমাকে। ওরা অবশ্য খেলেছেও অনেক বেশি। তবে ব্যাটিং আমার খারাপ লাগত না।
এই আপনারই আবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে ৩ ঘণ্টা উইকেটে থেকে ম্যাচ বাঁচানোর কীর্তি আছে… শেষ উইকেটে নাথান অ্যাস্টলের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ১০৬ রানের জুটি!
মরিসন: ওই সিরিজে একটা প্রস্ততি ম্যাচে আমি খুব মেরেটেরে ৩০ রানের ইনিংস খেলেছিলাম। ‘পেন্টহাউজ উইমেন ম্যাগাজিনের’ একটি পাতা প্যাডের সামনে লাগিয়ে নিয়েছিলাম, সবাই দারুণ মজা পেয়েছিল। ডমিনিক কর্ক, অ্যান্ডি ক্যাডিক খেলেছিল। ফিল টাফনেলকে বললাম, ‘সাহস থাকলে একটা ঝুলিয়ে দাও।’ সে হাসতে হাসতে ঠিকই ঝুলিয়ে দিল, আমি ছক্কা মেরে দিলাম। ওরা অবাক যে ড্যানিও ৩০ রান করে!
পরে তো টেস্টে ওই ইনিংস। কর্ক-মুলালির অনেকগুলো বল ব্যাটেই লাগাতে পারিনি। তবে পড়ে ছিলাম উইকেটে। আরেক পাশে অ্যাস্টল ব্লক করতে করতে হুটহাট চার মেরে দিচ্ছিল। সানগ্লাস পরে ব্যাট করছিলাম আমি। মজা করেই পড়েছিলাম যে শেষ ব্যাটসম্যান মানে আমি অন্ধ ব্যাটসম্যান। কালো ওকলি সানগ্লাস।
ভাগ্যটাও ভালো ছিল আমার। আর মাইক আথারটন (ইংল্যান্ড অধিনায়ক) ফিল্ডিং একটু ছড়িয়ে রেখেছিল। ধারাভাষ্যকাররা ওকে ধুইয়ে দিয়েছিল। ওর জন্য একটু খারাপও লেগেছে। ল্যাঙ্কাশায়ারে ওর সঙ্গে খেলেছি আমি।
ওরা নতুন বল নেওয়ার পর আমার কাজটা আরেকটু সহজ হয়ে গিয়েছিল। কারণ, পুরোনো বল একটু রিভার্স করছিল। শেষ পর্যন্ত অ্যাস্টল সেঞ্চুরি করল, আমি ১৩০ বলে (১৩৩) অপরাজিত ১৪!
চা বিরতির সময় সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছিল। ব্লেয়ার পোকক (ওপেনার) বলছিল, ‘ড্যানি কতক্ষণ?’ আমি বললাম, ‘সেট হয়ে গেছি বল দেখছি কুমড়ার মত। ম্যাচ বাঁচিয়ে ফিরব।’ পোকক হাসতে হাসতে বলল, ‘ইউ অ্যারোগ্যান্ট লিটল ডগ!’ আমি তো মজা করেই বলেছিলাম, পরে যখন সত্যি ড্র হয়ে গেল, সবার খুশি দেখে কে!
‘টিপিক্যাল’ টেল এন্ডার বলতে যাদের বোঝাত, সেই সম্প্রদায় এখন বিলুপ্ত প্রায়। মনে হয় না, সেই মজাটা একটু নষ্ট হয়ে গেছে?
মরিসন: অস্ট্রেলিয়ার জ্যাকসন বার্ডকে একটু বলা যায়। পিটার সিডল ছিল, নাথান লায়নও। পরে দুজনই উন্নতি করেছে, দুজনই এখন বেশ সলিড। শেষ টিপিক্যাল টেল এন্ডার হয়ত ছিল গ্লেন ম্যাকগ্রা।
টি-টোয়েন্টির একটা ভূমিকা আছে এতে। সবার কাছ থেকেই ব্যাটিংয়ে কিছু চাওয়া হয়। একটি-দুটি চার, বা ৫-৬ রানও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। আমি বা ক্রিস (মার্টিন), কোর্টনি (ওয়ালশ), আমরা আসলে সেই সময় ব্যাটিং নিয়ে কাজ করার কথা ভাবতামই না। হ্যাঁ, দর্শকের জন্য মজাটা একটু নষ্ট হয়ে গেছে হয়ত। তবে দলগুলির জন্য ভালো হয়েছে। বিডিনিউজ
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন